দোয়া

‘রাব্বি জিদনি ইলমা’ আমরা কেন পড়ি

ইসলামে জ্ঞানার্জন একটি ইবাদত। কোরআন ও হাদিসে জ্ঞানের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং এটিকে মুমিনের জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে “রাব্বি জিদনি ইলমা” একটি কোরআনি দোয়া, যা জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা হিসেবে পড়া হয়। এই দোয়াটি সুরা তা-হা (২০:১১৪)-এ বর্ণিত হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) এটি পড়তে উৎসাহিত করেছেন।

“রাব্বি জিদনি ইলমা”-এর অর্থ

উচ্চারণ: রব্বি জিদনি ইলমা।
অর্থ: হে আমার প্রতিপালক, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো।

এই দোয়াটি সুরা ত্ব-হা (আয়াত: ১১৪)-এর একটি অংশ। পূর্ণ আয়াতটি হলো, “মহান ও সত্য বাদশা হলেন আল্লাহ। আর তুমি কোরআন তাড়াতাড়ি পড়তে তাড়াহুড়ো করো না, যতক্ষণ না এর ওহি তোমার কাছে পূর্ণ হয়। আর বলো, হে আমার প্রতিপালক, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো।”

এই দোয়াটি রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছিল, যাতে তিনি কোরআনের ওহি পাওয়ার সময় ধৈর্য ধরেন এবং জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য দোয়া করেন। এটি মুমিনদের জন্যও একটি শিক্ষা, যাতে তারা জ্ঞানার্জনের জন্য আল্লাহর কাছে সর্বদা প্রার্থনা করে। (তাফসির ইবনে কাসির, ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা: ৫/৩২০, দারুল মা’রিফা, ২০০৮)

ফজিলত

“রাব্বি জিদনি ইলমা” দোয়াটি জ্ঞানার্জনের জন্য একটি কোরআনি প্রার্থনা, যার ফজিলত অপরিসীম। হাদিসে জ্ঞানের গুরুত্ব ও এই দোয়ার প্রভাব সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের পথে চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৯)

এই দোয়ার ফজিলতের মধ্যে রয়েছে:

  • জ্ঞান বৃদ্ধি: এটি ইসলামী ও দুনিয়াবি জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা।

  • আধ্যাত্মিক উন্নতি: এই দোয়া মুমিনকে আল্লাহর নৈকট্যের দিকে নিয়ে যায়।

  • মানসিক শান্তি: জ্ঞানের প্রতি আকাঙ্ক্ষা ও আল্লাহর উপর ভরসা মনকে শান্তি প্রদান করে।

  • জান্নাতের পথ: জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশের পথ সুগম হয়।

(সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৬৪৬)

কখন ও কীভাবে পড়তে হবে?

এই দোয়াটি যেকোনো সময় পড়া যায়, তবে নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে এটি বিশেষভাবে উপকারী:

  • পড়াশোনার শুরুতে: পড়াশোনা বা জ্ঞানার্জনের কাজ শুরুর আগে এই দোয়া পড়া।

  • নামাজের পর: ফরজ বা নফল নামাজের পর দোয়ার সময় এটি পড়া।

  • কোরআন তিলাওয়াতের সময়: কোরআন পড়ার আগে বা পরে এই দোয়া পড়া, যাতে কোরআনের জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।

  • পরীক্ষা বা চ্যালেঞ্জের সময়: পরীক্ষা, ইন্টারভিউ বা কঠিন বিষয় শেখার সময় এই দোয়া পড়া।

পড়ার নিয়ম:

  • দোয়াটি আন্তরিকতার সঙ্গে পড়া।

  • তিনবার বা সাতবার পড়া উত্তম।

  • নিজের ভাষায়ও আল্লাহর কাছে জ্ঞান ও বুদ্ধি কামনা করা যায়।

মনে রাখতে হবে

দোয়া পড়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ ও আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উচিত। জ্ঞান শুধু অর্জন নয়, তা জীবনে প্রয়োগ করা। আল্লাহ বলেছেন, “যারা জ্ঞান দ্বারা কাজ করে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।” (সুরা মুজাদালা, আয়াত: ১১)