তৃতীয় নয়ন

টিকি-টাকার ওষুধ আবিষ্কার!

সাবেক ফুটবল তারকা ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু লিখছেন প্রথম আলোয়
সাবেক ফুটবল তারকা ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু লিখছেন প্রথম আলোয়

ঘোর থেকে বেরোতে পারছি না কিছুতেই৷ স্পেন কী করে হল্যান্ডের কাছে ৫ গোল খেল! গোল তো আসলে সাত-আটটি হতে পারত৷ কিংবা তার চেয়েও বেশি৷ শেষ দিকে স্পেনকে এমন অসহায় লাগল, যা কিনা দলটার সঙ্গে একদমই যায় না৷ এই স্পেন অচেনা স্পেন৷
কৃতিত্বটা অবশ্যই হল্যান্ডের৷ তারা স্পেনকে নিয়ে যে অনেক কাটাছেঁড়া করেছে, এই ম্যাচ তারই প্রমাণ৷ হ্যাঁ, টিকি-টাকা দিয়ে শুরু করেছিল স্পেন৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে স্পেনের কারকুরি থেমে গেছে৷ আসলে থামিয়ে দিয়েছে হল্যান্ড৷ পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়ে তারা নেমেছে৷ স্পেনের আক্রমণ একটা জায়গা পর্যন্ত সুন্দরভাবেই সংগঠিত হচ্ছিল৷ কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে এসে আর জায়গা বের করতে পারল না৷ জায়গা তাদের দেওয়া হয়নি, যেটা হল্যান্ডের সবচেয়ে বড় সাফল্য৷
প্রথমার্ধের অর্ধেক খেলা দেখে বোঝা যায়নি, দ্বিতীয়ার্ধ কত বড় চমক নিয়ে অপেক্ষা করছে! হল্যান্ড এমন ফুটবল খেলল যে স্পেন জবাব দিতে পারেনি৷ বয়সের ব্যাপারটাকে এখানে আমি বড় করে দেখব৷ প্রথম আলোর বিশ্বকাপ বিশেষ সংখ্যায় বলেছিলাম, বয়সী খেলোয়াড়দের জন্য ভুগতে পারে স্পেন৷ কার্যত তা-ই হলো প্রথম ম্যাচে৷ আপনি বলতে পারেন, রোবেনের বয়সও তো ৩০৷ রামোসের ২৮৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো, রোবেনের গতির সঙ্গে পেরে ওঠেনি রামোস, যেটা দলকে ফেলে দিয়েছে গর্তে৷
স্পেনের খেলোয়াড়েরা অভিজ্ঞ, নিজেদের পজিশনে তারা একেকজন বিশ্বসেরা৷ কিন্তু সেটা ৯০ মিনিট পর্যন্তই সমানতালে খেলতে হবে৷ ইনিয়েস্তাকে দেখুন, প্রথমার্ধে বেশ ভালো খেলল৷ সেই ইনিয়েস্তা দ্বিতীয়ার্ধে যেন নিখোঁজ৷ এভাবে গোটা দলটাই হারিয়ে গেল দ্বিতীয়ার্ধে৷ সেই সুযোগই নিয়েছে হল্যান্ড৷
এত দ্রুত লম্বা বল বাড়িয়ে এই কাজ করল চতুর লুই ফন গালের ছেলেরা, স্পেনের ডিফেন্ডারা কোথায়! গোটা রক্ষণসহ ওরা ওপরে উঠে গিয়েছিল গোল পেতে, কিন্তু সাপের ফণা তোলা হল্যান্ডের লম্বা সার্ভিসলোর জন্য প্রস্তুত ছিল না রামোসরা৷ তারই ফল পার্সিরা ছত্রখান করে দিল স্পেনকে, যেটা অবিশ্বাস্য৷
পার্সির সমতাসূচক গোলটা এক কথায় অনবদ্য৷ প্রায় মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসার বল দুরন্ত হেডে জালে পাঠাল, বিশ্বকাপের সেরা গোলের তালিকায় জায়গা পাবে অবশ্যই৷ ঠিক যেন কবিতা৷ রোবেনও দারুণ গোল দুটি গোল করল, যা অনেক দিন মনে থাকবে৷ এই ম্যাচের সৌন্দর্যও ওই গোলগুলো৷
বেচারা ক্যাসিয়াসের জন্য মায়া হচ্ছিল, এত নড়বড়ে তাকে কমই দেখেছি৷ আসলে লা লিগায় মরিনহো বসিয়ে রেখেছিল ক্যাসিয়াসকে, সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লেগেছে৷ যদিও এই ঝড়ের মধ্যেও শেষ দিকে গোটা দুয়েক গোল বাঁচিয়েছে, তখন মনে হচ্ছিল সেরা সময়ের ক্যাসিয়াসই৷ সেটাকে বিচ্ছিন্নই লেগেছে, ক্যাসিয়াসের মতো গোলরক্ষককে এভাবে গোল হজম করতে দেখব ভাবিনি৷
যেমনটা ভাবিনি স্পেনের রক্ষণ সংগঠন এদিন এমন ছন্নছাড়া হয়ে পড়বে৷ আশা করছি, পরের ম্যাচে স্পেন এই লজ্জার পরাজয় সামলে উঠে দাঁড়াবে৷ টিকি-টাকার ফুটবলই ওরা খেলবে বলছে৷ কিন্তু গত বিশ্বকাপে যেটা তারা সহজে খেলতে পেরেছে, এবার তা পারবে না৷ কারণ, অন্যরা টিকি-টাকার ওষুধ বের করে ফেলেছে৷ হল্যান্ডকে দেখে অন্যরাও পরের ম্যাচগুলোকে স্পেনকে আটকানোর সর্বোচ্চ সূত্রগুলো প্রয়োগ করবে, এটা বলতেই পারি৷
দেল বস্ক নিশ্চয়ই তাঁর ম্যাচ-পরিকল্পনায় নতুন কিছু বের করবেন, যেটা প্রতিপক্ষ ধরতে পারবে না৷ স্পেন কোচের হয়তো এতক্ষণে জানা হয়ে গেছে, তাঁর ল্যাপটপে নতুন কিছু থাকা চাই৷ হয়তো সেটা আমরা চিলির বিপক্ষে স্পেনের পরের ম্যাচে দেখব৷ যে চিলি তাদের গতি দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে বিশ্বকাপে৷