ডাম্বুলায় আজ টি–টোয়েন্টি সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ের আগে গতকাল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন
ডাম্বুলায় আজ টি–টোয়েন্টি সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ের আগে গতকাল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন

বেশি রান ও ভালো বোলিং—এটাই বাংলাদেশের সিরিজ বাঁচানোর মন্ত্র

শ্রীলঙ্কার আরও একটি মাঠ, যেখানে ক্রিকেটের বাইরেও দেখার অনেক বড় জগৎ। রণগিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ এ মাঠেই টি–টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে শ্রীলঙ্কার টি–টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের এবং বাংলাদেশের সিরিজে টিকে থাকার লড়াই। গল, পাল্লেকেলের মতো ডাম্বুলার মাঠেও যদি কেউ ক্রিকেটে মন বসাতে না পারেন, আছে মনটাকে ঘুরিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ।

স্টেডিয়ামের ঠিক পাশেই মনোমুগ্ধকর ইব্বানকাটুয়া লেক। প্রেসবক্স থেকেই যা দেখা যায়, দেখা যায় দূরে মাথা তুলে রাখা ডাম্বুলা রক মাউন্টেনসহ আরও কিছু ছোটখাটো পাহাড়ও। পাহাড় আর লেকের মাঝে সবুজে ঘেরা স্টেডিয়ামটি নিয়ে বলার মতো অনেক কিছুই আছে। ২০০০ সালে অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা ৩০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার রণগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছিল মাত্র ১৬৭ দিনে। উইকেট সকালের দিকে কিছুটা পেসবান্ধব থাকলেও মূলত ব্যাটিং সহায়ক। আজ সন্ধ্যায় শুরু ম্যাচের উইকেট নিয়েও কাল শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিং কোচ উপুল চন্দনা বলেছেন, পাল্লেকেলের মতো ডাম্বুলার উইকেটও হবে ব্যাটিংবান্ধব। কাজেই শ্রীলঙ্কার সাবেক এই লেগ স্পিনার আজ বড় রানের ম্যাচই আশা করছেন।

ডাম্বুলার উইকেট ব্যাটিংবান্ধবই হবে বলে মনে করা হচ্ছে

ডাম্বুলায় বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি স্মৃতি বলতে কিছু নেই। মূলত ওয়ানডে ক্রিকেট আয়োজনের জন্য বানানো স্টেডিয়ামটিতে টেস্ট ম্যাচ হয়ইনি। বাংলাদেশের এই মাঠের অভিজ্ঞতা শুধুই ওয়ানডে খেলার। পাঁচ ম্যাচ খেলে তিনটিতেই হারায় সে অতীতও খুব একটা আনন্দদায়ক নয়। তার মধ্যেও একটু সুখস্মৃতি, ২০১৭ সালের মার্চে ডাম্বুলায় ফলাফল দেখা সর্বশেষ বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি জিতেছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ। সেটাও ৯০ রানের মোটামুটি বড় জয়। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি (১২৪) আর সাকিব আল হাসান (৭২) ও সাব্বির রহমানের (৫৪) ফিফটি মিলিয়ে বাংলাদেশের ৫ উইকেটে ৩২৪ রানের জবাবে ৪৫.১ ওভারে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়েছিল ২৩৪ রানে।

তামিম, সাকিব, সাব্বিরের কেউই নেই এখনকার দলে। তবে আছেন পাঁচ বছর আগের সে ম্যাচে ৫৬ রানে ৩ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান, ৪৩ রানে ২ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ ও ৪১ রানে ১ উইকেট নেওয়া তাসকিন আহমেদ। অবশ্য প্রতিটি ম্যাচই নতুন আবহ আর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। অতীত অভিজ্ঞতা হয়তো মাঝেমধ্যে কাজে লাগে, তবে ম্যাচ পরিস্থিতিতে সেটি খুব বড় প্রভাবক হয়ে ওঠে না।

শুধু লিটন নন, সিরিজে ফিরতে হলে সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হবে পুরো দলকেই। নইলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ডাম্বুলা স্টেডিয়ামেও ক্রিকেটটাকে মনে হবে বিস্বাদ। ডাম্বুলা মাউন্টেন রক থেকে পড়েই হোক কিংবা ইব্বানকাটুয়া লেকের স্বচ্ছ পানিতে ডুবে, শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের অন্তত একটা সিরিজ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে আজই।

এবারও যেমন ডাম্বুলায় বাংলাদেশ দল এসেছে সিরিজ বাঁচাতে। আজ হেরে গেলে ১৬ জুলাই কলম্বোর শেষ টি–টোয়েন্টিটি রূপ নেবে আনুষ্ঠানিকতায়, আর জিতলে কাল লিটন দাসের দল কলম্বোয় ফিরবে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে।

সেই স্বপ্ন কতটা বাস্তব হয়, তার অনেকটাই নির্ভর করবে ডাম্বুলার ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশের বোলাররা শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের কতটা বশে রাখতে পারেন, তার ওপর। লঙ্কান দুই ওপেনার পাতুম নিশাঙ্কা আর কুশল মেন্ডিস পুরো সিরিজেই বাংলাদেশকে ভুগিয়ে চলেছেন। আজ বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের চিন্তার বড় অংশ জুড়ে তাই থাকবেন শ্রীলঙ্কার এই দুই ব্যাটসম্যান।

বেশি রান তোলায় মনোযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ

কাল ডাম্বুলা স্টেডিয়ামে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিং কোচ উপুল চন্দনা আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন তাঁদের কথা, ‘পাল্লেকেলেতে দারুণ ম্যাচ গেছে আমাদের। কুশল মেন্ডিস ও পাতুম নিশাঙ্কা অসাধারণ খেলেছে। দুর্দান্ত শুরু দিয়েছে আমাদের। তিন সংস্করণেই ভালো ক্রিকেট খেলে এখন আমরা কালকের (আজ) ম্যাচটির দিকে তাকিয়ে।’

১–০তে পিছিয়ে থেকে আজ ভালো কিছুর আশা করা ছাড়া উপায় নেই বাংলাদেশেরও। সিরিজে টিকে থাকতে হলে সেই ভালো কিছুর একটাই অর্থ দাঁড়ায়—জয়। রাতে অনুশীলনের আগে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের মধ্যেও দেখা গেল সেই তাড়না, ‘গত ম্যাচে আমরা যথেষ্ট ভালো করিনি। কাজেই আমাদের পরিকল্পনাই হলো এ ম্যাচে ভালো কিছু করা।’ জয়ের লক্ষ্যে সেই ভালো কিছু কী, তা–ও ভেঙে বলেছেন কোচ, ‘আমাদের আরও বেশি রান করতে হবে এবং প্রথম ৬ ওভারে ভালো বোলিং করতে হবে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে আমাদের কিছু জায়গায় উন্নতি করতে হবে। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি।’

প্রথম টি–টোয়েন্টিতে জাকের আলী খেলতে পারেননি ঊরুর মাংসপেশিতে টান পড়ায়। আজ খেললেও ফিজিও, ডাক্তারদের মত; তাঁকে খেলানো যাবে শুধুই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান হিসেবে। কারণ, চোটের কারণে অন্য ফিল্ডিং পজিশনে তিনি হয়তো স্বস্তিতে থাকবেন না। কোচ অবশ্য জানিয়েছেন, রাতে অনুশীলনে জাকেরের অবস্থা দেখে তাঁকে খেলানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আজ সকালে।

ভালো ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলিংটাও ভালো করার তাড়ণা বাংলাদেশের

দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টির আগে অধিনায়ক লিটন দাসের ফর্মও একটা আলোচনার বিষয়। প্রথম টি–টোয়েন্টিতে এলবিডব্লু হওয়ার আগে করেছেন ১১ বলে ৬ রান, আত্মবিশ্বাসের অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল তাঁর সে ইনিংসে। সিমন্স তা মেনেও আস্থা রাখছেন অধিনায়কের ব্যাটে, ‘আমিও মনে করি, তার আত্মবিশ্বাস কিছুটা কম এখন। তবে আমরা জানি তার পক্ষে কী করা সম্ভব। তাকে সে অবস্থায় আনতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আশা করি, পরের ম্যাচেই সে তার সামর্থ্যের প্রমাণ দেবে।’

শুধু লিটন নন, সিরিজে ফিরতে হলে সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হবে পুরো দলকেই। নইলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ডাম্বুলা স্টেডিয়ামেও ক্রিকেটটাকে মনে হবে বিস্বাদ। ডাম্বুলা মাউন্টেন রক থেকে পড়েই হোক কিংবা ইব্বানকাটুয়া লেকের স্বচ্ছ পানিতে ডুবে, শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের অন্তত একটা সিরিজ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে আজই।