৭৫ বছর বয়সেও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়!

রানী হামিদের মুখে বিজয়ীর হাসি। সাত বছর পর আবারও জাতীয় নারী দাবার চ্যাম্পিয়ন হলেন বাংলাদেশের নারী দাবার ‘রানি’। ছবি: প্রথম আলো
রানী হামিদের মুখে বিজয়ীর হাসি। সাত বছর পর আবারও জাতীয় নারী দাবার চ্যাম্পিয়ন হলেন বাংলাদেশের নারী দাবার ‘রানি’। ছবি: প্রথম আলো
>

২০১১ সালের পর আবারও জাতীয় নারী দাবায় চ্যাম্পিয়ন আন্তর্জাতিক মাস্টার রানী হামিদ। ৩৮ আসরে ১৯ বারের মতো জিতলেন শিরোপা। কে বলে তাঁর বয়স ৭৫ হয়ে গেছে। এই বয়সেও বাংলাদেশের দাবার ‘রানি’ তিনিই।

সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী নাজরানা খান ততক্ষণে হেরে গেছেন জান্নাতুল ফেরদৌসের কাছে। নিজে হারলেও তাই চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত রানী হামিদের। তবুও দাবা বোর্ডে অখণ্ড মনোযোগ। সাত বছর পর জাতীয় নারী দাবার শিরোপা তো শেষ রাউন্ড জিতেই উদযাপন করা উচিত!

বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিখুঁত রণকৌশল নিয়ে এগিয়ে চলাই রানী হামিদকে কিংবদন্তি করে তুলেছে। ৭৫ বছরেও দাবা বোর্ডে বসেন ‘রানি’ হতেই। আর তাই দেশের ইতিহাসে জাতীয় নারী দাবার ৩৮ আসরের অর্ধেক শিরোপাই তাঁর ঘরে। হ্যাঁ, এবার নিয়ে নারী দাবায় ১৯ বারের মতো দেশের সেরা হলেন রানী হামিদ। নারী-পুরুষ মিলিয়ে দেশজ দাবার ইতিহাসে যেটি সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে ১১ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের অবস্থানটি গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের। গণ্ডিটা ছোট করে শুধু নারীদের মধ্যে হিসাব করলে রানী হামিদের পর সবচেয়ে বেশি জাতীয় শিরোপা সৈয়দা শাবানা পারভীনের; মাত্র ৫ বার। রানী হামিদ তাই এ দেশের নারী দাবার প্রতীক হয়ে উঠবেন তাতে অবাক হওয়ার কী আছে?

গতকাল শেষ হওয়া ৩৮ তম আসরের রানারআপ নাজরানা খানের কণ্ঠেও ঝরল রানী হামিদকে নিয়ে মুগ্ধতা, ‘রানী আপা অন্য সবার থেকে আলাদা, দেখুন এই ৭৫ বছর বয়সেও কীভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাচ্ছেন। অনেকে হয়তো বলবে বয়স কোনো বিষয় না। কিন্তু সেটাকে একেবারে বাদও তো দিতে পারবেন না। আত্মনিবেদন না থাকলে কিন্তু সেটা হয় না।’

রানী হামিদ নিজে বয়সটাকে দেখেন অন্যভাবে, ‘একটা বিদেশি পত্রিকায় কিছুদিন আগে দেখলাম একজন ৭৬ বছর বয়সেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ভাবলাম, ৭৭ বছরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেষ্টা করে দেখতে হবে আমাকে (হাসি)।’

এই বয়সে এসেও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা এতটাই সরলভাবে দেখেন রানী হামিদ। শেষ ম্যাচে ফিদে মাস্টার জাকিয়া সুলতানাকে হারিয়ে ৯ খেলায় ৮ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত করে এসে বললেন, ‘দেখুন, আমি তো একটানা ছয়বারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি একসময় (১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত)। ১৯৭৯-তে প্রথমবার অংশ নিয়েই। তখন চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে এমন একটা ব্যাপার কাজ করত। এখন আর ওসব নেই। আনন্দ পাই, কত প্রতিভা নিয়ে নতুন নতুন মেয়েরা আসছে। ওদের সঙ্গে খেলতে ভালো লাগে। আর রেকর্ডের (৭৭ বছরে চ্যাম্পিয়ন) ব্যাপারটা মাথায় থাকে। (আবারও হাসি) !’ বোঝা গেল, রেকর্ড গড়ার ব্যাপারটা কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বাংলাদেশের নারী দাবার অগ্রদূত।

অনেকেই বলতে পারেন এবারের জাতীয় নারী দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা তুলনামূলক সহজ ছিল। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শারমীন সুলতানা ও রানারআপ শামীমা আক্তার লিজা খেলেননি। জবাবটা স্বপ্রণোদিত হয়েই দিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার, ‘এবার অনেকে খেলেনি সত্য। কিন্তু গতবার যখন এশিয়ান জোনাল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতি তখন বাংলাদেশের সবাই সেখানে ছিল। নেপাল-শ্রীলঙ্কারও ছিল।’

অর্থাৎ রানী হামিদ দাবার বোর্ডে বসেন রানির মতোই। প্রতিপক্ষ তখন রানী হামিদকে নিয়ে ভাবেন, তিনি সামনের জনকে নিয়ে ভাবেন না।