মেহেদী হাসান মিরাজ নিশ্চিত ছিলেন। সে কারণেই বারবার বলেছেন—পছন্দের বোলারের নামটা শুনলে চমকে উঠবেন। সবাইকে প্রস্তুত করার পরও তিনি যে নামটা বলেছেন তাতে বোধ হয় চমক একটুও কমেনি।
সিটি গ্রুপ–প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে বর্ষসেরা রানারআপ হওয়ার পর উৎপল শুভ্রর সঙ্গে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই পছন্দের বোলারের নাম বলেছেন মিরাজ। আড্ডার ঢঙে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে মিরাজের সঙ্গী ছিলেন তাসকিন আহমেদও। তাঁর পছন্দের বোলারের নামটাও জানা গেছে সেদিন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মিরাজের উইকেট ৩৩৬টি। বয়স মাত্র ২৭, ক্যারিয়ার শেষে সংখ্যাটা তাই ৭০০-৮০০–ও হতে পারে। আর সেটা যদি মিরাজ পারেন, পরিসংখ্যানের বিচারে তাঁকে সর্বকালের অন্যতম সেরা অফ স্পিনারই বলতে হবে। যাঁর মধ্যে অন্যতম সেরা হওয়ার যোগ্যতা আছে, সেই মিরাজের আদর্শ কে? মুত্তিয়া মুরালিধরন? নাকি এখনো খেলা নাথান লায়ন, রবিচন্দ্রন অশ্বিন? সাক্ষাৎকারে উৎপল শুভ্রর করা মিরাজের পছন্দের অফ স্পিনারের প্রশ্নে হয়তো এসব নামই আপনার মাথায় এসেছিল।
মিরাজ সব সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে বললেন একজন রমেশ পাওয়ারের কথা। ভারতের এই স্পিনারের আন্তর্জাতিক উইকেট মাত্র ৪০টি, মিরাজের চেয়ে প্রায় ৩০০টি কম। প্রশ্নটি ফেবারিট অফ স্পিনার নিয়ে করলেও মিরাজ স্পষ্ট করেই বলেছেন, ডানহাতি অফ স্পিনার রমেশ পাওয়ারই তাঁর পছন্দের বোলার।
কথাটা মিরাজের মুখেই শুনুন, ‘আমি যার কথা বলব, হয়তো অনেকে মনে মনে বলবে, এটা কীভাবে সম্ভব! সবাই অবাক হয়ে যাবেন। আমার পছন্দের বোলার রমেশ পাওয়ার।’
একটা মোটা মানুষ, চশমা পরে কী সুন্দর অ্যাকশনে বল করে, তাতে বড় টার্নও করে, ওর বোলিং দেখে আমার ভালো লাগল। তখনই সিদ্ধান্ত নেই ওর অ্যাকশনেই আমি বোলিং করব।রমেশ পাওয়ারকে নিয়ে মিরাজ
কেন রমেশ পাওয়ার সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মিরাজ, ‘২০০৬ সালে আমি যখন শুরু করি, তখন আমি সাইড আর্ম অ্যাকশনে বোলিং করতাম। একাডেমিতে অনুশীলন করি, তখন সাইড আর্ম অ্যাকশনে বোলিং করতে অনেক কষ্ট হতো। তখন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ চলছিল, ২০০৭ বিশ্বকাপের পরপর। ওই সময় ওর খেলা দেখলাম। একটা মোটা মানুষ, চশমা পরে কী সুন্দর অ্যাকশনে বল করে, তাতে বড় টার্নও করে, ওর বোলিং দেখে আমার ভালো লাগল। তখনই সিদ্ধান্ত নেই ওর অ্যাকশনেই আমি বোলিং করব।’ সেই থেকে রমেশ পাওয়ার হয়ে গেলেন মিরাজের প্রিয় বোলার!
তাসকিনের আদর্শ বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এ কথা তিনি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বলে এসেছেন। আর কোন পেসার তাসকিনের মনে ধরেছে। নিজের পছন্দের বোলার নিয়ে তাসকিন বলেছেন, ‘আমার পছন্দ মরনে মরকেল। আমি ওর বাউন্সের বড় ভক্ত, লেংথ বল এত সুন্দর ক্যারি করত। আর দেশে ছোট থেকেই আমরা সবাই মাশরাফি ভাইকেও আইডল মনে করতাম। এখনো তিনি আমাদের একজন কিংবদন্তি। এই দুজনকেই আমার সব সময় ভালো লাগে।’
তাসকিনের চোখে দুনিয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাটসম্যান ছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্স অবসর নিয়েছেন বছর চারেক আগে। এত দিনে তাসকিনের চোখে ডি ভিলিয়ার্সকে কেউ কি ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন? তাসকিন কী বলছেন, ‘ডি ভিলিয়ার্সকে কেউ ছাড়াতে পারেনি। ও এমন আনঅর্থডক্স কিছু শট খেলে, লেংথ বল শেষ মুহূর্তে ল্যাপ খেলে ছক্কা মেরে দেয়। হোম কন্ডিশনে ভারতে সূর্যকুমার যাদব যেকোনো বোলারের সেরা বলটাতে যখন ছক্কা মারে, তখন বোলার একটু কনফিউজড হয়ে যায়।’
উদাহরণ দিতে গত বছর ভারতের হায়দরাবাদে খেলা সেই ম্যাচটির কথা তুলে ধরেন তাসকিন, ‘হায়দরাবাদে আমি একটা ম্যাচ খেলছিলাম যেদিন ভারত ২৯৭ রান করে, ওই ম্যাচে মিরাজ দলে ছিল না। সেদিন ভালো বল খারাপ বল যেমনে মেরেছে, মনে হয়েছে ভিডিও গেমস। ইয়র্কারও একটু এদিক–সেদিক হলে চার হয়ে যাচ্ছিল। আমার লাইফে এমন উইকেটে আমি কোনো দিন বল করিনি। সেদিন বোলিং ও ফিল্ডিং করে আমার ঘাড় ব্যথা হয়ে গিয়েছিল। অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ দেখেছি, শুধু চার আর ছয়।’
সেই ম্যাচে একাদশের বাইরে ছিলেন মিরাজ। এমন বেধড়ক পিটুনি দেখে ম্যাচ শেষে তাঁকে না খেলানোর জন্য অধিনায়ক নাজমুলকে নাকি ধন্যবাদ দেন মিরাজ। মিরাজ নাকি সেদিন বলেছেন, ‘দোস্ত (নাজমুল) খুবই ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমাকে খেলানো হয়নি।’
কোন ব্যাটসম্যান সবচেয়ে ভয়ংকর, এই প্রশ্নে মিরাজ বলেছেন এক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানের কথা। না, ক্রিস গেইল নয়, তাঁর মতোই আরেক ওপেনার এভিন লুইস। তিনি বলেছেন, ‘এভিন লুইসকে বোলিং করা কঠিন মনে হয়। ও এমনভাবে দাঁড়ায়, আমি লেংথটা পিক করতে পারি না। গায়ে শক্তি তো ভাই...কোন জায়গায় করব...।’
মিরাজ আরও যোগ করেছেন, ‘গেইলকে আমি অনেক আউট করেছি। ওকে ভয় পাইতাম না। ওকে দেখে মনে হতো ওকে আউট করে দেব।’