ভাইয়ের জন্য ভাই

মুক্তিযোদ্ধায় দুই নাইজেরিয়ান সহোদর— এলিটা বেঞ্জামিন ও এলিটা কিংসলে প্রথম আলো
মুক্তিযোদ্ধায় দুই নাইজেরিয়ান সহোদর— এলিটা বেঞ্জামিন ও এলিটা কিংসলে  প্রথম আলো

ভাইয়ের জন্য ভাইয়ের জীবন বিসর্জন দেওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। ভাইয়ের দুঃখে ভাইয়ের মন কাঁদে। ভাইকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে ভাইয়ের আত্মত্যাগের দৃষ্টান্তও ভূরিভূরি। শচীন টেন্ডুলকারের ক্রিকেটজীবন সোনায় মুড়িয়ে দিতে বড় ভাই অজিত টেন্ডুলকার কী না করেছেন তাঁর জীবনে!
এলিটা কিংসলেকে অত বড় আত্মত্যাগ করতে হয়নি। শুধু ছোট ভাইকে ঢাকায় এনে একটা দলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। দলটার নাম মুক্তিযোদ্ধা। আর তাঁরা নাইজেরিয়ান ফুটবলার। ছোট ভাই এলিটা বেঞ্জামিন জুনিয়র খেলেন রক্ষণে, কিংসলে স্ট্রাইকার। দুই ভাইয়ের গল্পটা জানতেই কাল বিকেলে মুক্তিযোদ্ধার অনুশীলনে যাওয়া। জানা গেল ভাই-অন্তঃপ্রাণ ভাইয়ের অজানা কথা।
সেটি বলার আগে জানানো যাক, এলিটারা চার ভাই, তিন বোন। বড় দুই ভাই এলিটা পলিনস ও এলিটা এলিয়ট নাইজেরিয়ায় পেশাদার ফুটবল খেলেন। তাঁরা কেউ নাইজেরিয়ার বাইরে খেলতে যাননি। ছোট দুজনই এলেন প্রথম বাংলাদেশে। তাঁদের বাবাও একসময় ফুটবল খেলতেন, তবে পেশাদার নয়।
১২ বছর আগে পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন বাবা বেঞ্জামিন। তাঁর সাত সন্তানের মধ্যে সবার ছোট হওয়ায় পারিবারিক নাম এলিটার সঙ্গে বাবার নাম বেঞ্জামিন জুড়ে দেওয়া। তবে জুনিয়র নামেই নিজেকে বেশি পরিচিত করতে চান ছোটজন।
বড়জন কিংসলের প্রথম ঢাকা আসা ২০১১ সালে, প্রথম দল আরামবাগ। গত বছর ছিলেন বিজেএমসি, এবার মুক্তিযোদ্ধায়। ছোট ভাই বেঞ্জামিন জুনিয়রকে গত বছরই ঢাকায় আনেন তাঁর চেয়ে চার বছরের বড় কিংসলে। ভাইকে দেন মুক্তিযোদ্ধায়। এবার ভাইয়ের সঙ্গে একই ক্লাবে খেলার ইচ্ছে পূরণ করেছেন কিংসলে। আবাহনীসহ আরও কয়েকটি বড় দলের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে শুধু ভাইয়ের জন্যই এলেন মুক্তিযোদ্ধায়।
দুই ভাই থাকেন উত্তরায় একই ফ্ল্যাটে। সময় কাটানো, খাওয়া, ঘুমও একসঙ্গে। যদিও দুই ভাই থাকেন দুই কক্ষে। বাসায় নিজেরাই রান্না করেন, নাইজেরিয়ান খাবারই বেশি। রান্নার দায়িত্বটা ছোট ভাইয়ের কাঁধে। ভালো রান্নার প্রশংসা, সঙ্গে ফুটবলার হিসেবে ছোট ভাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কিংসলে, ‘সে খুবই ভালো ডিফেন্ডার।’ ছোট ভাইকে বাংলাদেশে আনার কারণটাও বললেন, ‘আমি ভেবেছি ও এ দেশে খুবই ভালো করবে। তাই নিয়ে এলাম।’
দুই ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল, দুজনই অবসরে ল্যাপটপ নিয়ে থাকেন। গান শোনেন, ফুটবল ম্যাচ, সিনেমা দেখেন। কেন দুই ভাইয়ের একসঙ্গে এক দলে খেলার ইচ্ছে জাগল? কিংসলের উত্তর, ‘ও রক্ষণে থাকলে আমি জানি দল গোল কম খাবে। ও ডিফেন্ডার হিসেবে খুবই ভালো। তাই আমি চেয়েছি ওকে নিয়ে একই দলে খেলতে।’
এই স্বপ্নটা ছোট ভাই বেঞ্জামিন জুনিয়রও দেখতেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে একই ক্লাবে খেলব সব সময়ই এটা ভাবতাম আমি। একসঙ্গে খেললে অনেক সুবিধা। কিংসলে ভালো স্ট্রাইকার। একসঙ্গে অনুশীলন করি, কখনো এই দূরদেশে একা অনুভব করি না।’
দুই ভাইয়ের মধ্যে অমিলও আছে। দুজন দুই রকম। মুক্তিযোদ্ধার কোচ শফিকুল ইসলামের চোখে, ‘কিংসলে হয়তো বিরিয়ানি খেতে চাইল, জুনিয়র চাইল ভাত। ছোটজন একটু বেশি পরিশ্রমী, কিংসলে অতটা নয়।’
ভাই বলেই দুজনের এক রকম হতে হবে, তেমন তো কথা নেই!