তাসকিন আহমেদ।
তাসকিন আহমেদ।

‘কেন গালি দিচ্ছ, বল দিয়ে পারলে কিছু করো!’

প্রথম দিন ৭ম উইকেটে লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহর জুটি ভাঙার পর হয়তো একটু স্বস্তিই পেয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তবে এরপর যে তাসকিন আহমেদকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ আরও বড় হতাশা দেবেন, সেটি কি আর জানতেন তাঁরা!

আগের দিন তাসকিন আহমেদ অপরাজিত ছিলেন ১৩ রানে। ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান, তাঁকে দ্রুত আউট না করার হতাশাই যেন দ্রুতই প্রকাশ পেল ব্লেসিং মুজারাবানির। দিনের তৃতীয় ওভারে মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা ছেড়ে দিয়ে একটু নেচেই নিলেন তাসকিন। মুজারাবানি সেটা সহজভাবে নেননি, তাসকিনের দিয়ে এগিয়ে গেছেন। তাসকিনও চুপচাপ থাকেননি। খানিক বাদে তাসকিনের হেলমেট আর মুজারাবানির মুখ লেগে থাকল, কথা চালাচালি চলল সেভাবেই।

‘তখন বলছিলাম, “আমাকে কেন গালি দিচ্ছ, বল দিয়ে পারলে কিছু করো!” এটাই। আর কিছু না।’
তাসকিন আহমেদ

সেই মুহূর্তে কী হয়েছিল, দিন শেষে জানিয়েছেন তাসকিনই, ‘ওরা আমাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করছিল। বাউন্সার মারার চেষ্টা করছিল। ভালো জায়গায় বল করছিল। আমি সামলাচ্ছিলাম ভালো। বিরক্ত হয়ে বেশ কয়েকবার গালিও দিয়েছে। তৃতীয়বার যখন গালি দিয়েছিল, তখন আমিও তেড়ে গিয়েছিলাম।’

তাসকিন এরপর দিয়েছেন জবাবটা, ‘তখন বলছিলাম, “আমাকে কেন গালি দিচ্ছ, বল দিয়ে পারলে কিছু করো!” এটাই। আর কিছু না।’

অবশ্য তাসকিনের সঙ্গে মুজারাবানির সে দফা পরিস্থিতি শান্ত হলেও খানিক বাদে ভিক্টর নিয়াউচির সঙ্গে লেগে গিয়েছিল মাহমুদউল্লাহর। ৮৮তম ওভারে বোলিং করতে এসেছিলেন নিয়াউচি। তবে তিনি ডেলিভারিটা সম্পন্ন করার আগেই সরে গেলেন মাহমুদউল্লাহ, প্রস্তুত ছিলেন না বলে। নিয়াউচিও সেটি সহজভাবে নেননি, ডেলিভারি না করলেও বলটা ছুড়ে মেরেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত দুজন মিলে গড়েছেন ৯ম উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড ১৯১ রানের জুটি।

পরেরবার নিয়াউচি ডেলিভারি-স্ট্রাইডে গেলেন ঠিকই, তবে এবার তিনি ডেলিভারিটা করলেন না। এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠলেন মাহমুদউল্লাহ। তিনি হাঁটা দিলেন বোলারের পেছন পেছন, আঙুল তুলে কিছু একটা বলছিলেনও তাঁকে। শেষে আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস এসে মধ্যস্থতা করেছেন দুজনের। পরেরবার রানআপ শুরু করেও থেমে গিয়েছিলেন নিয়াউচি।

সেসব অবশ্য টলাতে পারেনি মাহমুদউল্লাহ-তাসকিনকে। শেষ পর্যন্ত দুজন মিলে গড়েছেন ৯ম উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড ১৯১ রানের জুটি। তাসকিন বলছেন, মেরে খেলার ইচ্ছা হলেও মাহমুদউল্লাহর কথা শুনে ‘উল্টাপাল্টা’ খেলেননি তিনি, ‘উইকেটটা অনেক ভালো। শুধু প্রথম দিনের প্রথম সেশন ছাড়া উইকেট খুব ভালো ছিল। (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ ভাই, সবাই বলছিল উইকেট সময়ের সঙ্গে ভালো হচ্ছে ধীরে ধীরে। রান করাটা গুরুত্বপূর্ণ। যাতে বোলারদের সাহায্য হয়। সেটাই মাথায় ছিল। রিয়াদ ভাই বলেছিলেন, উল্টাপাল্টা না খেলে সোজা খেলার জন্য। আমিও তাই করছিলাম। যেহেতু আমি বোলার, আমারও মাঝেমধ্যে মেরে দিতে ইচ্ছা করছিল। কিন্তু তাঁকে সঙ্গ দিতে হচ্ছিল।’

নবম উইকেট জুটির রেকর্ড ভেঙেছেন মাহমুদউল্লাহ-তাসকিন।

ব্যাটিংয়ে নিজের কাজটা সারলেও এখনো বোলিংয়ের কাজটা বাকি তাসকিনের। শেষবেলায় আঁটসাঁট বোলিং করলেও উইকেটের দেখা পাননি এখনো। এই পেসার বলছেন, এ উইকেটে ধৈর্য ধরতে হবে তাঁদের, ‘উইকেট বেশ ভালো। ভালো জায়গায় ধৈর্য ধরে বল করতে হবে। এখন ব্যাটিংয়ের জন্য খুব সহজ। এখন জায়গামতো ভালো জায়গায় বোলিং করা, ফিল্ডিং অনুযায়ী বোলিং করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। আক্রমণ অবশ্যই করতে হবে, তবে সেটা ফিল্ডিং অনুযায়ী। কারণ, বাজে বলে খুব সহজেই মারা যাচ্ছে। ধৈর্য ধরে ভালো জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বোলিং করতে হবে।’