
কৌতূহলটা টের পাওয়া গেল সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢুকেই। ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে ততক্ষণে জমে গেছে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের আড্ডা। এ এখন কোথায়, সে কী এখনো জাতীয় দলের আশপাশে আছে—তাঁদের বেশির ভাগ জিজ্ঞাসাই এমন। হুট করে তাতে হাজির পেসার রুবেল হোসেন প্রসঙ্গও। পশ্চিমবঙ্গের এক ভারতীয় সাংবাদিক বাংলাতেই করলেন প্রশ্নটা, ‘ও এখন কোথায়?’
বাইকের ব্যবসায় থিতু হওয়া এই ক্রিকেটারকে নিয়ে কৌতূহলের কারণটাও একটু পরই বললেন তিনি—‘আরে, ওর সেই বলটা দিয়েই তো সবকিছুর শুরু হয়েছিল!’ প্রায় বিস্মৃত রুবেল ফিরে এলেন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের উত্তাপ ছড়ানোর কথা বোঝাতেই।
২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে রোহিত শর্মাকে ক্যাচ বানিয়েও রুবেল উইকেট পাননি আম্পায়ার উচ্চতার কারণে নো বল ডাকায়। বলটা আসলেই নো ছিল কি না, তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। বাংলাদেশ–ভারত ম্যাচে এরপর ‘উত্তাপ’ শব্দটা সব সময়ই ছিল। তবে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে মাঠের লড়াইয়ে সেই উত্তাপ কখনোই ছিল না।
আজ এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে দুই দল মুখোমুখি হওয়ার আগপর্যন্ত যে ১৭ ম্যাচ খেলেছে তাতে বাংলাদেশের জয় একটিই। ২০১৯ সালে দিল্লিতে পাওয়া সেই জয়ের সংখ্যাটা দুই হওয়ার সম্ভাবনা এবারও কাগজে-কলমে কমই। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচেই জেতা ভারত সুপার ফোরে তাঁদের প্রথম ম্যাচে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের দখলে আছে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর জায়গাটাও।
কিন্তু তাতে কী—ম্যাচের আগে বাংলাদেশের ভাবনা সহজ করে বলতে গেলে এমনই। দলের প্রতিনিধি হয়ে গত পরশু ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে হাজির হওয়া ফিল সিমন্সই যেমন বলেছেন, ‘সব দলেরই ভারতকে হারানোর সক্ষমতা আছে। খেলাটা হয় একটা নির্দিষ্ট দিনে। ভারত আগে কী করেছে, সেটা তখন কোনো কাজে আসে না।’
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ সুখস্মৃতিটা যদিও এশিয়া কাপেই। ২০২৩ সালে কলম্বোয় ওয়ানডে সংস্করণের টুর্নামেন্টে তারা হারিয়েছিল ভারতকে। তবে এরপর তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৯ ম্যাচে তাদের আর জয়ের দেখা নেই। এবার তা বদলে ফেলতে বাংলাদেশের জন্য বড় অস্ত্র হতে পারেন অধিনায়ক লিটন দাস।
ভারতের বিপক্ষে তাঁর রেকর্ডটা বেশ ভালো—১২ ম্যাচে ২৩০ রান করেছেন ১৪৯.৩৫ স্ট্রাইক রেটে। তা ছাড়া এখন তিনি শুধু ব্যাটসম্যানই নন, অধিনায়কত্বের ভার হিসেবে তাঁকে বাকিদেরও সামলে রাখতে হয়। তবে গত পরশু অনুশীলনে চোট পাওয়ার তাঁর আজ খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি এখনো।
কাল রাতে তাঁর সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য বলছিলেন, ‘লিটন এখনো পর্যবেক্ষণে আছে। ম্যাচের যেহেতু আরও ২৪ ঘণ্টা বাকি, এখনই কিছু বলে দেওয়া কঠিন। কাল (আজ) সকালে আবার দেখা হবে কী অবস্থা, খেলতে পারবে কি না।’ লিটনের জন্য যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে, তা বোধ হয় না বললেও চলছে।
কাল ও পরশু টানা দুই ম্যাচের ধকল সামলে নিতে কাল সারা দিন টিম হোটেলেই কাটিয়েছে বাংলাদেশ দল। তবে ঐচ্ছিক অনুশীলনের কথা জানানো ভারতের যশপ্রীত বুমরা আর হার্দিক পান্ডিয়া ছাড়া এসেছেন সবাই-ই। এতে অবশ্য খুব বেশি স্বস্তির কিছু নেই—বুমরাকে কাল বিশ্রাম দেওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য বলে জানিয়েছেন ভারতের সহকারী কোচ রায়ান টেন ডেসকাট। এশিয়া কাপের পয়েন্ট টেবিল বিবেচনায় নিয়ে শেষ ম্যাচেই তাঁর সেটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
নেদারল্যান্ডসের সাবেক ক্রিকেটার কাল জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিয়ে তাঁদের ভাবনাও, ‘আমাদের মন্ত্র হচ্ছে—সবাইকে সম্মান করো, কিন্তু কাউকে ভয় পেয়ো না। ফোকাসটা থাকবে আমরা কী অর্জন করতে চাই সেটার দিকেই। আমাদের সেরাটা খেলা।’
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে নতুন ধাঁচের ক্রিকেট খেলছে, সে খোঁজ রাখেন টেন ডেসকাটও। তাঁর কণ্ঠে তাই সব প্রতিপক্ষের জন্যই সম্মান। বাংলাদেশ কোচের কণ্ঠে বিশ্বাস—তাঁর দল হারিয়ে দিতে পারবে ভারতকে। দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি দলের মুখোমুখি হওয়া মানে যে অন্তত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হলেও লড়াই, তাই–বা কম কী!