মহানবী (সা.)–র অসিয়ত নিয়ে সংশয়

মহানবীর (সা.) অন্তিম উপদেশ কী ছিল, তা নিয়ে পরবর্তীকালে বহু মতামত তৈরি হয়েছে। এমনকি বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় ভিন্ন ভিন্ন মতধারায় আলাদা হয়ে পড়েছে অগুণতি মুসলিম। অথচ পরিবারের প্রতি নবীজি (সা.) অসিয়তের বিষয়াবলি বহু হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। তিনি তাঁর পরিবার-পরিজনের জন্যে কী রেখে গেছেন, তা গোপন কিছু নয়। জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি প্রতিনিধি রেখে যাচ্ছি—এক. আল্লাহর কিতাব, যা আকাশ-পৃথিবীর মধ্যে বিস্তৃত রজ্জু, এবং দুই. আমার পরিবার, যারা হাউজে কাউসারে আসা পর্যন্ত পৃথক হবে না।’ (আল-ফাতহুর রব্বানি, খণ্ড ২২, পৃষ্ঠা ১০৪)

স্পষ্টতই নবীজি (স.) পরিবারকে ‘প্রতিনিধি’ হিসেবে রেখে যাওয়ার কথা বলেছেন, ঠিক কুরআনের মতো। এই প্রতিনিধিত্বের অর্থ কী তাদেরকে পৃথক ও বিশেষ কোনো নিদর্শন দেওয়া, নাকি শুধু তাদের সম্মান বজায় রাখার প্রেরণা? বিশিষ্ট সিরাত গবেষক ড. সালেহ আহমদ শামি বলেছেন, ‘মনে রাখতে হবে নবীজি (সা.) এসেছেন সকল মানুষকে আল্লাহর শরিয়ত পৌঁছে দিতে। সুতরাং তিনি কাউকে এমন বিশেষ কিছু দেননি, যা অন্যদের কাছে পৌঁছায়নি। (মিন মায়ীনিশ শামায়েল, অধ্যায় ২, পৃষ্ঠা ৮২)

হজরত আলীর (রা.) সহিফা

তাবেয়িদের যুগে কিছুলোকের ধারণা হয়, নবীজি (সা.) তাঁর পরিবারকে ‘বিশেষ’ কিছু দিয়ে থাকতে পারেন। বিশেষ করে আলী (রা.)–র ব্যাপারে এই ধারণা উচ্চকিত হতে থাকে। অথচ আলি (রা.) একাধিকবার বলেছেন, ‘আল্লাহর যে কিতাব পড়ি, তাছাড়া আর কোনো কিতাব আমাদের কাছে নেই। কেবল এই একটি সহিফা আছে। বর্ণনাকারী বলেন, সহিফাটি বের করে দেখা গেলো তাতে কেসাস (হত্যার প্রতিবিধান) ও উটের বয়স সংক্রান্ত কিছু আলোচনা রয়েছে। আরও রয়েছে, ‘ঈর’ থেকে ‘সাওর’ পর্যন্ত পূর্ণ মদিনা হলো সম্মানিত স্থান। কেউ যদি এখানে কোনো বিদআত কাজ করে অথবা কোনো বিদআতকে প্রশ্রয় দেয়, তবে তার ওপর আল্লাহর ফেরেশতা এবং সব মানুষের অভিশাপ। কেয়ামতের দিন তার কোনো তাওবা বা মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না। এভাবে যে ব্যক্তি সেই সম্প্রদায়কে তাদের ‘মাওলা’দের অনুমতি ছাড়া ‘মাওলা’ বানাবে, তার ওপরও আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সকল মানুষের অভিশাপ। কেয়ামত দিবসে তার কোনো তাওবা বা মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না। সব মুসলমানের নিরাপত্তা একই রকম, তাদের সর্বনিম্ন ব্যক্তিও কাউকে নিরাপত্তা দেওয়ার অধিকার রাখে। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের নিরাপত্তা নষ্ট করে, তার জন্যে আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিশাপ। কেয়ামত দিবসে তার তাওবা বা মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না।’ (বুখারি, হাদিস: ৬,৭৫৫)

আবু জুহাইফা (রা.) বলেন, ‘আমি আলী (রা.)–কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার কাছে কি এমন কোনও অহি আছে যা আল্লাহর কিতাবে নেই?’ তিনি বললেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যিনি বীজ থেকে শস্য উদ্গত করেন এবং নিজ জ্ঞানে প্রাণী সৃষ্টি করেন, আমার কাছে শুধু সেই বোধশক্তি রয়েছে, যা কুরআন বোঝার জন্যে আল্লাহ কাউকে দিয়ে থাকেন; আর এই সহিফায় যা আছে।’ আমি বললাম, ‘এই সহিফায় কী আছে?’ তিনি বললেন, ‘রক্তপণ আর বন্দিদের মুক্তি দেওয়া সম্পর্কে আলোচনা এবং কাফেরের বদলায় যে মুসলমানকে হত্যা করা যাবে না, সে কথা।’ (বুখারি, হাদিস: ৩,০৭৪)

এসব প্রশ্ন শুনলে আলী (রা.) ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতেন। আবুত তোফাইল (র.) বলেন, ‘আমি একদিন আলী (রা.) ইবনে আবু তালেবের কাছে ছিলাম । এক ব্যক্তি এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘রাসুল (সা.) আপনাকে গোপনে কী বলেছেন?” বর্ণনাকারী বলেন, আলী (রা.) রেগে গিয়ে বললেন, ‘অন্যদের কাছে গোপন কোনো কিছুই রাসুল (সা.) আমাকে বলেননি।” (মুসলিম, হাদিস: ১,৯৭৮)