ভ্রমণ বা যাত্রা মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা, হজ, ওমরাহ ছাড়াও নানা উদ্দেশ্যে মানুষকে দূরে বা কাছে যাতায়াত করতে হয়, যাত্রী হতে হয়। ইসলামে যাত্রা শুধু দেহের গন্তব্য নয়, বরং আত্মার পরীক্ষাও।
তাই নবীজি (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন—যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেন আল্লাহর স্মরণে থাকা যায়, তাঁর কাছে নিরাপত্তা ও বরকত প্রার্থনা করা যায়।
ইসলামি দৃষ্টিতে ভ্রমণ শুরু করার আগে কিছু আদব ও নিয়ম মেনে চলা সুন্নাহ:
ভ্রমণের উদ্দেশ্য হালাল ও কল্যাণকর হতে হবে।
পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে যাত্রা শুরু করা।
নামাজের সময়সূচি মাথায় রেখে যাত্রাপথ পরিকল্পনা করা।
ঘর থেকে বের হওয়ার আগে “বিসমিল্লাহি তাওাক্কালতু ‘আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলা সুন্নাহ।
যখন তিনজন একসাথে সফর করবে, তখন একজনকে নেতা নিযুক্ত কর।সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৬০৮
রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন কেউ তার ঘর থেকে বের হয় এবং বলে ‘বিসমিল্লাহ, তাওাক্কালতু ‘আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’—তখন তাকে বলা হয়: তুমি হিদায়াতপ্রাপ্ত, নিরাপদ ও সুরক্ষিত হলে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৯৫)
রাসুল (সা.) যখন বাহনে (উট, ঘোড়া ইত্যাদি) চড়তেন, তখন নিম্নলিখিত দোয়া পাঠ করতেন—
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাযি সাখখারা লানা হাযা, ও মা কুন্না লাহু মুকরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালিবুন।
অর্থ: “পবিত্র সেই সত্তা যিনি আমাদের জন্য এ বাহনকে বশীভূত করেছেন, অথচ আমরা কখনোই একে বশ করতে পারতাম না। আর নিশ্চয়ই আমরা আমাদের রবেরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।” (সুরা যুখরুফ, আয়াত: ১৩–১৪)
দোয়া শেষে রাসুল (সা.) তিনবার “আলহামদুলিল্লাহ” এবং তিনবার “আল্লাহু আকবার” বলতেন, তারপর দোয়া করতেন. “হে আল্লাহ, আমরা তোমার কাছেই আমাদের এই সফরকে কল্যাণময় করবার প্রার্থনা করি এবং পাপ থেকে দূরে রাখার আবেদন করি।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪২)
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সফারিনা হাজা আল-বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়া মিনাল ‘আমালি মা তারদা, আল্লাহুম্মা হাও্য়্যিন ‘আলাইনা সফারানা হাজা, ওয়াৎয়ি আননা বু‘দাহু, আল্লাহুম্মা আন্তাস সাহিবু ফিস সফার, ওয়াল খলিফাতু ফিল আহল।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমরা আমাদের এই সফরে তোমার নিকট নেকি, তাকওয়া ও তোমার সন্তুষ্টিমূলক কাজের প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এই সফরকে সহজ করে দাও এবং দূরত্বকে সংক্ষিপ্ত করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি সফরের সঙ্গী এবং ঘরে আমাদের পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪২)
ভ্রমণ বা যাত্রা মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা, হজ, ওমরাহ ছাড়াও নানা উদ্দেশ্যে মানুষকে দূরে বা কাছে যাতায়াত করতে হয়।
ইসলাম সফরকেও একটি ইবাদতের মতো গুরুত্ব দিয়েছে। রাসুল (সা.) নিজে সফরের সময় কিছু আচরণ কঠোরভাবে মেনে চলতেন।
সফরে নামাজ কসর করা (চার রাকাতের ফরজ নামাজ দুই রাকাতে আদায় করা) (সুরা নিসা, আয়াত: ১০১)
অপ্রয়োজনীয় কথা ও হাসি-তামাশা থেকে বিরত থাকা।
নামাজ জামাতে আদায় করা সম্ভব হলে জামাতে পড়া।
সহযাত্রীদের প্রতি সদাচার ও সাহায্য করা।
বিপদে পড়লে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” পাঠ করা।
রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন তিনজন একসাথে সফর করবে, তখন একজনকে নেতা নিযুক্ত কর।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৬০৮)
বাড়ি প্রবেশের আগে দরজায় সালাম দেওয়া, পরিবারের খোঁজ নেওয়া ও প্রথমেই নামাজ আদায় করা—এসবও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ।
বাড়ি ফিরে রাসুল (সা.) এই দোয়া পাঠ করতেন—
উচ্চারণ: আয়িবুন, তা’ইবুনন, ‘আবিদুন, লিরাব্বিনা হামিদুন।
অর্থ: “আমরা ফিরে এলাম, তওবাকারী, ইবাদতকারী ও আমাদের রবের প্রশংসাকারী হয়ে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪৪)
বাড়ি প্রবেশের আগে দরজায় সালাম দেওয়া, পরিবারের খোঁজ নেওয়া ও প্রথমেই নামাজ আদায় করা—এসবও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ।
রাসুল (সা.) আল্লাহর নিকট ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ দোয়া করতেন। তিনি বলতেন: “হে আল্লাহ, তাদের সফরে সঙ্গী হও এবং পরিবারের রক্ষণ কর।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪২)
এই দোয়া আজও মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। সফরে বের হওয়ার আগে পরিবারের কেউ এই দোয়া পাঠ করতে পারেন, “আস্তাওদিউল্লাহা দীনাকা ও আমানাতাকা ও খাওয়াতিমা ‘আমালিকা।”
অর্থ: “আমি আল্লাহর কাছে তোমার দ্বীন, তোমার আমানত এবং তোমার কাজের পরিণাম সমর্পণ করছি।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৪৬)
ইসলাম ভ্রমণকে শুধু গন্তব্য নয়, বরং ইবাদতের সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করেছে। যাত্রার আগে ও পরে আল্লাহর দোয়া করা, পরিবারকে সালাম জানানো, নামাজের যত্ন নেওয়া—এসব ছোট ছোট সুন্নাহর মধ্যে রয়েছে গভীর নিরাপত্তা ও বরকত।
একজন মুসলিমের সফর হবে আল্লাহর স্মরণে পূর্ণ—যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে থাকবে দোয়া, কৃতজ্ঞতা ও ভরসা।