>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো।

গত ১১ এপ্রিল লিগের প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার কথা ছিল। সে হিসেবে মার্চের মাঝামাঝি থেকে এই পর্যন্ত কত ব্যস্ত সময়ই না কাটাতে হতো! পয়েন্ট টেবিলে আমাদের অবস্থান কী, প্রতিপক্ষ দলগুলো কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে, এসব হিসাব-নিকাশই চলতো শুধু। কিন্তু এখন কিছুই হচ্ছে না। উল্টো নারায়ণগঞ্জে ঘরবন্দী হয়ে আছি।
ঢাকায় পর এখন নারায়ণগঞ্জই সবচেয়ে আতঙ্কের জায়গা। গুদনাইল হাজারীবাগে আমাদের বাড়ি। পরিবার নিয়ে সব সময় খুব আতঙ্কে আছি। জীবনে এমন সময় আসবে কখনোই ভাবিনি।
তবু জীবন থেমে থাকে না। জাতীয় দলের ফুটবলার হিসেবে অনেক কিছুই মেনে চলতে হয়। দলে জায়গা ধরে রাখতে হলে শরীরটা তো অন্তত ফিট রাখতে হবে। ক্লাবের মতো শৃঙ্খলা মেনে অনুশীলন করা, পরিমিত খাবার-ঘুম এসব ঠিক না রাখতে পারলেও চেষ্টার কমতি রাখছি না।
সকালে অনুশীলনটা হচ্ছে না। সাড়ে নয়টা-দশটার আগে তো ঘুম থেকেই উঠতে পারিনা। নাস্তা করে টিভি দেখি, ক্যারাম খেলি। বাসায় বন্দী থাকতে হবে বলেই বড় একটি ক্যারাম বোর্ড এনেছি। ভাই ও চাচাদের সঙ্গে প্রতিদিন অনেকক্ষণ কেরাম খেলি। আর টিভিতে খুঁজে খুঁজে অ্যাকশনধর্মী হলিউডের সিনেমাগুলো দেখি।
দুপুরের পর ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে বিকেল চারটা থেকে অনুশীলন করি। বাসায় ফিটনেস অনুশীলন করার মতো পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি আছে। ফ্লোরে ম্যাট বিছিয়ে রাবার দিয়ে স্ট্রেচিং করি। এর পরে কোণ, মার্কার সাজিয়ে প্রতিদিনই ফিফা ইলেভেন ট্রেনিং শেষ করি। এর পর 'কোর' ও 'বেলি' পর্ব। সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই মাঠে গিয়ে দৌড়ানো ও বল নিয়ে অনুশীলন চলছে। বাসা থেকে এক মিনিট দূরত্বে বালুর মাঠ। সেখানে গিয়ে দৌড়চ্ছি। মাঝে মাঝে বল নিয়েও কাজ করছি।
শরীরে যেন চর্বি না জমে, সে অনুপাতে প্রতিদিনই ঘাম ঝরানো হচ্ছে।
আমি অনুশীলণটা করছি ক্লাবের প্রধান কোচ অস্কার ব্রুজোন এবং ট্রেনার-ফিজিওদের দেওয়া রুটিন মেনে। জাতীয় দলের কোচ জেমি ডের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি, তাঁর পরামর্শ নিচ্ছি। কোচেরা বলেছেন যে কোনো টেস্টের জন্য প্রস্তুত থাকতে, সুতরাং এগুলো না মানলে তো চলবে না। ওজন বেড়ে গেলে জরিমানার দেওয়ার ভয়ও আছে। কিন্তু ক্লাবের মতো বেশি অনুশীলন হয় না বলে রাতে ঘুমাতে দেরি হয়।
মন্দের ভালো অবসরের সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটানো। আমরা বায়ান্নবর্তী পরিবার। আমাদের পরিবারে মা-বাবা ও আমরা দুই ভাই। প্রায় ১০ বছর হলো তাদের সঙ্গে এতটা সময় কাটানোর সুযোগ পাইনি। এবার তাঁদের সঙ্গে অনেক সময় কাটছে। পারিবারিক অনেক আলোচনায় অংশ নিচ্ছি। আমি বিয়ে করলেও বউ এখনো তুলে আনা হয়নি। ও (স্ত্রী) ডাক্তারি পড়া শেষ করে এক বছরের ইন্টার্নির জন্য মহাখালীতে আছে।
'কোয়ারেন্টিনে'র সময়ে ভালো একটা পারিবারিক বন্ধন গড়ে উঠেছে, সঙ্গে পুরনো অনেক বন্ধুদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ হচ্ছে। খেলার চাপে অনেক বন্ধুর সঙ্গে তো যোগাযোগ প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। করোনাভাইরাসের অনেক মন্দের মধ্যে এটা একটা ভালো।