Thank you for trying Sticky AMP!!

রানআউট হওয়া মোস্তাফিজের সঙ্গে ড্রেসিং রুমে ফিরছেন অপরাজিত মাহমুদউল্লাহ

লিটন না হয় গেলেন, মাহমুদউল্লাহ কী করলেন

সবার আগে লিটন দাসকে অভিনন্দন।

বাংলাদেশের ইনিংসে ৪৪.৭৯ শতাংশ রান করে দেওয়ার জন্য। লিটনের জন্য সমবেদনাও। বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ ১০ ওভার অন্য রকম হতে পারত। তা হয়নি, কারণ শেষের শুরুটা করার পথে লিটন একটা বিষয় ভুলে গিয়েছিলেন।

একটি উইকেটের পতনেই মড়ক লাগতে পারে!

আগের ম্যাচে চোখধাঁধানো শতকে দল জেতানোর পর আজ একবার বেঁচে গিয়ে শতকের পথেই ছিলেন বাংলাদেশ ওপেনার। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে রিভিউয়ে তাঁর এলবিডব্লু না হওয়াটা বিতর্ক ছড়াবে, এরপর এগিয়েছেন প্রথম ম্যাচে শতকের সূত্র মেনে—নিচে খেলে থিতু হয়েছেন।

ইনিংসের গভীরে যে ব্যাট করতে চান বোঝা যাচ্ছিল। ৩৫ ওভার পার করে দিয়ে কাজটা সারলেন ভালোভাবেই। বাংলাদেশ তখন ৪ উইকেটে ১১২, লিটন ১১১ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত। অন্য প্রান্তে ইনিংসের এমন সময় ব্যাটিং করতে করতে হাত পাকানো অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ। তবে ১৯ বলে ৯ রানে তাঁকে বেসুরো মনে হচ্ছিল।

আউট হয়ে ফিরছেন লিটন

সেটি হতেই পারে। ইনিংসের শুরুতে কতজনেরই তো এমন হয়। অভিজ্ঞতা দিয়ে পরে পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব। আর লিটনও দ্বিতীয় ম্যাচের পর ‘আমরাও তো সিনিয়র হয়েছি’ বলে আশস্ত করার পর শেষটা আরও ভালো হওয়ার আশায় ছিলেন সবাই। কিন্তু দুঃস্বপ্নের শুরুটা হলো পরের ওভার থেকেই।

স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাটিং করলে আর দুই–তিন ওভারের মধ্যেই টানা দ্বিতীয় শতক পেয়ে যেতেন লিটন। তুলে মারার সুযোগ পেয়েও নিচে কয়েকটি ‘পুল’ খেলেছেন—এভাবে খেললেও শতক পেয়ে যেতেন ৪০ ওভারের মধ্যে।

কে জানে কী হলো, ৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলে লিটন মোহাম্মদ নবীকে কেন স্লগ সুইপ করলেন, আর করলেনই যেহেতু কেনই–বা তুলে মারলেন, সে ব্যাখ্যা সম্ভবত শুধু লিটনের কাছেই মিলবে। আরও একটা ব্যাখ্যা আছে। ব্যাটসম্যান উইকেটে ‘সেট’ হলেই তো অমন শট খেলবেন। আউটও হতেই পারেন।

আর ঠিক এখানেই উঠে আসে মাহমুদউল্লাহর প্রসঙ্গ। লিটনের ফেরার পর বাংলাদেশের ইনিংসের বাকি পথটা পাড়ি দিতে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহই ছিলেন বড় ভরসা।

মাহমুদউল্লাহ শেষ দিকে দ্রুত রান তুলতে পারেননি

লিটন আউট হওয়ার আগপর্যন্ত আড়াই শ পেরিয়ে তিন শ ছুঁই ছুঁই স্কোর গড়ার স্বপ্ন ভালোভাবেই টিকে ছিল। আউট হওয়ার পরের ৬ ওভার শেষে (৪১.৫) বাংলাদেশের স্কোর ৭ উইকেটে ১৭৫। দুই শ হওয়াই কঠিন। শেষ পর্যন্ত হয়ওনি। এই ৪৮ বলের ব্যবধানে ছোটখাটো একটা ‘মড়ক’ লাগায় ২৩ রানে পড়েছে ৩ উইকেট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাত বছর পার করে, বাংলাদেশের এমন মড়ক প্রচুর দেখেও লিটন ভুলে গিয়েছিলেন, ওই মুহূর্তটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটু থাকলে নিজেও শতক পেতেন এবং চল্লিশ ওভার পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংসেও ‘লেজ’ বেরিয়ে আসত না।

কিন্তু এরপর বোলারদের নিয়ে ব্যাটিং করার দক্ষতাটা বাংলাদেশ দলে মাহমুদউল্লাহর চেয়ে ভালো আর কে জানেন?

মাহমুদউল্লাহর পা দুটি কি এখন কম নড়ে? লিটন যখন আউট হন, মাহমুদউল্লাহ ২১ বলে ১১ রানে অপরাজিত—৫০–এর একটু বেশি স্ট্রাইক রেট। ইনিংসের এই শেষ ভাগে ২১ বল খেলে ফেলা মানে ভালোই ‘সেট’ কিন্তু রান বের করতে পারছিলেন না। পার্থক্যটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, রশিদ–মুজিব এবং নবীকে লিটন খেলেছেন পায়ের ব্যবহারে, জায়গা করে নিয়ে ব্যাট করায় কাভার, পয়েন্ট, মিডউইকেট এবং বোলারের দুই প্রান্ত ‘ভি’ দিয়ে রান পেয়েছেন।

রশিদ খান ও আফগানিস্তানের অন্য দুই স্পিনারের বিপক্ষে ভালো খেলেছেন লিটন। মাহমুদউল্লাহর রান বের করতে সমস্যা হয়েছে

কিন্তু মাহমুদউল্লাহর ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, একটা মুখস্থ কৌশল দিয়ে সবাইকে খেলছেন—নবীর অফ স্পিন, রশিদের লেগ স্পিন কিংবা মুজিবের আঙুলের ব্যবহারে যেকোনো স্পিনে মাহমুদউল্লাহ আগেই সামনে পা বাড়িয়ে রক্ষণাত্মক খেলার জন্য প্রস্তুত। একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লে পরে লেংথ বুঝে শরীর নড়াচড়া করা কঠিন।

মাহমুদউল্লাহর ৫৩ বলে ২৯ রানের ইনিংসটা তাই প্রশ্নবিদ্ধ। কোনো বাউন্ডারি নেই! এক–দুই বের করতে না পারলে মারতেও পারতেন। না হয় বোঝা গেল, দ্রুত উইকেট পড়ায় চাপে ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ ৪৩ ওভারে ১৭৬ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর? শরীফুল ও মোস্তাফিজকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ ঠিক কী ভেবে ওভারের মাঝপথে এক রান করে নিয়েছেন?

সহজ অঙ্ক—২০৩ ম্যাচ খেলে ফেলা একজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান এই ইনিংসে ৪৭ বল খেলার পর দুই টেল–এন্ডারকে যত কম সম্ভব স্ট্রাইক দেবেন, নিজে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করবেন, সে সামর্থ্যও তাঁর আছে। তবু?

৪৬তম ওভারের শেষ বলে মাহমুদউল্লাহ রান নিতে মরিয়া ছিলেন। তাহলে পরের ওভারে স্ট্রাইক মিলবে। লেগে বল ঠেলে মাহমুদউল্লাহ দৌড়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। দৌড়ের জন্য আগেই প্রস্তুত শরীফুলের রানআউট হতে ওটুকুই যথেষ্ট ছিল মুজিব উর রেহমানের কাছে। সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট।

লিটন যাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ নিজের কাজটা করতে পারেননি

যেটা রান নয়, সেটা তাঁর নেওয়ার চেষ্টায় আরেকজন রানআউট। আর শেষ উইকেটেও ওই রান নিতে গিয়ে রানআউট হওয়ার কোনো দরকার ছিল না। ৪৭তম ওভারে আরও এক বল বাকি ছিল। সরাসরি থ্রোয়ে যেহেতু আজ আফগানরা স্টাম্পে লাগাচ্ছেন, তাই ওভাবে রান নেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ, ভাবতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ এসবই শেখে নাকি!

৪০ ওভার থেকে পরের ৬.৫ ওভারের মধ্যে ৩৪ রানে ৪ উইকেট নেই। মাহমুদউল্লাহ এই ৫৩ বলের মধ্যে একাই খলেছেন ২১ বল, রান ১২। চাইলে হিসাবটা আরেকটু বাড়ানো যায়। লিটন আউট হওয়ার পর ১১ ওভার টিকেছে বাংলাদেশের ইনিংস। এই ৬৬ বলের মধ্যে ৩২ বল খেলে মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ ১৮, পড়েছে ৫ উইকেট।

ইনিংসের শেষ দিকে উইকেট পড়বে, তা মেনে নিয়েই কিন্তু ফিনিশারদের দ্রুত রান তুলতে হয়!