
ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে দেওয়া অনাস্থা প্রস্তাবে বিসিবির তিন পরিচালকের বিশেষ ভূমিকা দেখছেন ফারুক আহমেদ। প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিসিবির সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক বিসিবির পরিচালক মাহবুবুল আনাম, ইফতেখার রহমান ও ফাহিম সিনহার নাম উল্লেখ করে বলেছেন, এই ত্রয়ীই তাঁকে বিসিবি থেকে অপসারণের মূল ‘ষড়যন্ত্র’ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে নাজমুল হাসানের আগের বোর্ডের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ‘অভিযোগ’ও করেছেন ফারুক।
সাক্ষাৎকারে ফারুক বলেছেন, ‘মাহবুবুল আনাম আগে থেকেই আমার পেছনে লেগে ছিলেন। নতুন করে তৈরি হয়েছেন ফাহিম সিনহা ও ইফতেখার রহমান মিঠু। আপনি যদি খতিয়ে দেখেন, এঁদের সবার ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু না কিছু পাবেন। আমি মোটামুটি শিওর যে এই তিনজনই পুরো অঙ্কটা করেছেন।’
মাহবুবুল আনামের বিরুদ্ধে বিসিবিতে দুদকের কাজে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, ইফতেখারের বিরুদ্ধে সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সাবেক বোর্ড পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকের সঙ্গে মিটিং করা ও তাঁকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিট দেওয়া এবং ফাহিমের বিরুদ্ধে বিসিবির ফাইন্যান্স কমিটিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ফারুক। তবে গতকাল যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোর কাছে বিসিবির এই তিন পরিচালকই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দুদকের কাজে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করার ব্যাপারে মাহবুবুল আনাম মুঠোফোনে বলেন, ‘এটা অসম্ভব। আমি এ রকম কিছু করিনি। কোনো ডকুমেন্টের ব্যাপারেই আমি বলিনি এটা পাঠাবেন বা এটা পাঠাবেন না।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘দুদক যে ২৭টি বিষয়ে কাগজ চেয়েছে, আমাকে তার মধ্যে একটিমাত্র বিষয়ে বিসিবির আইনজীবীকে সহায়তা করতে বলা হয়েছে। আমি সেটা করেছি। বোর্ড অন্য কী পাঠিয়েছে না পাঠিয়েছে, আমি জানি না।’
ফারুক আহমেদ তাঁর অপসারণে নাজমুল হাসানের বোর্ডের যোগসাজশ থাকার যে কথা বলেছেন, সেটিও অস্বীকার করেছেন তিনি, ‘এটাও সঠিক নয়।’
তবে তিনি দাবি করেন ব্যাংকে বিসিবির ফান্ড ট্রান্সফার করা নিয়ে তাঁর বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি, ‘আমি বলেছি সভাপতি তাঁর এখতিয়ার বলে সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। আমি এ–ও বলেছি, আমরা যে কাগজগুলো সই করেছি, সই করার আগে সেগুলো ইন্টারনাল অডিট হয়ে, পোস্ট অডিট-প্রি অডিট হয়ে এসেছে। এর মানে হলো সবকিছু সংশোধন করেই এটা হয়েছে, এখানে কোনো অনিয়ম নেই।’
আরেক বোর্ড পরিচালক ইফতেখার রহমান বলেন, ‘এটা ভুল তথ্য যে আমি মল্লিক সাহেবকে টিকিট দিয়েছি। আপনারা যাচাই করে দেখেন আমি টিকিট কিনেছি কি না। টিকিট যদি কিনেই না থাকি, দেব কীভাবে! আমাকে যে দুটি বক্সের টিকিট দেওয়া হয়েছিল, আমি তা আমার ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীকে দিয়ে দিয়েছি।’
তবে ইসমাইল হায়দার মল্লিকের সঙ্গে দুবাইয়ে দেখা হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ইফতেখার, ‘মল্লিক সাহেবের সঙ্গে আমার দুবাইয়ে দেখা হয়েছে, যেহেতু উনিও খেলা দেখতে এসেছিলেন। আমি এটাও বলব না যে ওনার সঙ্গে আমার এক–দুইবার ফোনে কথা হয়নি। তবে গত কয়েক মাসে ওনার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি।’
ফারুককে অপসারণের ব্যাপারে ভূমিকা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘এটা ওনাকে প্রমাণ করতে বলুন। আমি এসব নোংরামির মধ্যে নেই। যেদিন এটাতে (অনাস্থা প্রস্তাব) সই করেছি, তার আগে আমি জানতাম না এত কিছু হচ্ছে।’ তাহলে সই করেছেন কেন—এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ওই চিঠির বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি একমত।
ফাহিম সিনহাও ফারুকের সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বিসিবি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকেই সব কাজ দিয়ে থাকে। হোটেল ও ট্রান্সপোর্টের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। এখানে তাই অন্য কিছুর সুযোগ নেই।
নাজমুল হাসানের বোর্ডের পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ব্যাপারে অবশ্য সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি তিনি, ‘এটা নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলতে হয়। তার চেয়ে কিছু না বলি।’