শিশুর অনলাইন সুরক্ষায় সচেতন হতে হবে
‘শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সংলাপের আয়োজন করে ইউনিসেফ। সহযোগিতায় গ্রামীণফোন।
বেশির ভাগ অভিভাবক জানেন না অনলাইনে তাঁর সন্তান কার সঙ্গে মেশে, কী ধরনের তথ্য ভাগাভাগি করে। অভিভাবকদের অসচেতনতায় শিশুরা খুব সহজে অনলাইনে বুলিং, যৌন হয়রানি ও অপরাধের শিকার হচ্ছে। করোনাকালে এ ঝুঁকি আরও বেড়েছে। এ থেকে রক্ষায় অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টিতে পাঠ্যক্রমে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
গতকাল রোববার ‘শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক ইউনিসেফ সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় আয়োজিত সংলাপে সম্প্রচার সহযোগী ছিল প্রথম আলো।
সংলাপে সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। তিনি বলেন, শিশুদের যৌন নির্যাতন করার জন্য অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারকে ফেসবুক, ইউটিউবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এগিয়ে আসতে হবে। অভিভাবকদেরও সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের দিকে সচেতন হতে হবে এবং সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।
করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা ও নিরাপদ ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের মাধ্যমে বিনা মূল্যে শিশুদের জন্য ডিভাইসে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা যায়। বেশির ভাগ অভিভাবক তা জানেন না।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউসি) মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার ব্যাপারটি করোনা মহামারির পরও থেকে যাবে। প্রকল্পভিত্তিক কাজে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার সময় এসেছে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জাহেরীন। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরা যেন এই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায় এবং সব শিশু সুরক্ষার মধ্যে সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে, সেটা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
সংলাপে ইউনিসেফ বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন ও টেলিনর গ্রুপের সহায়তায় পরিচালিত একটি অনলাইন জরিপের তথ্য তুলে ধরেন গ্রামীণফোনের সাসটেইনেবিলিটি প্রজেক্ট লিড এম হাফিজুর রহমান খান। তিনি জানান, এক-তৃতীয়াংশ অভিভাবক তাঁদের শিশুদের অনলাইন বন্ধুদের ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গত জানুয়ারি মাসে ‘শিশুর অনলাইন নিরাপত্তায় অভিভাবকের ভূমিকা’ শিরোনামে ওই অনলাইন জরিপে অংশ নেন ২ হাজার ৩৮১ জন।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের এ-দেশীয় প্রতিনিধি টোমু হোজুমি বলেন, সাইবার বুলিং, হয়রানি শিশুদের মনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। ইন্টারনেট বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এসব ঝুঁকিও বাড়ছে।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, গ্রামীণফোন ও ইউনিসেফ ২০১৮ সাল থেকে ১০ লাখ শিশুর কাছে ইন্টারনেট সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতামূলক তথ্য পৌঁছে দিয়েছে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেনবাংলাদেশ টেলিভিশনের উপমহাপরিচালক সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস বিভাগ) মাহ্ফুজা লিজা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮-এর সমন্বয়ক চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হাসিনা মোস্তাফিজ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ফিরোজ চৌধুরী।
সংলাপে একমাত্র যুব প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিল বরিশাল সদর উপজেলার বাসিন্দা কিশোরী বীথি আক্তার। অনুষ্ঠানে ‘ঠিক লাইনে অনলাইনে’ শিরোনামে মীনা কার্টুনের মাধ্যমে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের সচেতনতামূলক একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।
আরও পড়ুন
-
আগামীকালও ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়
-
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ মে পর্যন্ত বন্ধ
-
সামান্য রদবদলে নতুন টেলিযোগাযোগ আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় পালা বন্ধ হচ্ছে, শাখা ক্যাম্পাস হবে আলাদা প্রতিষ্ঠান
-
ট্রাম্প তবুও বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে, সিএনএনের জরিপ