নিজের ঘরের মাঠ, গ্যালারিতে বাবা। জো রুটের কাছে উপলক্ষটা তাই বিশেষ কিছু। সেঞ্চুরির পর তাঁর উদ্যাপনটাও হলো দেখার মতোই। ক্যারিয়ারের ২৩তম সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক, এ বছরের মাঝেই যেটা ষষ্ঠ। রুটের স্বপ্নের ফর্ম চলছেই তাই। ররি বার্নস, হাসিব হামিদ, ডাভিড মালানের ফিফটির পর ইংল্যান্ড অধিনায়কের সেঞ্চুরিতে হেডিংলিতে দ্বিতীয় দিন ভারত পিষ্ট হলো আরেকবার। দ্বিতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ড ৮ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৪২৩ রান, প্রথম ইনিংসে এগিয়ে গেছে ৩৪৫ রানে।
আগের দিন বিনা উইকেটে ১২০ রান তোলা ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেটের দেখা পেতে দিনের অষ্টম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ভারতকে। মোহাম্মদ শামির ভেতরের দিকে ঢোকা দারুণ এক ডেলিভারিতে ভেঙেছে ৬১ রান করা ররি বার্নসের রক্ষণ। ১৩৫ রানের ওপেনিং জুটি ভেঙেছে তাতেই। আরেক ওপেনার হাসিব হামিদ টিকে ছিলেন আরও কিছুক্ষণ। তবে বোল্ড হয়েছেন তিনিও, সে ওভারেই বোলিংয়ে আসা রবীন্দ্র জাদেজার দুর্দান্ত এক বলে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটিকে হামিদ টানতে পেরেছেন ৬৮ রান পর্যন্তই।
ডাভিড মালানের সঙ্গে জো রুট এরপর অবশ্য হতাশ করে গেছেন ভারতীয় বোলারদের। ২ উইকেটে ১৮২ রান নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। রুট করেছেন ওয়ানডের মতো ব্যাটিং। বিরতির আগে শামিকে এক ওভারে দুই চার মেরেছিলেন, আক্রমণ চালিয়ে গেছেন এরপরও। মাত্র ৫৭ বলেই ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। মালানের সঙ্গে তাঁর জুটি ১০০ রান ছুঁয়েছে মাত্র ১৩৮ বলেই।
৮০ ওভারের পরই দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক কোহলি, তবে শিগগির সাফল্য মেলেনি। তিন বছর পর ফেরা মালানও ইনিংসে চতুর্থ ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে পেয়ে গেছেন ফিফটি। ২০১৩ সালে ডুনেডিন টেস্টের পর এই প্রথম এক ইনিংসে ইংল্যান্ডের প্রথম চার ব্যাটসম্যান ফিফটির দেখা পেলেন। সেবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যালিস্টার কুক, নিক কম্পটন ও জোনাথন ট্রটের সঙ্গে ফিফটি পেয়েছিলেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে তিন নম্বরে নামা স্টিভেন ফিনও। টেস্টে এক ইনিংসে প্রথম চার ব্যাটসম্যানের ফিফটির ঘটনা দেখা গেল ২০১৯ সালের পর প্রথমবার। সেবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম চার ব্যাটসম্যান—শান মাসুদ, আবিদ আলী, আজহার আলী ও বাবর আজমের সবাই অবশ্য পেয়েছিলেন সেঞ্চুরিই।
এমন রেকর্ডের অংশ হলেও ম্যালান অবশ্য একটু আক্ষেপে পুড়তেই পারেন তাঁর আউটের ধরনে। মোহাম্মদ সিরাজের লেগ সাইডের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েছেন তিনি। ভারত সে উইকেটটা পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। উইকেটকিপার ঋষভ পন্তের আগ্রহ ছিল না তেমন, তবে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি রিভিউ নিয়েছিলেন ঠিকই। চা-বিরতির আগ দিয়ে তাই ভেঙেছে রুটের সঙ্গে মালানের ১৩৯ রানের জুটি। ইংল্যান্ড চা-বিরতিতে গিয়েছিল ২২০ রানে এগিয়ে থেকে।
বিরতির পর ইয়র্কশায়ের দুই ব্যাটসম্যান—রুটের সঙ্গে জনি বেয়ারস্টোর কবলে পড়েছিল ভারত। রুট শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মাত্র ১২৪ বলে। ইশান্ত শর্মাকে মারা দারুণ এক ফ্লিকে সেঞ্চুরিতে গেছেন তিনি। এক পঞ্জিকাবর্ষে তৃতীয় ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান হিসেবে ছয়টি সেঞ্চুরি পেলেন রুট। এর আগে এ কীর্তি ছিল মাইকেল ভন (২০০২) ও ডেনিস কম্পটনের (১৯৪৭)।
রুটের সেঞ্চুরির পর অবশ্য সাফল্যের দেখা পেয়েছে ভারত। মোহাম্মদ শামির বলে ফিরেছেন জনি বেয়ারস্টো ও জস বাটলার। বেয়ারস্টো স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন, আর শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ তুলেছেন বাটলার। এরপর ফিরে গেছেন রুটও। বুমরার বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১২১ রান করেছেন তিনি।