বাংলাদেশ দলের উইকেট উদ্‌যাপন
বাংলাদেশ দলের উইকেট উদ্‌যাপন

সিলেট টেস্ট

দিন শেষে ক্যাচ ছাড়ার আফসোস

নাহিদ রানা কি নিজেকে দুর্ভাগা ভাবছেন? ভাবতেই পারেন। গতির জন্যই বিখ্যাত হয়ে গেছেন। গতির সঙ্গে ধারাবাহিকতার সংমিশ্রণে তিনি বারবার সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান ঠিকই, কিন্তু ক্যাচগুলো ফিল্ডাররা ধরতে পারলে তো!

গল্পটা যে শুধু তাঁর, তা নয়। বাংলাদেশের বোলারদের প্রায় সবারই মুখোমুখি হতে হয় এমন অভিজ্ঞতার। আফসোসটা তাই ব্যক্তিগত তো বটেই, দলের জন্যও হয়ে ওঠে মাথাব্যথার কারণ।

আজ নাহিদ রানার পরপর দুই ওভারে দুই ক্যাচ তোলার পরও বেঁচে যাওয়া পল স্টার্লিং ফিফটি করেছেন। ফিফটি পেয়েছেন চতুর্থ ওভারে ক্যাচ তুলেও বাঁচা অভিষিক্ত কেইড কারমাইকেলও। সবই অবশ্য আজ প্রথম সেশনের কথা।  

একাধিক ক্যাচ মিস না হলে আরও বেশি উইকেট পেতেন নাহিদ রানা

টেস্ট ম্যাচ প্রতি সেশনেই যে রং বদলায়, তা তো আর নতুন কোনো কথা নয়। সিলেটে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড টেস্টের প্রথম দিনেও সেটির ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশের তিন ক্যাচ মিসের সৌজন্যে সকালের সেশনে ১ উইকেট হারিয়ে ৯৪ রান তুলে ফেলা আইরিশরা দিন শেষ করেছে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৭০ রান করে।

উইকেট ব্যাট-বলের সমান সুবিধা সিলেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য যে থাকবে, তা অনুমান করা গিয়েছিল আগেই। তবুও ব্যাটিংয়ের জন্য প্রথম দিনটাই হওয়ার কথা সবচেয়ে ভালো। আগে ব্যাট করতে নামা আয়ারল্যান্ডকে তাই ধাক্কাটা দিতে হতো বল হাতে শুরু করা দুই পেসারকেই।

তা তাঁরা করেনও। হাসান মাহমুদ তো প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন অ্যান্ড্রু বলবার্নিকে। কিন্তু হাসান মাহমুদ আর নাহিদের টানা তিন ওভারে তিন ক্যাচ ছেড়ে চাপটা আর বাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। যাঁদের ক্যাচ মিস হয়েছে, তাঁদের একজন হাসান মাহমুদ দিন শেষে এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।

ম্যাচের প্রথম ওভারেই আউট হন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবার্নি

এমনিতে মৃদুভাষী এই পেসার কথা বলেন খুব মেপে মেপে। শুরুতে ক্যাচ মিসের আফসোস আছে কি না—এমন প্রশ্নটা এড়িয়েই যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কথার ফাঁকে ফাঁকে একবার বলেই ফেলেন, ‘ইতিবাচক হিসেবে নেই যে অন্তত সুযোগ তো তৈরি হয়েছে। ফিল্ডাররা আরও তৈরি হয়ে ওঠে পরেরটার জন্য। কিন্তু ক্যাচ ছাড়লে কি আর ভালো লাগে!’

দুবার জীবন পাওয়া স্টার্লিং ৬১ বলেই ৫০ ছুঁয়ে ফেলেন। দ্বিতীয় সেশনের শুরু থেকেই বাংলাদেশও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। নাহিদ রানার সৌজন্যেই হয় তা। তাঁর বলে ৬০ রান করে স্টার্লিং ক্যাচ তুলে দেন সাদমান ইসলামের হাতে।

মিরাজের সঙ্গে মিলে পরের কাজটা করেন টেস্ট অভিষিক্ত হাসান মুরাদ। আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন বাদে সবাই ডানহাতি। বাঁহাতি মুরাদ কার্যকরী হবেন ভেবেই তাঁকে দলে নেওয়া, প্রথম দিন ২ উইকেট নিয়ে সেটি করেও দেখিয়েছেন। থিঁতু হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান কার্টিস ক্যাম্ফার (৪৪) ও লোরকান টাকারকে (৪১) ফিরিয়েছেন মুরাদ।

টেস্ট অভিষেকের প্রথম দিন ২ উইকেট পেয়েছেন হাসান মুরাদ

আয়ারল্যান্ডের পাঁচ ব্যাটসম্যান ৩০ পেরিয়েও কেউই ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি। সেই আফসোস ছিল দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা আইরিশ ব্যাটিং কোচ গ্যারি উইলসনের কণ্ঠেও।  

মাঝের সেশনে দুই উইকেট নিয়ে তাঁদের ধাক্কাটা দিয়েছেন মিরাজও। তবুও যে বাংলাদেশ স্বস্তি নিয়ে দিনটা শেষ করতে পেরেছে, তা বলার আর সুযোগ খুব একটা নেই। একটা সময় মনে হচ্ছিল আড়াই শর আগেই হয়তো আয়ারল্যান্ডকে থামিয়ে দেওয়া যাবে।

জর্ডান নিল আর বেরি ম্যাকার্থির অষ্টম উইকেটে ৪৮ রানের জুটিতে তা আর হয়নি। উল্টো তাঁদের ব্যাটিংয়ের সময় ৩০০ পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাটাই আবার জেগে উঠেছিল। তবুও দিনের শেষ বলে তাইজুল ইসলাম জুটি ভাঙতে পেরেছেন বলেই দিনটা আয়ারল্যান্ডের হয়ে যায়নি।

তবুও যে দিন কেটেছে, তা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা বলে গেছেন আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ গ্যারি উইলসন। তাঁর এখন চাওয়া রানটা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নিয়ে বোলিংয়েও বাংলাদেশকে আটকে রাখা। বাংলাদেশের হাসান মাহমুদও মনে করেন, উইকেটের যে ধরন তাতে খুব বেশি রান হয়ে যায়নি। এখন তাঁদের ভাবনায় দ্রুত আয়ারল্যান্ডকে অলআউট করে ব্যাটিংয়ে একটা ভালো শুরু করা।

সেই কাজটা দ্বিতীয় দিনে খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা নয় ব্যাটসম্যানদের জন্যও!  

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৭০/৮

(স্টার্লিং ৬০, কারমাইকেল ৫৯, ক্যাম্ফার ৪৪, টাকার ৪১, নিল ৩০, ম্যাকার্থি ২১*; মিরাজ ৩/৫০, মুরাদ ২/৪৭, হাসান মাহমুদ ১/৩২, রানা ১/৬৫, তাইজুল ১/৭২)।

* ১ম দিন শেষে।