
এক নয়, দুই নয়, তিন নয়। ১০, ২০, ৩০ নয়। গুনে গুনে ৮৩টি ইনিংস! কী দীর্ঘ অপেক্ষাই না করতে হয়েছে বাবর আজমকে। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান হলো আজ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৮৩ ইনিংস অপেক্ষার পর সেঞ্চুরি পেলেন বাবর। ঠিক যেন বিরাট কোহলির গল্প! ভারতের ব্যাটসম্যানও তাঁর ক্যারিয়ারে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত খরা কাটিয়ে ৮৩ ইনিংস পর সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে।
বাবরের সেঞ্চুরি খরা শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট থেকে। এর আগের দিন তিনি সর্বশেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন নেপালের বিপক্ষে। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচটিতে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান করেছিলেন ১৫১ রান। আজ দীর্ঘ খরা কাটিয়ে তাঁর সেঞ্চুরি পাওয়ার দিনে রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডিতেই প্রথম ওয়ানডেতেও জিতেছিল তারা। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০তে এগিয়ে থেকে জয় নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকেরা।
৮০৭ দিন অপেক্ষার পর বাবরের সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি আসে ইনিংসের ৪৮তম ওভারের প্রথম বলটিতে। প্রমোদ মাধুশানের করা বলটি মিডউইকেটের দিকে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। এরপর মাঠে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ান তাঁকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেন। রাওয়ালপিন্ডির গ্যালারি আর পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমেও এ সময় বয়ে যায় আনন্দের বন্যা।
রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি হবে কি না, তা নিয়েই দেখা দিয়েছিল অনিশ্চয়তা। ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলার পর শ্রীলঙ্কার বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার দেশে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির শ্রীলঙ্কার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাঁর অনুরোধে সফর চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় লঙ্কান বোর্ড। সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে একদিন পিছিয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডে হয়েছে আজ।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা দল ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে তুলতে পারে ২৮৮ রান। সেই রান ১০ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। এর আগে শ্রীলঙ্কার পক্ষে ৬৩ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন জানিত লিয়ানাগে। কামিন্দু মেন্ডিস ৩৮ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেছেন। পাকিস্তানের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানকে ভালো শুরু এনে দেন ফখর জামান ও সাইম আইয়ুব। উদ্বোধনী জুটিতে ৯.৪ ওভারে ৭৭ রান তোলেন তারা। আইয়ুব ৩৩ রানে আউট হলে ভাঙে জুটি। এরপর ফখর আউট হন ৯৩ বলে ৭৮ রান করে। এরপর আর কোনো উইকেট পড়তে না দিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০তম সেঞ্চুরি করা বাবর অপরাজিত থাকেন ১০২ রানে। ম্যাচ শেষে রিজওয়ানের রান ছিল অপরাজিত ৫১।
আজকের সেঞ্চুরিতে বাবর পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডে ছুঁয়ে ফেলেছেন সাবেক ওপেনার সাঈদ আনোয়ারকে। তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাবরের সেঞ্চুরি ৩২টি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের চতুর্থ সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি ইউনিস খানের, ৪১টি। এরপর আছেন মোহাম্মদ ইউসুফ (৩৯) ও ইনজামাম-উল-হক (৩৫)।