
বয়স ২৫ বছরের মধ্যে ও নিজেদের অভিষেক এশিয়া কাপে ব্যাটিং তাণ্ডব চালাতে পারেন, এমন ৫ ব্যাটসম্যানকে নিয়ে এই আয়োজন।
বাকি মাত্র ১ দিন। আগামীকাল সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ১৭তম আসর। টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এই টুর্নামেন্ট দিয়ে অনেকেরই এশিয়া কাপে অভিষেক হতে চলেছে। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে সবাই নিজেকে প্রমাণ করতে মুখিয়ে আছেন। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে খেলতে নেমে জ্বলে উঠতে পারেন, এমন উঠতি তারকাও আছেন কয়েকজন। বয়স ২৫ বছরের মধ্যে ও অভিষেক এশিয়া কাপে ব্যাটিং তাণ্ডব চালাতে পারেন, এমন ৫ ব্যাটসম্যানকে নিয়ে এই আয়োজন—
হারারাতে ২০২২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক পারভেজ হোসেনের। তবে ক্রিকেট বিশ্ব পারভেজকে চিনেছে এ বছর মে মাসে শারজায় আরব আমিরাতে বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর। সেই আমিরাতেই নিজের প্রথম এশিয়া কাপ খেলতে গেছেন ২৩ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
এই মুহূর্তে পারভেজ দারুণ ছন্দেও আছেন। এ বছর ১২ ইনিংসে ২২ ছক্কা মেরেছেন পারভেজ, যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রান করেছেন ১৫৩.৮০ স্ট্রাইক রেটে, যা এ বছর কমপক্ষে ৩০ বল খেলা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান—অভিষেক শর্মার ব্যাটিং-সামর্থ্য বোঝানোর জন্য এই তথ্যই যথেষ্ট। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যে নিজেকে শীর্ষে নিয়ে গেছেন ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
ভারতের হয়ে এখন পর্যন্ত ১৬ বার ব্যাটিংয়ে নেমে দুটি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরিতে করেছেন ৫৩৫ রান, স্ট্রাইক রেট ১৯৩.৮৫! ছক্কা মেরেছেন ৪১টি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর অভিষেকের পর থেকে টেস্ট খেলুড়ে দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এর চেয়ে বেশি ছক্কা আর কারও নেই।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উপহার দেন ১৩৫ রানের ইনিংস, যা টি-টোয়েন্টিতে কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম দুই ম্যাচেই শূন্য রানে আউট। তবে তৃতীয় ম্যাচেই পাকিস্তানের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি (৪৪ বলে) করে হাসান নেওয়াজ বুঝিয়ে দেন, তাঁকে সুযোগ দিয়ে নির্বাচকেরা ভুল করেননি।
যদিও এরপর খুব একটা ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি নেওয়াজ। পাকিস্তানের হয়ে এখন পর্যন্ত ১৯ ম্যাচ খেলে ৯ বারই আউট হয়েছেন এক অঙ্কের ঘরে, ডাক মেরেছেন ৫ বার।
কিন্তু ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের বিশেষত্ব অন্য জায়গায়। খুব দ্রুত রান তুলতে পারেন, ছক্কা মারার ক্ষেত্রেও পটু। ১৬৭.৪৪ স্ট্রাইক রেট সেই কথায় বলছে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর চারের (২১টি) চেয়ে ছক্কার (৩৪টি) সংখ্যাই বেশি। এ বছর টেস্ট খেলুড়ে দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ছক্কাই সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর পা পড়েছে প্রায় আড়াই বছর আগে। তবে বিশ্বে ক্রিকেটে তিনি সাড়া ফেলে দেন গত বছরের অক্টোবরে ইমার্জিং এশিয়া কাপে। আফগানিস্তান ‘এ’ দলকে চ্যাম্পিয়ন করার পথে ৫ ইনিংসে ১২২.৬৬ গড়ে করেন ৩৬৮ রান। সব কটিতেই করেন ফিফটি পেরোনো স্কোর (৮৩, ৯৫*, ৫২, ৮৩, ৫৫*)।
সেদিকউল্লাহ আতালকে এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২৪ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এখন আফগানিস্তান জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ। গত ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে উপহার দেন ৮৫ রানের ইনিংস। শারজায় সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ছন্দটা ধরে রেখেছেন। ৪ ম্যাচ খেলে ফিফটি করেছেন দুটি। এবার বড়দের এশিয়া কাপে নিজেকে প্রমাণের পালা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেকও হয়েছে আড়াই বছর আগে। কিন্তু সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়া ও ভারত সফরে তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলে করতে পারেন মাত্র ১৫ রান। এরপর কামিল মিশারাকে শ্রীলঙ্কা দল থেকে বাদ দেওয়া হয়।
সেই মিশারা লঙ্কান দলে ফেরেন জিম্বাবুয়ে সফরে সদস্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে। ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান এবারের সুযোগটা দুই হাতে লুফে নেন। দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কা মাত্র ৮০ রানে অলআউট হলেও মিশারা করেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২০ রান। আর শেষ ম্যাচে তাঁর ৪৩ বলে ৭৩ রানের অপরাজিত ইনিংসের সুবাদে জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে সিরিজ জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা। এই আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করেই এশিয়া কাপে খেলতে নামছেন মিশারা।
এবারের এশিয়া কাপের অন্য তিন দল স্বাগতিক আরব আমিরাত, ওমান ও হংকং। এদের মধ্যে ওমান এবারই প্রথম এশিয়া কাপ খেলতে যাচ্ছে। এই দলে ২৫ বছরের কম বয়সী কোনো ব্যাটসম্যান নেই। হংকং দলেও তরুণ কোনো ব্যাটসম্যান নেই, যিনি এবারই প্রথম এশিয়া কাপে খেলতে যাচ্ছেন।
তবে আরব আমিরাতের আলিশান শরাফুর দিকে ক্রিকেটপ্রেমীরা চোখ রাখতে পারেন। ২২ বছর বয়সী এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান গত মে মাসে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের ম্যাচে ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। ঘরের মাঠে সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৮ রানের ইনিংস ছিল তাঁর।