
>পাঁচ সেঞ্চুরি দেখে উপভোগ্য এক রাত কাটালেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ক্রিস গেইল, জস বাটলার, এউইন মরগান, তামিম ইকবাল—প্রতিটি সেঞ্চুরিই ছিল দুর্দান্ত
কাল একটা রাত গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। যেন ইউটিউবে সিনেমা দেখতে বসেছেন। ‘প্লে’ বাটন চালিয়ে দিলেই হচ্ছে, আর কিছু করতে হচ্ছে না। ইউটিউব রাতভর আপনাকে একের পর রোমাঞ্চকর, শিহরণ জাগানো সব ছবি দেখিয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাল রাতে যে পাঁচটা সেঞ্চুরি হয়েছে, প্রতিটিই উপভোগ্য সব সিনেমার গল্পের মতো। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী কোথাও অবশ্য সেঞ্চুরি হয়েছে রাতে, কোথাও দিনের আলোয়। তবে বাংলাদেশের দর্শকেরা প্রতিটি সেঞ্চুরিই দেখেছেন রাতে। সেঞ্চুরিময় দুর্দান্ত এক রাত কাটালেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
ম্যাক্সওয়েলের সান্ধ্য-ঝড়
রাতের শুরুতেই ম্যাক্সি-ঝড়! ভারত যত বড় লক্ষ্যই দিক, পেরাবোই—কাল বেঙ্গালুরুতে এই লক্ষ্যেই যেন ব্যাট করতে নামলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ভারতের দেওয়া ১৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি, ২২ রানে হারিয়ে ফেলে ২ উইকেট। এ ধাক্কা ম্যাক্সওয়েলের কাছে কিছু মনে হয়নি। নির্বিকার ভঙ্গিতে চালাতে শুরু করলেন। এবার সিরিজের আগে ভারতীয় সম্প্রচার চ্যানেল যে বিজ্ঞাপন বানিয়েছে, সেটি কি মাথায় ছিল ম্যাক্সির? ‘আমাদের ছোট করার ঝাল মেটাচ্ছি’—এমন ভাবনায় কি কাল অমন পেটালেন ভারতীয় বোলারদের? বিরাট কোহলি যে কখনো কখনো ছায়া হয়ে যান প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের কাছে, কাল এ বিরল দৃশ্যও দেখা গেল ম্যাক্সওয়েলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির জন্য। ৭ চার, ৯ ছয়ে ৫৫ বলে অপরাজিত ১১৩—দলকে জিতিয়েই ফিরেছেন অস্ট্রেলীয় মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। শুধু ম্যাচই জেতাননি, টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতের মাটিতে ভারতকে ধবলধোলাই নিশ্চিত করেছেন।
গভীর রাতে মরগান-বাটলার-গেইল
বেঙ্গালুরুতে ম্যাক্সওয়েলের শিহরণ জাগানো ‘অ্যাকশন’ তো দেখা গেল। এবার গ্রেনাডা ঘুরে আসা যাক। রিমোটের বাটন চাপতেই চক্ষু ছানাবড়া, অপার সৌন্দর্য নিয়ে বসে থাকা ক্যারিবীয় এ দ্বীপে এ কী ধ্বংসযজ্ঞ চলছে! উইন্ডিজ বোলারদের কচুকাটা করছেন দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান—এউইন মরগান আর জস বাটলার। ৫০ ওভারের ক্রিকেটকে টি-টোয়েন্টি বানিয়ে কী যে মার মারলেন ক্যারিবীয় বোলারদের। ৮৮ বলে ১০৩ করা মরগানকে আউট করে কটরেল তাঁর চেনা উদ্যাপন স্যালুট দিলেন! ওই ওভারে কটরেলকে ছক্কা মেরে উল্টো স্যালুট দিলেন বাটলার। কাল ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা যেন ছক্কা মারার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। ইনিংসে ২৪টা ছক্কা মেরে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছয় মারার রেকর্ডটা নিজেদের করে নিলেন। বাটলার ৭৭ বলে করলেন ১৫০ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ইংল্যান্ড পেল তাদের সর্বোচ্চ স্কোর—৬ উইকেটে ৪১৮। ইংল্যান্ডের রানের পাহাড়ে চাপা পড়েনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাল্টা জবাব দিয়েছে তারাও। বিশেষ করে ক্রিস গেইল। ‘অবসর’ ঘোষণা দিয়ে ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে ফিরে গেছেন ক্যারিবীয় ওপেনার। ৯৭ বলে করলেন ১৬২ রান। ১১ চার আর ১৪ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটা দেখে বাংলাদেশের দর্শকদের মনে হয়েছে রাত জাগা সার্থক। কী দুর্দান্ত এক ম্যাচই না হলো গ্রেনাডায়। ইংল্যান্ড ২৯ রানে জিতলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৮৯ কম রোমাঞ্চকর ছিল না!
ভোরে তামিম-আলো
গ্রেনাডায় ম্যাচ যখন শেষ, ভোরের আলো তখন ফুটি ফুটি করছে। সেই আলোটা বড় স্নিগ্ধ, বড় সুন্দর লাগল তামিম ইকবালের ইনিংসটা দেখে। হ্যামিল্টন টেস্টে বাঁহাতি ওপেনারে ব্যাটে যে স্ট্রোকের ফুল ফুটল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট ২৩৪ রানে। এর মধ্যে বাঁহাতি ওপেনারের রানই ১২৬, সেটিও ১২৮ বলে। তামিমের সেঞ্চুরির পরও স্কোরটা হৃষ্টপুষ্ট হয়নি, হ্যামিল্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট ২৩৪ রানে।