
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার জেরে এ মাসের শুরুর দিকে ভারত-পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি আক্রমণে জড়িয়ে পড়েছিল। ওই হামলার সময় সবচেয়ে আতঙ্কে ছিলেন দুই দেশের সীমান্তের কাছাকাছি থাকা মানুষ।
ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার মঈন আলী জানিয়েছেন, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরের’ সময় পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে আটকা পড়েছিলেন তাঁর মা–বাবা। দেশে বসে এক পডকাস্টে ভয়াবহ সে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন মঈন।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের মিসাইল হামলার সময় স্ত্রী-সন্তানসহ ভারতে ছিলেন মঈন। আইপিএল খেলছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। ভারত-পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলার এক পর্যায়ে পরিবারসহ ইংল্যান্ডে ফিরে যান তিনি। যুদ্ধবিরতির পর আবার আইপিএল শুরু হলেও মঈন আর ভারতে যাননি।
‘বিয়ার্ড বিফোর উইকেট’ নামে একটি পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মঈন জানান, পাকিস্তান–অধ্যুষিত কাশ্মীরের যে স্থানে ভারতীয় সামরিক বাহিনী হামলা চালিয়েছিল, সেখান থেকে তাঁর মা–বাবা খুব বেশি দূরে ছিলেন না, ‘আমার মা–বাবা তখন কাশ্মীরে ছিলেন…পাকিস্তানে, হামলার জায়গা থেকে ঘণ্টাখানেকের পথ হবে। হয়তো একটু বেশি। পুরো ব্যাপারটি অদ্ভুত ছিল। তাঁরা সেদিনই শেষ ফ্লাইটে উঠতে পেরেছিলেন। তাঁরা (কাশ্মীর থেকে) বের হতে পেরেছেন জানার পর স্বস্তি পেয়েছিলাম। তবে সময়টা ভয়ংকর ছিল।’
মঈনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে হলেও তিনি মূলত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। তাঁর দাদা ছিলেন আজাদ কাশ্মীরের মিরপুর এলাকার বাসিন্দা। পরবর্তী সময়ে তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান এবং এক ব্রিটিশ নারীকে বিয়ে করেন।
মঈন বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের সিলেটের মেয়ে ফিরোজা হোসেনকে। তাঁদের ছেলের নাম আবু বকর ও মেয়ের নাম হাদিয়া। স্ত্রী ফিরোজা এবং দুই সন্তান আবু বকর ও হাদিয়াকে নিয়েই আইপিএল খেলতে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে গিয়েছিলেন মঈন। আর তাঁর মা–বাবা গিয়েছিলেন পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরে।
সাক্ষাৎকারে ৩৭ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার আতঙ্কের কথা তুলে ধরে বলেছেন এভাবে, ‘পুরোটা সময় অস্থিরতা বিরাজ করছিল…কাশ্মীরে হামলা হলো। তারপর দ্রুতই যেন সবকিছু উত্তপ্ত হয়ে উঠল। হঠাৎ করেই মনে হলো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যদিও আমি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনিনি। তবে সবার আগে পরিবারকে নিরাপদে বের করে আনার চিন্তা মাথায় ছিল।’
রাজনীতির বলি হতে পারেন—এমন শঙ্কাও ভর করেছিল মঈনের মনে, ‘একে তো আমি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত, তার ওপর সংঘাতের সময় ছিলাম ভারতে। এমন এক পরিস্থিতিতে পড়ে যাওয়া যেন রাজনীতির বলি হওয়া। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, দুই পাশের মানুষ একই। দুই পাশেই ভালো মানুষ বাস করে। তাদের খাবারও অসাধারণ। শুধু সীমান্ত তাদের বিভক্ত করেছে।’
নিজেকে একজন ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসী’ দাবি করে মঈন বলেন, বড় কোনো বৈশ্বিক ঘটনাকে ঢাকার জন্য হয়তো এ সংঘাত লাগানো হয়েছে, ‘আমার মনে হয়, এটা আসলে যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীনের অস্ত্র রাজনীতির অংশ…অনেক তত্ত্ব আছে। আমি মনে করি, ইসরায়েল ও গাজার (ফিলিস্তিন) আসল ঘটনা থেকে দৃষ্টি সরাতে এই সংঘাতের (কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা) মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে।’
মঈন আরও জানান, আইপিএল চলাকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাই টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ার আগেই ভারত ছেড়েছিলেন, ‘আসলে টুর্নামেন্ট বন্ধ হওয়ার আগেই আমি বের হয়ে যাই। তখন আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। শুধু একটা বিষয় ভাবছিলাম, বের হওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা যেন থাকে।’
অজানা পরিস্থিতির কারণে মানসিক চাপেও ভুগছিলেন মঈন, ‘কে কী বলছিল, বোঝা যাচ্ছিল না। কেউ বলছিল যুদ্ধ হবে না, সব ঠিক থাকবে। আবার কেউ ভাবছিল পাল্টা আক্রমণ অবধারিত। প্রচুর মিথ্যা ছড়াচ্ছিল, সংবাদমাধ্যমও অনেক ভুল তথ্য দিচ্ছিল। আসলে কী যে ঘটছিল, কেউই জানত না। এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ছিল।’
কলকাতা নাইট রাইডার্স এরই মধ্যে আইপিএল প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচ খেলে মাত্র ৫টিতে জিতেছে। তবে মঈনের কলকাতার একাদশে জায়গা হয়েছে ছয় ম্যাচে, যার চারটিতেই জিতেছে তাঁর দল। ছয় ম্যাচের মধ্যে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র দুটিতে। একটিতে ৫, অন্যটিতে ০ রানে আউট হয়েছেন। তবে বল হাতে ভালোই করেছেন। নিয়েছেন ৬ উইকেট।
দুঃসময়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যানেজমেন্ট পাশে দাঁড়ানোয় তাদের প্রশংসাও করেছেন মঈন, ‘ওরা আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে। বলেছে, “তুমি যা চাও, যেটা দরকার, আমরা যতটা সম্ভব, পূরণ করার চেষ্টা করব।” ওরা সত্যিই দারুণ ছিল।’