পরশু বাংলাদেশকে সহজে হারিয়েছে পাকিস্তান
পরশু বাংলাদেশকে সহজে হারিয়েছে পাকিস্তান

ছক্কাবাজরা বদলে দিচ্ছেন পাকিস্তানকে, ৫০ ম্যাচে যা পারেনি, ৭ ম্যাচে তা করল ৩ বার

বাংলাদেশের বিপক্ষে পরশু পাকিস্তানের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টেলিভিশনের পর্দায় একটি পরিসংখ্যান ভেসে উঠেছিল। ২০২৪ সাল থেকে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ৩৮ জন খেলোয়াড় ব্যবহার করেছে পাকিস্তান। নতুন নতুন খেলোয়াড় পরীক্ষা করানোর মানে হয়তো দলটি অনেক সফল, তাই পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কিংবা সঠিক খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

পাকিস্তানের জন্য দ্বিতীয় কারণটিই সত্যি। গত কয়েক বছরে দলটি এমন কিছু অর্জন করেনি, যাতে নির্ভার হয়ে তারা পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালাতে পারে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সে পরীক্ষা–নিরীক্ষা হয়তো পাকিস্তানের বন্ধ হতে চলেছে। কেন—সে প্রশ্নের উত্তরও আছে।

কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের মূল সমস্যা ব্যাটিং। ওপেনিংয়ে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ধীরগতির ব্যাটিং নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। পাকিস্তানের বড় সংগ্রহ না হওয়ার পেছনে এ দুজনকেই দায়ী করতেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত তাঁদের সরিয়েও দেওয়া হয়েছে।

বাবর–রিজওয়ানকে টি–টোয়েন্টিতে নিচ্ছে না পাকিস্তান

তাঁদের বাদ দেওয়ার পর পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি খেলেছে ৬টি। এর মধ্যে দুবার দুই শ বা এর চেয়ে বেশি রান তুলেছে দলটি। এই সংস্করণে সর্বশেষ ৭ ম্যাচের ৩টিতেই ২০০ বা এর চেয়ে বেশি রান করেছে পাকিস্তান। এর মধ্যে বাবর ও রিজওয়ান খেলেছেন এক ম্যাচ। গত বছর ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সে ম্যাচে পাকিস্তান ২০৬ রান তুলেছিল। এরপর আর পাকিস্তানের হয়ে খেলেননি বাবর-রিজওয়ান।

৭ ম্যাচে তিনবার দুই শ ছোঁয়া পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের জন্য বিশেষ অর্জন। অথচ দলটি ১৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটির আগে ৫০টি টি-টোয়েন্টিতে দুই শ রানের দেখা পায়নি। পাকিস্তানের ব্যাটিং যে বদলে যাচ্ছে, তা এ পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার।

দীর্ঘ সময় ধরে বাবর-রিজওয়ানই ছিলেন পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের ভরসা। তাঁদের ঝেড়ে ফেলে দলটি নতুন শুরুর ঘোষণা দেয় গত নিউজিল্যান্ড সিরিজে। সিরিজটি পাকিস্তান হেরে যায় ৪-১ ব্যবধানে। তবে সেই সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ২২০ রান ১৬.২ ওভারে তাড়া করে ফেলে পাকিস্তান দল। হাসান নেওয়াজ ৪৪ বলে সেঞ্চুরি করে পাকিস্তানের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। সেই সিরিজে তিনবার শূন্য রানে ফেরার পরও পাকিস্তান তাঁকে বাংলাদেশ সিরিজ সুযোগ দেয়।

এদের ওপর ভরসা এখন পাকিস্তানের

হাসান পরশু সিরিজে প্রথম ম্যাচে সফলও হয়েছেন। ২২ বলে ৪৪ রান করেন। টপ অর্ডারে পাকিস্তান সুযোগ দিচ্ছে মোহাম্মদ হারিসকে। তিনিও নিউজিল্যান্ড সিরিজে ছিলেন ব্যর্থ। তবে পাওয়ারপ্লেতে ঝোড়ো ব্যাটিং করতে পারা তাঁর বিশেষ দক্ষতা। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১৮ বলে ৩১ রান করেন হারিস। ৫ রানে ২ উইকেট হারানো পাকিস্তান তাঁর ব্যাটেই ঘুরে দাঁড়ায়। শুধু খেলোয়াড় নয়, কৌশলেই বদল এনেছে পাকিস্তান। শুরু থেকেই দলটি এখন আক্রমণে বিশ্বাসী।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি এর বড় উদাহরণ। ৫ রানে সেই ম্যাচে পাকিস্তান হারায় সাইম আইয়ুব ও ফখর জামানকে। এরপর পরিস্থিতি সামালের নাম করে ডট বল ও সিঙ্গেলের নেশায় না থেকে আধুনিক টি-টোয়েন্টিই খেলে গেছেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। সেটাই কাজে দিয়েছে, রান তুলেছে ২০১। বাংলাদেশ সেটা করতে পারেনি।

তানজিদ হাসান যখন ফেরেন, তখন বাংলাদেশের রান ৪ ওভারে ২ উইকেটে ৩৭। সেখান থেকে পরের ছয় ওভারে বাংলাদেশ কোনো উইকেট না হারালেও রান তোলে ৩৮। ম্যাচ তো ওখানেই শেষ! বলে রাখা ভালো, টিভিতে ভেসে ওঠা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের পর থেকে সবচেয়ে কম খেলোয়াড় খেলিয়েছে বাংলাদেশ—২২ জন।