
একজন ব্যাটসম্যানের কাছে চার–ছয় কোনো ব্যাপার নয়। অন্য প্রান্তে কে আছেন না আছেন, তা–ও নয়। বিশাল সব ছক্কা মারতে পারেন, আবার ফিল্ডিংয়ের সময় পাখির মতো উড়ে ধরে নেন অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ। একটু কি হেঁয়ালি মনে হচ্ছে? সেই ব্যাটসম্যানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেই আর তা লাগবে না।
এবারের বিশ ব্যাশেই সেই ব্যাটসম্যান একটা ছক্কায় ১২২ মিটার দূরে ফেলেছেন বল। এর কয়েক দিন আগেই এমন এক ক্যাচ নিয়েছেন যে, অবিশ্বাসে চোখ কপালে উঠে গেছে অনেকের। এক এক করে বলা যাক।
১২ জানুয়ারি মেলবোর্নের ডকল্যান্ডস স্টেডিয়ামে মেলবোর্ন স্টারস–মেলবোর্ন রেনেগেডস ম্যাচ। ৭৫ রানে নেই মেলবোর্ন স্টারসের ৭ উইকেট। অষ্টম উইকেট জুটিতে উসামা মিরকে নিয়ে ৮১ রানের জুটি গড়লেন এক ব্যাটসম্যান। তাতে উসামার অবদান কত ছিল জানেন? ০!
১০টি ছক্কা মারলেন, এর মধ্যে একটিতে ছক্কায় ১২ রান দিলেই বোধ হয় ঠিক হতো! ১২২ মিটারের ছক্কা বলে কথা।
১২ জানুয়ারির এই গল্প মনে করিয়ে দিলে আপনি আবার ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বরকেও টানতে পারেন। কারণ ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্যাট কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে ওই ব্যাটসম্যানই ২০২ রানের একটা জুটি গড়েছিলেন, যেখানে কামিন্সের অবদান ছিল মাত্র ১২। সংস্করণ ভিন্ন, টুর্নামেন্ট ভিন্ন, সবকিছুই ভিন্ন—শুধু ব্যাটসম্যানের নাম এক। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি। ২৯১ রানের লক্ষ্যে ৯১ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও জিতিয়ে ছিলেন দলকে। সেটা আবার এক পায়ে দাঁড়িয়ে, হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ে দৌড়ে রান নেওয়ার মতো অবস্থা যে ছিল না। বিশ্বকাপের ম্যাচের সঙ্গে বিশ ব্যাশের ম্যাচের কোনো তুলনাই চলে না।
তবে সেদিন মেলবোর্ন রেনেগেডসের বিপক্ষে মেলবোর্ন স্টার্সের ম্যাচটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হারলে হয়তো ছিটকে যেতে হতো টুর্নামেন্ট থেকে। সেই ম্যাচেই আবার অমন ব্যাটিং বিপর্যয়। আউট হয়ে গেছেন বেন ডাকেট, মার্কাস স্টয়নিসসহ আরও পাঁচ ব্যাটসম্যান। তো কী হয়েছে, ম্যাক্সওয়েল তো আছেন!
১০টি ছক্কা মারলেন, এর মধ্যে একটিতে ছক্কায় ১২ রান দিলেই বোধ হয় ঠিক হতো! ১২২ মিটারের ছক্কা বলে কথা। ৫২ বলে করলেন ৯০। দল তুলল ১৬৫, জিতল ৪২ রানে। এখানেই শেষ নয়, নকআউটে যেতে পরের ম্যাচেও মেলবোর্ন স্টারসের জয়ের প্রয়োজন ছিল। ম্যাক্সওয়েল খেললেন, করলেন ৩২ বলে ৭৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। এই দুই ম্যাচের আগের ম্যাচেই গত ৯ জানুয়ারি করেছেন অপরাজিত ৫৮। এমন ম্যাক্সওয়েলেই মূলত টানা ৫ ম্যাচ হারের পর টানা ৫টি জিতে নকআউটে পৌঁছেছে মেলবোর্ন স্টার্স।
ম্যাক্সওয়েলের শুরুটা কিন্তু ছিল তাঁর দলের মতো। পাকিস্তান সিরিজে পড়া হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে পারেননি। ফেরার পরও ব্যাটে রান নেই। ৪ ম্যাচে করেছিলেন ১৫,৩২,৬ ও ০। সেই ম্যাক্সওয়েলেরই গ্রুপ পর্ব শেষে মোট রান ২৯৭, স্ট্রাইকরেট ১৯৪.১১। গড় ৬০ ছুঁইছুঁই। ছক্কা মেরেছেন এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ২৬টি।
ম্যাক্সওয়েল কিন্তু আগেও ব্যাট হাতে পারফর্ম না করেই আলোচিত ছিলেন। নতুন বছরের প্রথম দিনই এমন একটি ক্যাচ নিলেন, যেটিকে এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান গ্রীষ্মের সেরার স্বীকৃতি দিয়ে দিচ্ছেন।
মেলবোর্ন স্টারসের স্পিনার ড্যান লরেন্সকে লং অনে তুলে মেরেছিলেন ব্রিসবেন হিটের উইল প্রেসউইজ। বলটি বাতাসে ভাসতে ভাসতে সীমানা পেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাটিতে আর নামতে পারেনি; কারণ, শূন্যে ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। যে ক্যাচ নিয়ে ম্যাক্সওয়েল মাঠে নেমে আসার পর ধারাভাষ্যে বলা হয়েছে, ‘হি ইজ আ ফ্রিক শো!’ আসলেই তো তা–ই।
কাল সিডনি থান্ডারের বিপক্ষে নকআউটে খেলবে মেলবোর্ন। দেখুন, ম্যাক্সওয়েল তাতে আবার কী তাণ্ডব চালান! ওহো, এতে তো শুধু ব্যাটিংয়ের কথা বলা হয়ে গেল। ফিল্ডার ম্যাক্সওয়েল? তিনিও আসলে বিস্ময়ের আরেক নাম।