প্রযুক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এই পরিবর্তনের একটি বড় অংশ। বিশ্বাস ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ, দেখিয়ে দিচ্ছে যে, এআই কীভাবে পবিত্র রমজান মাস পালনের ধরনকে বদলে দিচ্ছে। ইতিহাস বলছে, প্রতিটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তন রমজানের ওপর ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলেছে। একসময় রেডিও ধর্মীয় বাণী ঘরে পৌঁছে দিত, টেলিভিশন নিয়ে আসে বিশেষ রমজান প্রোগ্রাম, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্বব্যাপী রোজাদারদের সংযুক্ত করেছে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে এই বিবর্তনের পরবর্তী ধাপ।
বদলে দেওয়ার আশঙ্কা কেন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন ভার্সনগুলো ব্যাপকভাবে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মতৎপরতা বিশ্লেষণ করে, আমাদের ভাষার প্রতিটি টোন, সামাজিক মাধ্যমের ক্লিক, এমনকি ভিউ বা পরিদর্শন ব্যাপকভাবে অ্যালগরিদমে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে এআই-চালিত বিশ্লেষণ ব্যবহার করে হাইপার-পারসোনালাইজড বিজ্ঞাপন তৈরি করা, ভোক্তার আচরণ পূর্বানুমান করা এবং লক্ষ্যভিত্তিক প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে রমজানকে বাণিজ্যিকীকরণের ঝুঁকি রয়েছে।
যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এআই
এআই-এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি কাজ করছে বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে। পবিত্র রমজান মাসে ব্র্যান্ড ও ভোক্তাদের সম্পৃক্ততার ধরন জেনে ব্যক্তিগত কেনাকাটায় এমনসব কনটেন্ট তৈরি করে দিচ্ছে এআই, যা আগে এতটা সূক্ষ্মভাবে সম্ভব ছিল না। এআই-চালিত কনটেন্ট এখন বিভিন্ন শিল্প-উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল রমজান’ বাস্তবতা নিয়ে এসেছে।
এ ছাড়া এআই ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ইফতার নিমন্ত্রণপত্র তৈরি করা, আবার দান-সংশ্লিষ্ট তথ্য বিশ্লেষণ করে মানুষের জাকাত দেওয়ার সর্বোত্তম উপায় সুপারিশ করছে এআই। যেহেতু আমরা প্রযুক্তিকে অতিমাত্রায় বিশ্বাস করছি, ফলে তার দেওয়া সুপারিশ ইসলামিক পণ্ডিতদের সুপারিশের তুলনায় বেশি মানবিক মনে হতে পারে।
এফএমসিজি ও সৌন্দর্য খাতে পরিবর্তন
দ্রুত বিক্রীত ভোগ্যপণ্য শিল্প বিশ্বব্যাপী এআই গ্রহণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ব্যবহার করে বাজার সম্প্রসারণ, প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডিং ও বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। এআই-চালিত অনুভূতি বিশ্লেষণ ও পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলো এমন গল্প তৈরি করতে পারে, যা ভোক্তাদের পূর্বেকার আচরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে রমজানের প্রচারণায় সাংস্কৃতিক অভিনবত্বের জন্য আমরা আরও বেশি করে এআই নির্ভর হয়ে পড়তে পারি।
২০২৫ সালে এআই-নির্ভর অতি-ব্যক্তিগতকৃত বিপণন আরও বেশি প্রচলিত হবে। রমজানে ব্র্যান্ড ও ভোক্তাদের সংযোগ তৈরির জন্য দানশীলতা, সহনশীলতা ও পরিবারের মূল্যবোধ এনে ‘ইমোশনাল মার্কেটিং’ কৌশল স্থান পাবে; যাতে ধর্মীয় নির্দেশনায় যেই আধ্যাত্মিকতার কথা বলা হয়, তা বাদ দিয়ে বরং মানুষের নিজস্ব অভ্যাসগত মূল্যবোধকে বেশি অনুসরণ করার সম্ভাবনা থাকবে।
কী করা উচিত
ব্র্যান্ড ও ভোক্তা উভয়কে এটির প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। ব্র্যান্ডগুলোকে অবশ্যই চিন্তাশীল, শ্রদ্ধাশীল ও ব্যক্তিগতকৃত কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যাতে এআই ধর্মীয় ঐতিহ্যকে ব্যাহত না করে বরং সমৃদ্ধ করে। ব্যবসাগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে, এআই-চালিত বিপণন ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। অন্যদিকে, ভোক্তাদেরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা রমজানে কতটা প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।
সূত্র: ক্যাম্পেইন এশিয়া