ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সময় কাটছে হোটেলকক্ষে। কোয়ারেন্টিন শেষ হলে ৪ মার্চ থেকে শুরু হবে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অনুশীলন। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল কাল এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেছেন তাঁর কোয়ারেন্টিন অভিজ্ঞতা এবং নিউজিল্যান্ড সফরের লক্ষ্যের কথা। এসেছে ২০১৯ সালে এই ক্রাইস্টচার্চেরই এক মসজিদে বন্দুক হামলার ভয়াল অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গও—
কঠিন সময় কাটছে অবশ্যই। কিন্তু যতটা কঠিন ভেবেছিলাম, অতটা নয়। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের যেহেতু এ রকম অভিজ্ঞতা আগে কখনো ছিল না, সে জন্যই হয়তো একটু আজব লাগছে ব্যাপারটা। প্রতিটি সফরেই এ রকম হলে একটু ঝামেলাই হয়ে যাবে। স্বাভাবিক পৃথিবীতে এভাবে থাকাটা কখনোই আদর্শ হতে পারে না। তবে ৫-৬ দিন তো হয়ে গেল। যতটা কঠিন ভেবেছিলাম, ততটা কঠিন হয়নি ব্যাপারটা।
কোয়ারেন্টিনের মধ্যে খেলার চিন্তা খুব বেশি আসছে না কারও মাথায়। সিরিজের এ রকম সময়ে সাধারণত সকালে আমাদের অনুশীলন থাকে, বিকেলে জিম থাকে। সব মিলিয়ে খেলার আবহের মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়। আমি নিশ্চিত, এই লম্বা কোয়ারেন্টিনের মধ্যে কিছু না কিছু সময়ে সবাই খেলা নিয়ে ভাবে। তবে পুরোপুরি সিরিজের আবহে আসতে অন্তত দুটো অনুশীলন সেশন লেগে যাবে।
আমাদের সঙ্গে এখানে কম্পিউটার অ্যানালিস্ট আছেন। আমরা যা-ই চাই, কোনো নির্দিষ্ট বোলার বা ব্যাটসম্যানের ফুটেজ বা বিশ্লেষণ, ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে দিলেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভিডিও পাঠিয়ে দেন। সেগুলো দেখেও কিছু সময় কাটে।
দুই দিন আগে হঠাৎ বাইরে গোলাগুলির মতো শব্দ শুনতে পেলাম। আমি তো ভয়ে শেষ! পরে দেখলাম আতশবাজি ফোটানো হচ্ছে। এখানে কোথাও কনসার্ট হচ্ছিল। সেটা উপলক্ষে আতশবাজি। কিছুক্ষণের জন্য ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম আসলে। তবে আমরা যেহেতু এখনো শহরে বের হইনি বা যে মসজিদে গতবার ঘটনাটা ঘটেছিল সেখানে যাইনি, সে জন্যও রকম কোনো অনুভূতি এখনো হচ্ছে না। বাইরে গেলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়, সেটা ভিন্ন ব্যাপার।
সব জায়গায় উদ্দেশ্য একই থাকে—ভালো করা। দেশে হোক, বিদেশে হোক, চাওয়া তো একটাই—দল ভালো করুক। নিজে ভালো খেলি, আমরা জিতি—এখানেও এসব লক্ষ্যেই খেলব। তবে হ্যাঁ, এখানে আমাদের কাজটা যে কঠিন হবে, সেটা সবাই বুঝতে পারছি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আমাদের অতীত রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। আমাদের সামনে সুযোগ আছে সেই অতীত বদলে দেওয়ার। আশা করি সে রকম পরিস্থিতি এলে আমরা সুযোগটা নিতে পারব।
দেখুন, তাদের ছাড়াও আমাদের দলটাকে এখন আর তরুণ বলা যাবে না। কারণ ২/১ জন ছাড়া সবাই-ই ৩/৪ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলেছে। সৌম্য, লিটনকে যদি আপনি এখনো তরুণ বলেন, তাহলে হবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এদেরও ৪/৫ বছর হয়ে গেছে। পূর্ণশক্তির দল কে না চায়! তবে যে দলটা আমার সঙ্গে আছে বা থাকে, তারাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি বলি দলে অমুক থাকলে ভালো হতো বা তমুক থাকা দরকার ছিল, তাহলে এই খেলোয়াড়দের অসম্মান করা হয়।
দুই-তিন বছর আগের চেয়ে আমাদের পেস বোলিংয়ে এখন কিছুটা হলেও উন্নতি এসেছে। মাশরাফি ভাইয়ের অভিজ্ঞতাটা বাড়তি সুবিধা ছিল, তবে অন্য দিকগুলো যদি দেখেন, পেস বোলাররা এখন ভালো করছে। প্রত্যাশা তো অবশ্যই থাকবে। দেশে যখন খেলি আমরা, স্পিনারদের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করি। দেশের বাইরে নিয়মিত জিততে হলে দেশে স্পিনাররা যে কাজটা করে, বিদেশে পেসারদের ঠিক সে কাজটাই করতে হবে।
উপমহাদেশে এখন যারা সফল হচ্ছে, তারা পেস আক্রমণের জন্যই সফল হচ্ছে। অবশ্য এটাও মাথায় রাখতে হবে, আমাদের পেসাররা খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি। তাসকিন তো অনেক দিন পর ফিরেছে। আমি চাইব পেসাররা ভালো করুক। তার মানে এই নয় যে ওদের চাপে ফেলে দেব।
নিউজিল্যান্ডে এখনো আমরা কোনো ওয়ানডে জিতিনি। এটাকে বদলাতে হলে শুধু বোলার বা ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সবাই মিলে চেষ্টা করতে হবে। অবশ্য বলাটা সব সময়ই সহজ। মাঠে গিয়ে কে কেমন দায়িত্ব পালন করল, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। খেলার দিন মাঠে কী হয়, সেটা এখনই বলতে পারব না। তবে মানসিকভাবে সবাই খুব ভালো অবস্থায় আছে। কারও আচরণে ওই জিনিসটা নেই, এমন জায়গায় আমরা খেলতে যাচ্ছি যেখানে গিয়ে আসলে কিছুই হবে না।
অধিনায়ক হলে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব থেকে কেন জানি নিজেরটাই বাদ পড়ে যায়। দলের চাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। আমার কাছে ব্যাপারটা এখন এ রকম, আমি যদি বিশেষ কিছু করে দলকে জেতাতে পারি তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। আর আমি কিছু না করলেও যদি দল জেতে, তাহলেও সেটা আমাদের জন্য বড় অর্জন হবে। আমরা নিউজিল্যান্ডে কখনো জিতিনি বলেই জিততে হবে, ব্যাপারটা তা নয়। এখানে ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্টেরও ব্যাপার আছে। নিউজিল্যান্ড থেকে পয়েন্ট নিয়ে যেতে পারাটা হবে দারুণ ব্যাপার। অধিনায়ক হিসেবে আমি অবশ্যই বলব, আমরা এখানে সিরিজ জিততেই এসেছি।