ফজরের নামাজ ইসলামের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রথম। এটি দিনের শুরুতে আল্লাহর সঙ্গে মুমিনের সম্পর্ককে দৃঢ় করে। ফজরের নামাজের সময় নির্ধারণ কোরআন, হাদিস এবং ইসলামি শরিয়াহ দ্বারা সুনির্দিষ্ট। তবুও এই নামাজের সময়সূচি নিয়ে প্রায়ই আমাদের বিভ্রান্তি দেখা দেয়। আমরা বিস্তারিত আলোচনা করছি।
নামাজের সময় সূর্যের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, যা ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। ফজরের শুরু ও শেষ সময় হলো:
জিবরাঈল (আ.) নবীজিকে ফজরের সময় শিখিয়েছেন। তিনি দুই দিন নবীজিকে নামাজের সময় শিখিয়েছিলেন। প্রথম দিন তিনি ফজরের নামাজ সুবহে সাদিকের শুরুতে পড়িয়েছেন।
শুরুর সময়: ফজরের নামাজের সময় শুরু হয় সুবহে সাদিক থেকে, অর্থাৎ ভোরের প্রথম আলো যখন পূর্ব দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে। এটি সাধারণত সূর্যোদয়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে শুরু হয়। সুবহে সাদিক হলো সেই সময় যখন আকাশে একটি সাদা আলোর রেখা দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬১২)
এই হাদিসে জিবরাঈল (আ.) নবীজিকে ফজরের সময় শিখিয়েছেন। তিনি দুই দিন নবীজিকে নামাজের সময় শিখিয়েছিলেন। প্রথম দিন তিনি ফজরের নামাজ সুবহে সাদিকের শুরুতে পড়িয়েছেন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৯৩)
শেষ সময়: ফজরের নামাজের সময় শেষ হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। সূর্যোদয়ের পর ফজরের নামাজ আদায় করা জায়েজ নয়। যদি কেউ সময়ের মধ্যে নামাজ শুরু করে এবং সূর্যোদয়ের আগে শেষ করে, তবেই তা গ্রহণযোগ্য। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৯)
এই হাদিসে ফজরের সময়ের সীমা স্পষ্ট করা হয়েছে।
মাকরুহ সময়: ফজরের নামাজ সূর্যোদয়ের কাছাকাছি সময়ে পড়া মাকরুহ। নবীজি (সা.) সময়ের শুরুতে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করেছেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ১৭০)
ফজরের নামাজের ফজিলত অপরিসীম। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘নামাজ কায়েম করো সূর্যাস্ত থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং ফজরের কুরআন পাঠের সময়, কেননা ফজরের কুরআন পাঠ সাক্ষী-প্রাপ্ত।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭৮)
হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৫৭)
আরেকটি হাদিসে আছে, ‘যে ফজর ও ইশার নামাজ পড়ে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৫)
যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়ে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৫৭
ফজরের নামাজ সূর্যোদয়ের আগে পড়তে হবে। সূর্যোদয়ের পর নামাজ কাজা হয়ে যায়। ফজরের ২ রাকাত সুন্নত অত্যন্ত ফজিলত-পূর্ণ। নবীজি (সা.) কখনো এই সুন্নত ত্যাগ করেননি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭২৬)
ফজরের নামাজ মানসিক শান্তি, শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা শেখায়। যারা ফজরের নামাজ নিয়মিত পড়েন, তারা দিনের শুরুতে একটি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন।