
সোনালি দিনগুলো এখন শুধুই ধূসর স্মৃতি। ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সেই স্বর্ণযুগ এখন রূপকথার মতো মনে হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সীমানা ছাড়িয়ে সেই হাহাকার ছড়িয়ে পড়েছে ক্রিকেট বিশ্বেই। ক্যালিপসো ক্রিকেটের দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখতে দেখতে বড় হওয়া স্টিভ ওয়াহকেও পোড়ায় তা। এতটাই যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটকে বাঁচাতে আইসিসিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক।
আশির দশকের শুরু থেকে টানা ২৭টি টেস্টে অপরাজিত ছিল ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই রেকর্ড এখনো টিকে আছে এখনো। ওই সময়ে টানা ১১টি টেস্ট জেতার রেকর্ডটিও টিকে ছিল অনেক দিন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত টানা ২৯টি সিরিজে অপরাজিত ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিকেটের সীমানা ছাড়িয়ে যেকোনো খেলাতেই এমন আধিপত্য বিরল এক উদাহরণ।
পরের গল্পটা শুধুই নিচে নেমে যাওয়ার। আশির দশকের শেষ থেকেই যে ফাটল দেখা দিয়েছে, নব্বইয়ের মাঝামাঝি থেকেই সেটা একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে পুরো প্রাচীর জুড়ে। ছোট্ট ছোট্ট অনেকগুলো দ্বীপদেশকে একসঙ্গে গেঁথে রেখেছিল ক্রিকেট নামের যে সুতো, সেটাও ছিঁড়তে শুরু করেছে তখন। ক্যারিয়ারের শুরুতে দিগ্বিজয়ী সাম্রাজ্যের যে সোনার কেল্লা দেখেছিলেন, ক্যারিয়ারের শেষে এসে সেই সাম্রাজ্যের শ্রীহীন দালানের ধ্বংসস্তূপ দেখেছেন স্টিভ ওয়াহ। লয়েড, রিচার্ডসদের দলের এই ভগ্নদশা তাঁকে হয়তো একটু স্মৃতিকাতরও করে তুলছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের আলাদা যে একটা আবেদন, সেটি হারিয়ে গেলে যে বিশ্ব ক্রিকেটই একটু রং হারিয়ে ফেলে।
গত মের পর থেকে আর কোনো টেস্ট জিততে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আইসিসির টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে নেমে গেছে আট নম্বরে। ওয়ানডেতে নয় নম্বরে নেমে গিয়ে হারিয়েছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ। মে তে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ ড্র করে একটা আশার গান শুনিয়েছিলেন হোল্ডাররা, তবে সেটি মিলিয়ে যেতেও সময় লাগেনি। গত বছর ১০টি টেস্টে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ওই একটা জয়ই সম্বল। হারতে হয়েছে আটটি টেস্টই!
শুধু গত বছরই নয়, সময়ের পরিধিটা আরও বাড়ালেও চিত্রটা খুব বদলাচ্ছে না। গত দশ বছরে মাত্র ছয়টি টেস্ট সিরিজ জিততে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এর মধ্যে চারটিই বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে। এই সময়ে ধবলধোলাই হতে হয়েছে ছয়বার। খেলোয়াড়দের সঙ্গে বারবার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে বোর্ড, সফরের মাঝপথে দলের দেশে ফিরে আসার মতো ঘটনাও ঘটেছে। দ্বন্দ্বটা এখনো ভালোমতোই আছে, গেইল-পোলার্ডরা এখন দেশের জার্সিটা এক পাশে রেখে হয়ে গেছেন টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালাই।
এই তো, মাত্র কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়া থেকে হোল্ডারের দলকে ফিরতে হয়েছে লজ্জা নিয়ে। তিন টেস্টের সিরিজের দুটিতে বিধ্বস্ত হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সিডনিতে শেষ টেস্টটা বৃষ্টিতে না ভেসে গেলে ধবলধোলাই-ই হয়তো জুটত কপালে। ওয়াহ আরও বড় কোনো বিপর্যয় এড়াতে আইসিসিকেই উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন, ‘কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে এসে বলতে হবে-আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ রকম কিছু হতে দিতে পারি না। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখনো গোনায় মতো একটা দল। কারণ তিন-চারটি দেশের মধ্যে তো আপনি আর টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারেন না। কাউকে নিশ্চিত করতে হবে, তারা আগে যে পর্যায়ে ছিল, আবার যেন সেখানে যেতে পারে।’ তুলনা করতে গিয়ে টেনে এনেছেন নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি অল ব্ল্যাকস রাগবি দলকে, ‘এটা অনেকটা অল ব্ল্যাকস দলকে অযত্নে অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যেতে দেখার মতো। রাগবি কি সেরকম কিছু হতে দেবে?’ তথ্যসূত্র: সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।