
মাঠে তাঁরা ছিলেন প্রবল প্রতিপক্ষ। কিন্তু মাঠের বাইরে রিচি বেনোর সঙ্গে বেশ ভালো বন্ধুত্বই ছিল স্যার গ্যারি সোবার্সের। এতটাই যে খেলা ছেড়ে দুজন অবসরে যাওয়ার পর দেখা-সাক্ষাৎ কমে গেলেও বন্ধুত্বের সুতাটা আলগা হয়নি একটুও। দুদিন আগে না-ফেরার দেশে চলে যাওয়া বেনোর মৃত্যুশোকে মুহ্যমান ক্রিকেট-বিশ্ব। স্বভাবতই সেই শোক অনেকের চেয়ে একটু বেশি স্পর্শ করেছে সোবার্সকে। বেনোর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তাই সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার খুলে দিয়েছেন তাঁর স্মৃতির পুরো ঝাঁপিটাই।
সিডনিতে ১৯৫২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টটা খেলেছিলেন রিচি বেনো। সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার সোবার্সের অভিষেক হয়েছিল তারও বছর দুয়েক পর। সব মিলিয়ে ৯ টেস্টে প্রতিপক্ষ ছিলেন তাঁরা একে অন্যের। যার প্রথমটি ছিল ১৯৫৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে, পোর্ট অব স্পেনে। বন্ধুর মৃত্যুসংবাদ শুনে একঝটকায় সোবার্স যেন ফিরে ফেলেন ছয় দশক আগের সেই সময়টাতে, ‘রিচির বিপক্ষে আমি প্রথম ১৯৫৫ সালে খেললেও তাকে নিয়ে আমার
মুগ্ধতা জন্মাল ১৯৬০-৬১ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়া সফরে। আমি বুঝতে পারলাম, কী দারুণ খেলোয়াড় আর অধিনায়ক সে।’
ওই সফরেই ব্রিসবেনে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম ‘টাই’ উপহার দেয় অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রোমাঞ্চকর সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছিলেন গ্যারি সোবার্স। চতুর্থ ইনিংসে তাড়া করতে নেমে দারুণ একটা হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক বেনো। সোবার্সের স্মৃতিতে ফিরে এসেছে সেই টেস্টের কথাও, ‘ওই সিরিজে যে মানের ক্রিকেট খেলা হয়েছে, সেটা আর কখনো হয়নি।’ ও রকম একটা রোমাঞ্চকর টেস্ট উপহার দেওয়ার জন্য সোবার্স মূল কৃতিত্বই দিয়েছেন দুই দলের দুই অধিনায়ক বেনো ও ফ্রাঙ্ক ওরেল এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের তখনকার চেয়ারম্যান ডন ব্র্যাডম্যানকে। কঠিন এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেই বেনোর সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল সোবার্সের, ‘তখন থেকেই রিচি আমার ভালো বন্ধু হয়ে উঠল। এরপর আমাদের যখন দেখা হতো আমরা আড্ডা দিতাম, গলফ খেলতাম। সে এমন একজন ছিল যাকে আপনি পছন্দ করবেনই।’
শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই নয়, প্রতিপক্ষ ছিলেন তাঁরা ক্লাব ক্রিকেটেও। ১৯৬০-৬১ সালের সেই সিরিজের পর দুই মৌসুম সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন সোবার্স। বেনো তখন খেলেন নিউ সাউথ ওয়েলসে। শেফিল্ড শিল্ডেও তাই অনেকবার একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছেন। বন্ধুত্বটা তাতে আরও গাঢ় হয়েছে এবং সেটা অটুট ছিল সব সময়ই। সোবার্সের ভাষায়, ‘তার সঙ্গে আমার সবই মধুর স্মৃতি। বছর দুয়েক আগেও ১৯৬০-৬১ সিরিজের আমরা ৫ জন খেলোয়াড় এবং স্যার এভারটন উইকস বারবাডোজে দুপুরের খাবার খেয়েছি রিচি আর তার স্ত্রী ড্যাফনির সঙ্গে। সেও আমাদের সঙ্গ উপভোগ করেছে। ওটাই ছিল তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা।’ ক্রিকইনফো।