Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্রিকেট মাঠের বাবা-ছেলে জুটির গল্প

ক্রিকেট ইতিহাসে বাবা-ছেলের জুটির গল্প দুর্লভ কিছু নয়। বিশ্ব বাবা দিবসে তেমনই কয়েকটি জুটির গল্প শুনে নেওয়া যাক।

বিভিন্ন সময়ে ক্রিকেট বিশ্ব সাক্ষী হয়েছে বেশ কিছু বিখ্যাত বাবা-ছেলে জুটির, যারা নিজ নিজ সময়ে বাইশ গজে আলো ছড়িয়েছেন। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ডামাডোলে আজ বিশ্ব বাবা দিবসে জেনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু বিখ্যাত ক্রিকেটার বাবা-ছেলে জুটির গল্প।

ক্রিস ব্রড ও স্টুয়ার্ট ব্রড (ইংল্যান্ড)

২৫ টেস্ট খেলে ৪০ এর একটু নিচে গড়ে ১৬৬১ রান ক্রিস ব্রডের। সেরা সাফল্য ছিল ১৯৮৬/৮৭ সালের অ্যাশেজে। টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি করে ৪৮৭ রান নিয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে সিরিজে সর্বোচ্চ রান ছিল তাঁর। ছেলে স্টুয়ার্ট ব্রড অর্জনে ছাপিয়ে গেছেন বাবা। এখন পর্যন্ত ১২৬ টেস্টে ৪৩৭ উইকেট নিয়ে জেমস অ্যান্ডারসনের পর ইংল্যান্ডের সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। টেস্ট ক্রিকেটেই ব্রডের চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন মাত্র ৭ জন। রঙিন পোশাকেও মন্দ ছিলেন না। ওয়ানডেতে ১২১ ম্যাচে ১৭৮ আর টি-টোয়েন্টিতে ৫৬ ম্যাচে ৬৫ উইকেট নিয়েছেন।

ল্যান্স কেয়ার্নস ও ক্রিস কেয়ার্নস (নিউজিল্যান্ড)

দুজনই ছিলেন মিডিয়াম পেসার, প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও ছিলেন সমান কার্যকরী। তবে অর্জনের বিচারে বাবা ল্যান্সের চেয়ে এগিয়ে ক্রিস। ১১ বছরের ক্যারিয়ারে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৪৩ টেস্টে ১৩০ উইকেট নিয়েছিলেন ল্যান্স কেয়ার্নস। ওয়ানডেতে তিনি স্মরণীয় ১৯৮৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছয় ছক্কায় ২৫ বলে ৫৩ রানের ইনিংসের জন্য। এদিকে নিজের সময়ে ক্রিস কেয়ার্নস ছিলেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। টেস্টে ৩০০০ রান ও ২০০ উইকেটের বিরল ‘ডাবল’ আছে ক্রিসের। ওয়ানডেতেও ছিলেন সমান কার্যকরী। ২০০ এর বেশি উইকেট আছে এই ফরম্যাটেও, সঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার রান। ৮৪.২৭ স্ট্রাইক রেটে ৪ সেঞ্চুরি ও ২৬ ফিফটির মালিক ক্রিসকে সমীহ করতেন বেশির ভাগ বোলাররাই।

ছেলে রোহানের সঙ্গে গাভাস্কার।


সুনীল গাভাস্কার ও রোহান গাভাস্কার (ভারত)

এই জুটির গল্পটা আবার উল্টো। ক্রিকেট ইতিহাস যেখানে সুনীল গাভাস্কারকে একনামে চেনে, রোহান সেখানে হারিয়ে গেছেন কালের গহ্বরে। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের সর্বকালের সেরা ওপেনার সুনীল। ১০ হাজার রানের মাইলফলকেও প্রথম পৌঁছেছিলেন। টেস্টে ৩৪ সেঞ্চুরি ও ৪৫ ফিফটির মালিক সুনীল ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে। যদিও টেন্ডুলকার ও দ্রাবিড় পরে তাঁকে টপকে যান। ভারতের হয়ে ১০৮টি ওয়ানডেও খেলেছেন। বাবার সাফল্যের ছিটেফোঁটা পাননি রোহান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আশা জাগালেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেবল হতাশাই উপহার দিয়েছেন। ১১টি ওয়ানডে খেলেই শেষ হয়েছে তাঁর ক্যারিয়ার।

লালা অমরনাথ ও মহিন্দর অমরনাথ (ভারত)

ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় বাবা-ছেলে জুটি এরাই। ১৭ বছরের দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ার ছিল লালার, কিন্তু এ সময়ে তিনি ম্যাচ খেলেছিলেন মাত্র ২৪টি। ব্যাট হাতে ৮৭৮ রানের পাশাপাশি বল হাতে পেয়েছিলেন ৪৫ উইকেট। ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম শতক হাঁকানো ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানকে হিট আউট করা একমাত্র বোলারও লালা অমরনাথ। স্বাধীন ভারতের প্রথম টেস্ট অধিনায়কও লালা। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়েও। বাবার সমান না হলেও সফল বলতে হবে ছেলে মহিন্দরকেও। প্রথম শতকের দেখা পেতে আট বছর অপেক্ষা করেছিলেন, অথচ পরে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন আরও দশবার। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ভারতকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতানোয়। ১৯৮৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনিই যে ছিলেন ম্যাচসেরা!

হানিফ মোহাম্মদ ও শোয়েব মোহাম্মদ (পাকিস্তান)

নিজ সময়ে পাকিস্তান ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের একজন ছিলেন হানিফ মোহাম্মদ। ৫৫ টেস্ট ম্যাচে প্রায় ৪৪ গড় নিয়ে ৪০০০ এর কাছাকাছি রান করেছিলেন তিনি। ১৯৫৮ সালে বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৩৭ রানের সেই মহাকাব্যিক ইনিংসটি টেস্ট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা সেঞ্চুরি হিসেবে পরিচিত। টেস্টে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের এটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। ছেলে শোয়েব যদিও তারকাখ্যাতিতে বাবার সমপর্যায়ে পৌঁছাতে পারেননি, তবে ব্যাটিং গড়ে বাবার চেয়ে খানিকটা এগিয়েই ছিলেন। বাবার কাছ থেকে লম্বা ইনিংস খেলার বিদ্যাও বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছিলেন, যার ফলাফল ১৯৯০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটি।

পোলকদের দুই প্রজন্ম।


পিটার পোলক ও শন পোলক (দক্ষিণ আফ্রিকা)

নিজ নিজ সময়ে দুজনেই ছিলেন বিশ্বের সেরা পেসারদের মাঝে অন্যতম। পিটার পোলকের ক্যারিয়ারকে বেশ ছোটই বলা যায়, মাত্র ২৮ ম্যাচের। কিন্তু এর ভেতরই ২৪.১৮ গড়ে ১১৬ উইকেট তুলে নিয়ে বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের মনে ত্রাস সঞ্চার করেছিলেন। তবে পোলক পরিবারের মুখ বাবার চেয়েও বেশি উজ্জ্বল করেছিলেন শন পোলক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭৩৮৬ রান ও ৮২৯ উইকেট পাওয়া শনকে ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন বলেই মানা হয়। ওয়ানডেতে ৩৯৩ ওয়ানডে উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। টেস্টেও ৪২১ উইকেট নিয়ে ডেল স্টেইনের পর দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার।

তিন মার্শই বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছেন।


জিওফ মার্শ, শন মার্শ ও মিচেল মার্শ (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে ৫০ টেস্ট ও ১১৭ ওয়ানডে খেলেছিলেন জিওফ মার্শ। খেলোয়াড়ি জীবনে ইতি টানার পর কোচিংয়ে আসেন। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া শিরোপা জেতে তাঁর অধীনেই। মার্শ পরিবারের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভাব শন মার্শের। অভিষেকেই শতক হাঁকিয়ে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শন। কিন্তু সে সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি। ছোট ভাই মিচেল মার্শও গায়ে চাপিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জার্সি। বড় ভাই শন এই বিশ্বকাপে খেলে ফেলেছেন কয়েকটি ম্যাচ, মার্কাস স্টয়নিসের ইনজুরির সুবাদে স্কোয়াডে যুক্ত হয়েছেন ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী মিচেলও।