আমরা মুসলিমরা যখন কারও কোনো উপকার বা সাহায্য পাই, তখন প্রায়ই বলি—“জাযাকাল্লাহু খাইরান”। এটি কেবল ভদ্রতা প্রকাশের শব্দ নয়; বরং আল্লাহর কাছে দোয়া করার এক চমৎকার উপায়।
পশ্চিমা সংস্কৃতিতে যেখানে শুধু “Thank you” প্রচলিত, ইসলামে সেখানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঙ্গে আল্লাহর কাছে প্রতিদানও প্রার্থনা করা হয়। এ কারণেই এই দোয়াটি শুধু শিষ্টাচার নয়, বরং আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যের প্রতিফলন।
“জাযাকাল্লাহু খাইরান” এর অর্থ হলো, “আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।” এখানে “জাযা” অর্থ প্রতিদান, আর “খাইরান” অর্থ কল্যাণ, উত্তম বা সর্বোত্তম ভালো।
অর্থাৎ মানুষকে কেবল দুনিয়ার জন্য ধন্যবাদ জানানো নয়, বরং আল্লাহর কাছে তার দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করা।
কোরআনে আল্লাহ বারবার বলেছেন, আসল প্রতিদান দানকারী তিনি নিজেই। যেমন: আল্লাহ বলেছেন. “যে সৎকাজ করবে, তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।” (সুরা নাজম, আয়াত: ৩১)।
তিনি আরো বলেছেন, “যারা ধৈর্য ধারণ করে, আমি তাদেরকে তাদের কাজের সর্বোত্তম প্রতিদান দান করব।” (সুরা নাহল, আয়াত: ৯৬)
ইমাম কুরতুবি এ আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন—আল্লাহর প্রতিদানই হচ্ছে প্রকৃত প্রতিদান। মানুষ যত বড় প্রতিদান দিক না কেন, আল্লাহর দেওয়া প্রতিদানই পরিপূর্ণ ও চিরস্থায়ী। (আল-জামি লি আহকামিল কুরআন, ১৭/৩৪৫, দার আল-কুতুব আল-মিসরিয়্যা, কায়রো, ১৯৬৪)
রাসুল (সা.) সাহাবিদের শিখিয়েছেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উত্তম রূপ। তিনি বলেছেন: “যে কারো প্রতি কোনো অনুগ্রহ করা হলো এবং সে বলল ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’, তবে সে কৃতজ্ঞতার সর্বোচ্চ পর্যায় পূর্ণ করল।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২০৩৫)
অন্য হাদিসে তিনি বলেন: “যে মানুষকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহকেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৯৫৪)
অতএব, “জাযাকাল্লাহু খাইরান” বলা মানে হলো—মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং একইসঙ্গে আল্লাহর কাছে তার জন্য কল্যাণের দোয়া করা।
১. শুধু ধন্যবাদ নয়, দোয়া: যেখানে “ধন্যবাদ” কেবল দুনিয়াবি সৌজন্য, সেখানে “জাযাকাল্লাহু খাইরান” মানুষকে আখিরাতের কল্যাণের দোয়াও দেয়।
২. ভালোবাসা বৃদ্ধি: এ দোয়াটি মুসলিম সমাজে আন্তরিকতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করে।
৩. অভ্যাসগত সংস্কৃতি: প্রতিদিনের জীবনে এ দোয়া প্রচলন করলে কেবল মুখের সৌজন্য নয়, বরং আল্লাহর কাছে দোয়া করার অভ্যাসও তৈরি হয়।
৪. শিক্ষা ও পরিবারে প্রয়োগ: শিক্ষক, অভিভাবক, সহকর্মী কিংবা বন্ধু—যেকোনো সম্পর্কেই এই দোয়া ব্যবহারে আন্তরিকতা বাড়ে।
“জাযাকাল্লাহু খাইরান” শুধু একটি বাক্য নয়; এটি ইসলামি সংস্কৃতির মহিমান্বিত অংশ। এতে মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একইসঙ্গে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা অনুযায়ী, এটি কৃতজ্ঞতার সর্বোচ্চ প্রকাশ। তাই আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, ছোট বড় উপকারের প্রতিদানে এ দোয়া ব্যবহার করা উচিত।