এবারের পিএসএলে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সে খেলছেন মোহাম্মদ আমির
এবারের পিএসএলে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সে খেলছেন মোহাম্মদ আমির

আমিরের ক্যারিয়ার ধ্বংসের চেষ্টা করেছিলেন কে

২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার কিছুদিনের মধ্যেই বল হাতে আলোড়ন তুলেছিলেন মোহাম্মদ আমির। তাঁকে পাকিস্তান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ মহাতারকা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে আমিরের ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকালে মনে হবে, প্রত্যাশার সিকিভাগও পূরণ করতে পারেননি তিনি।

এর কারণও অনেক। স্পট ফিক্সিংয়ে জড়ানো, নিষিদ্ধ হওয়া এবং জেল খাটা—এসবের জন্য আমির নিজেই দায়ী। কিন্তু ‘শাপমুক্ত’ হয়ে ফেরার পর দারুণ কিছুর আভাস দিলেও পাকিস্তান জাতীয় দলে তাঁর ক্যারিয়ার আর সেভাবে এগোয়নি। অবসরের ঘোষণা, অবসর ভেঙে ফেরা এবং আবারও অবসর—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমিরের শেষ অধ্যায় এভাবেই মনে রাখবেন সবাই।

কিন্তু পাকিস্তানের জার্সি আগেভাগেই তুলে রাখার কারণ জানাতে গিয়ে আমির নির্দিষ্টভাবে একজনের দিকে আঙুল তুলেছেন।

ওয়াকার ইউনুস (ডানে) যখন পাকিস্তান জাতীয় দলের কোচ এবং মোহাম্মদ আমির যখন সেই দলের খেলোয়াড় ছিলেন

পাকিস্তানের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়েছেন, নব্বইয়ের দশকের এক ক্রিকেটার ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর ক্যারিয়ার ধ্বংস করার চেষ্টা করেছেন। ওই ক্রিকেটার তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন।

৩৩ বছর বয়সী আমির বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের একজন সাবেক ক্রিকেটার আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। পাকিস্তান দল কোভিডের সময় নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিল। সফরের জন্য ৪০ জন খেলোয়াড় বাছাই করা হয়েছিল। অথচ সেখানে আমার নাম ছিল না।’

আমির নব্বইয়ের দশকের ওই ক্রিকেটারের নাম না বললেও ইঙ্গিতটা পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াকার ইউনুসের দিকে বলে মনে করছে পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

২০১০ সালে লর্ডস টেস্টে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে কঠিন শাস্তি হয় মোহাম্মদ আমিরের

৫৩ বছর বয়সী ওয়াকার দুই মেয়াদে পাকিস্তান জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্বপালন করেছেন। প্রথমবার ২০১০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে। সেই সময়ই ইংল্যান্ড সফরে লর্ডস টেস্টে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়ান আমির। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০১৬ সালে যখন আবার পাকিস্তান দলে ফেরেন, তখনো কোচ ছিলেন ওয়াকার।

সেই বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেন পর্ব থেকে পাকিস্তান বিদায় নিলে প্রধান কোচের পদ ছাড়েন ওয়াকার ইউনুস। তবে এরপর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) বিভিন্ন পদে ছিলেন ওয়াকার। আমিরের কথায় আভাস, ওয়াকার তাঁকে বারবার পাকিস্তান দলের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে আমির তেমন অভিযোগই করেন, ‘একবার তো পিএসএল শুরুর আগেই জাতীয় দল ঘোষণা করা হলো যেন আমি ও শোয়েব মালিক সেই টুর্নামেন্টে ভালো পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে নিতে না হয়।’

২০২৪ সালে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন আমির

২০২০ পিএসএলে আমিরের দল করাচি কিংসই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেবার তিনি ১০ উইকেট পেয়েছিলেন। কোয়ালিফায়ারের সুপার ওভারে তাঁর দুর্দান্ত বোলিং করাচিকে ফাইনালে তুলেছিল। এরপরও তাঁকে জাতীয় দলে না রাখায় সেই সময়ের নির্বাচক কমিটি ও টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাপক সমালোচিত হয়।

এ ব্যাপারে আমির বলেন, ‘আমাকে পাকিস্তান দলে না দেখে সবাই তাকে (ওয়াকার) জিজ্ঞাসা করেছিল, “আমির ভালো খেললেও কেন তাঁকে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে রাখা হলো না?’” আমির আরও অভিযোগ করেন, এমন প্রশ্নে ওয়াকারের উত্তর ছিল অস্পষ্ট, ‘আমরা ওকে পরিকল্পনায় রেখেছি। কিন্তু এখন ওকে একটু চাপে রাখতে হবে। পরে দেখা যাবে।’

পাকিস্তান দলে জায়গা না হওয়ায় টিম ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ এনে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন আমির। তবে গত বছর মার্চে অবসর ভেঙে ফেরার ঘোষণা দেন আমির।

নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের পর খেলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। কিন্তু সেই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ভরাডুবির পর আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন।

এবারের পিএসএলে এখন পর্যন্ত ১২ উইকেট নিয়েছেন আমির

এবারের পিএসএলে বেশ ভালো করছেন আমির। এখন পর্যন্ত আট ম্যাচে নিয়েছেন ১২ উইকেট। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আজ রাতেই কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ফাইনাল খেলতে নামবেন আমির। তাঁর দলের প্রতিপক্ষ সাকিব–মিরাজ–রিশাদদের লাহোর কালান্দার্স।