মহররমের ঘটনা বলতেই অনেকে কারবালাকে প্রধান মনে করেন। কিন্তু কারবালারও আগে ইসলামে মহররমের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। বিশেষত রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়কালের আগে কয়েকজন নবীর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা মহররম মাসে সংঘটিত হয়েছিল।
অনেক মুফাসসির বর্ণনা করেন, বেহেশত থেকে পৃথিবীতে পদার্পণের পর হজরত আদম (আ.) নিজ ভুলের অনুশোচনায় দীর্ঘদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। একটা সময় পর অবশেষে মহররমের ১০ তারিখে হজরত আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল হয় এবং আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দেন। (ইমাম গাজালি, ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন, ১/২০২; তাফসিরে কুরতুবি, সুরা বাকারা ৩৭ আয়াতের ব্যাখ্যা)
বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, মহররমের ১০ তারিখে (আশুরা দিবসে) হজরত নুহ (আ.)-এর কিশতি দীর্ঘদিন প্লাবনের পানিতে ভেসে থাকার পর অবশেষে জুদি পাহাড়ে এসে থামে। এই প্লাবনে পৃথিবীর সব প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়। শুধু নুহ (আ.)-এর কিশতিতে যে প্রাণীগুলো আশ্রয় নিয়েছিল, তারা বেঁচে যায়।
প্লাবন শেষ হলে এদিন নুহ (আ.) জুদি পাহাড়ের পাদদেশে কিশতি থেকে অবতরণ করেন। সেখান থেকে শুরু হয় মানবসভ্যতার নতুন অভ্যুদয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৮৭১৭; ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১/২৭০)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) মদিনায় হিজরতের পর দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছেন। নবীজি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো কেন? তাঁরা বললেন, এটি এক মহান দিন। এই দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং ফেরাউন ও তাঁর বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুসা (আ.) রোজা রাখতেন, তাই আমরাও রাখি।’
বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে মহররম মাসে সংঘটিত আরও বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে সূত্র বিচার করে দেখা গেছে সেসব ঘটনার অধিকাংশই দুর্বল ও ভিত্তিহীন।
নবীজি (সা.) বললেন, ‘মুসা (আ.)-কে অনুসরণের ক্ষেত্রে আমরা তাদের চেয়ে বেশি হকদার। অতঃপর তিনি নিজেও রোজা রাখলেন এবং সাহাবিদেরও নির্দেশ দিলেন’। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৩০)
বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে মহররম মাসে সংঘটিত আরও বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে সূত্র বিচার করে দেখা গেছে সেসব ঘটনার অধিকাংশই দুর্বল ও ভিত্তিহীন।