ইমাম কুরতুবি (রহ.) একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এ ঘটনার মূল বর্ণনাকারী হলেন রাবি ইবনে সুবাইহ (রহ.)। তিনি ছিলেন বসরার একজন প্রসিদ্ধ হাদিস সংকলক এবং হাসান বসরি (রহ.)-এর শিষ্য।
তিনি বলেন, ‘একদিন আমরা হাসান বসরির কাছে বসা ছিলাম এমন সময় কয়েকজন মানুষ নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হলো। একজন বলল, “হুজুর, আমার জমি অনুর্বর হয়ে গেছে, কোনো ফলন হচ্ছে না। আমার জন্য দোয়া করুন।”’
হাসান বসরি (রহ.) বলেন, তুমি আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করো।
আরেকজন এসে বলল, ‘হুজুর, আমি খুবই দরিদ্র। অভাব–অনটন আমার পিছু ছাড়ছে না। আমার জন্য দোয়া করুন।’
হাসান বসরি (রহ.) তাকে বলেন, তুমি ইস্তিগফার করো।
অন্যজন এসে অনুরোধ করল, ‘আমি নিঃসন্তান। আমার জন্য দোয়া করুন, যেন আল্লাহ আমাকে সন্তান দান করেন।’
হাসান বসরি (রহ.) তাকে একই কথা বলেন, তুমিও ইস্তিগফার করো।
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো, তিনি তো অতি ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি আকাশ থেকে তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং নদীনালা প্রবাহিত করবেন।সুরা নুহ, আয়াত: ১০–১২
শেষে এক ব্যক্তি এসে অভিযোগ করলেন, ‘আমার বাগান শুকিয়ে গেছে, গাছপালায় সামান্য সজীবতা নেই। আমার জন্য দোয়া করুন।’
তাকেও হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ইস্তিগফার করো।
এভাবে হাসান বসরি (রহ.) তাদের সবাইকে একই পরামর্শ দিলেন।
রাবি ইবনে সুবাইহ (রহ.) বলেন, ‘এটা দেখে আমি বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলাম, হুজুর, লোকেরা তো নানা সমস্যার কথা বলল, আর আপনি সবার জন্য একই উত্তর দিলেন—ইস্তিগফার করো!’
হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘আমি তো নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলিনি। এটা আল্লাহর দেওয়া সমাধান। আল্লাহ তাআলা সুরা নুহ–এ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো, তিনি তো অতি ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি আকাশ থেকে তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০–১২)
‘হুজুর, আমাদের কি আল্লাহর কাছে লজ্জা পাওয়া উচিত নয়? আমরা গুনাহ করি, তারপর ইস্তিগফার করি; আবার গুনাহ করি, আবারও ইস্তিগফার করি। এভাবে চলতেই থাকে।’
তখন এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ‘হুজুর, আমাদের কি আল্লাহর কাছে লজ্জা পাওয়া উচিত নয়? আমরা গুনাহ করি, তারপর ইস্তিগফার করি; আবার গুনাহ করি, আবারও ইস্তিগফার করি। এভাবে চলতেই থাকে।’
হাসান বসরি (রহ.) উত্তর দিলেন, এটাই তো শয়তানের কৌশল। সে চায়, তোমরা ইস্তিগফার করতে লজ্জা পাও এবং ইস্তিগফার ছেড়ে দাও। তখন তোমরা গুনাহে লিপ্ত হবে আর সে জয়ী হবে। তাই কখনোই ইস্তিগফার করা ছেড়ে দেবে না।
জীবনের নানা সমস্যার সমাধান এবং বরকত ও রহমতের চাবিকাঠি হলো ইস্তিগফার। এ জন্য গুনাহ করে ফেললে এর জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিরাশ হওয়া যাবে না; বরং আল্লাহর কাছে বারবার ক্ষমা চাইতে হবে। (হাসান ইবনে আহমদ ইবনে হাসান হুমাম,আত–তাদাবি বিল ইস্তিগফার, পৃষ্ঠা: ৪৩)