Thank you for trying Sticky AMP!!

কেউ কারও খারাপ চাইতেন না

ওয়াসিম–ওয়াকারের সম্পর্ক বাজে হলেও কেউ কারও খারাপ চাননি

‘টু ডব্লিউ’ তকমা তাঁদের নামের পাশে। ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিস ছিলেন নব্বইয়ের দশকের সবচেয়ে ভয়ংকর ফাস্ট বোলিং জুটি। সে দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালান ডোনাল্ড–শন পোলক, অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা–ডেমিয়েন ফ্লেমিং এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যামব্রোস ফাস্ট বোলিং জুটি হিসেবে ঝড় তুলেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের ওয়াসিম ও ওয়াকার ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন সবাইকেই। এই ভয়ংকর পেস জুটির মধ্যে সম্পর্কটা যে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না, সেটা তো ক্রিকেটের ইতিহাসেরই অংশ।

ওয়াসিমের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ওয়াকার নিজ থেকে কখনোই খুব বেশি কিছু বলেননি। তবে ওয়াসিম আকরাম প্রায়ই স্মৃতিচারণা করেন। তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, নব্বইয়ের দশকে যখন জুটি বেঁধে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ‘শিকার’ করছেন, তখন তাঁদের নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কটা ছিল ভয়াবহ। এমনও দিন গেছে, মাঠের ভেতরে–বাইরে কোনো কথাই হতো না দুজনের।

তবে ওয়াসিম আকরামই জানিয়েছেন, দুজনের মধ্যে কথা বলা বন্ধ থাকলেও কেউ নাকি একে অপরের বাজে পারফরম্যান্স কামনা করতেন না। ওয়াসিম আকরাম চাইতেন ওয়াকার ভালো করুক, ওয়াকারও একই রকম ভাবতেন। দুজনই দুজনের পারফরম্যান্সকে ছাড়িয়ে যেতে চাইতেন—যেটি পাকিস্তান দলকেই উপকৃত করেছিল।

পারফরম্যান্সে ওয়াকারকে ছাড়িয়ে যেতে চাইতেন ওয়াসিম

‘টু বি অনেস্ট’ নামের একটি ইউটিউব শোতে আকরাম বলেছেন, ‘তখন বয়স অল্প ছিল। ২৪–২৫ বছর বয়স আমাদের। আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ শীতল ছিল, এটা অস্বীকার করব না। কিন্তু তারপরও আমরা কিন্তু কেউই একে অন্যের মন্দ কামনা করতাম না। চাইতাম দুজনই যেন ভালো করি। একজন ৫ উইকেট পেলে অন্যজনও ৫ উইকেট পেতে চাইতাম। একে অন্যকে পারফরম্যান্স দিয়ে ছাড়িয়ে যেতে চাইতাম। প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা সব সময়ই স্বাস্থ্যকর ছিল। কিন্তু মুড এদিক–ওদিক হতো।’

ওয়াসিম আকরামের প্রতি এখন অনেক শ্রদ্ধা ওয়াকারের

ওয়াসিম আর ওয়াকারের সম্পর্কটা সবচেয়ে খারাপ জায়গায় পৌঁছেছিল ১৯৯৯ সালের দিকে। সেটির কথা নিজের আত্মজীবনী ‘কন্ট্রোভার্সিয়ালি ইয়োরস’–এ বর্ণনা করেছিলেন শোয়েব আখতার। তিনি লিখেছিলেন, ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে দিল্লি টেস্টে হারের পর (অনিল কুম্বলে যে টেস্টে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন) ড্রেসিংরুমে ওয়াসিম আর ওয়াকারের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। ব্যাপারটা এত বাজে রূপ নিয়েছিল যে গুঞ্জন উঠেছিল, ভারত সফর থেকে ওয়াকারকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ছিল এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, যেটি অনুষ্ঠিত হয় কলকাতায়। তখনো পাকিস্তানের ড্রেসিংরুম ছিল থমথমে। তরুণ, উদীয়মান ক্রিকেটার হিসেবে শোয়েব সে সময়কার বাজে পরিস্থিতিতে যে অসহায় বোধ করতেন, সেটিও বইয়ে লিখেছিলেন।

তবে এত বছর পর ওয়াসিম–ওয়াকার সম্পর্কে আর সেই তিক্ততা নেই। দুজন এক সঙ্গে অনেক ধরনের কার্যক্রমে অংশ নেন। এই তো গত বছরের নভেম্বরেই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় দুজন পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলের বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। দুজন পাশাপাশি বসে বিভিন্ন পণ্যের দূত হিসেবেও কাজ করেছেন। অংশ নিয়েছেন বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে। কিছুদিন আগে ওয়াসিম আকরামকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) ‘হল অব ফেমে’ জায়গা করে নেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের সন্তুষ্টি জানিয়েছিলেন ওয়াকার। অভিনন্দন জানিয়েছিলেন তাঁর এক সময়ের বোলিং সঙ্গীকে। বিভিন্ন সাক্ষাৎকার কিংবা ক্রিকেটীয় আলাপচারিতায়ও ওয়াসিম আকরামের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন তিনি।