মুশফিকুর রহিম
মুশফিকুর রহিম

মুশফিকের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত কী, কোথায় তাঁর আক্ষেপ

অভিষেকের আগে লর্ডসে তাঁর প্যাড হাতে নেওয়া সেই ছবিটা এখনো প্রায়ই ভেসে বেড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। চেহারায় সারল্য আর কৈশোরের ছাপ ছিল স্পষ্ট। সময়ের হিসাবে ২০ বছর পেরিয়ে গেছে এরপর। এখন মুশফিকের মুখভর্তি দাড়ি। তারুণ্য পেরিয়ে এখন তিনি ক্যারিয়ারের শেষ দিকে ছুটছেন।

মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান খেলছেন নিজের শততম টেস্ট। লম্বা এই যাত্রায় কয়েক প্রজন্মের ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলেছেন মুশফিক। নিজের ক্যারিয়ার ও জীবনেও গেছেন অনেক উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে। এই সময়ে তাঁর কাছে সবচেয়ে কঠিন ও সুন্দর সময় ছিল কখন, আজ মিরপুরে মুশফিকের সংবাদ সম্মেলনে ছিল এমন প্রশ্ন।

উত্তরে মুশফিক বলেছেন, ‘বাংলাদেশে হয়তো পরের টেস্ট খেলাই কঠিন। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিটা ইনিংসই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিটা ইনিংসই বিশেষ। আর যদি সুন্দর মুহূর্ত বলেন, তাহলে আমি বলব, প্রথম যখন ডাবল সেঞ্চুরি করেছি।’

কেন সেটি সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত—এ ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মুশফিক। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। তার পরে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানও এই মাইলফলক ছুয়েছেন। তাঁরা দুজনই যদিও একটিতেই থেমেছেন, মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন পরে আরও দুটি।

২০১৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিম

বাকিদের পথ দেখাতে পারার এ আনন্দই গল টেস্টের সেই ইনিংসকে বিশেষ করেছে মুশফিকের কাছে, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত একটা জিনিস আপনার চোখের সামনে কেউ অর্জন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দলে ওই বিশ্বাসটা থাকে না। ওই দুই শ করার পর থেকে অন্তত অন্যরাও বিশ্বাস করা শুরু করেছে যে হ্যাঁ, আমরাও বড় রান করতে পারি।’

এখন মুশফিকের শততম টেস্ট খেলাও বাকিদের পথ দেখাবে বলে আশা তাঁর, ‘আমি মনে করি, এই ১০০ টেস্ট খেলার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আরও অনেকেই ভাববে যে এটা করা যায়। যদি এমন মানসিকতা ও স্কিল থাকে, তারা অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরও ওপরে নিয়ে যাবে।’

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নিশ্চয়ই অনেক অপ্রাপ্তি ও অভিমানও আছে মুশফিকের, তবে সেসব আজ আড়ালেই রেখেছেন তিনি। ৩৪ টেস্টের অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারটা আরও বড় না হওয়া নিয়েও তাঁর অতৃপ্তি নেই। এখন ক্যারিয়ারে নতুন করে একটি চাহিদাও ঠিক করেছেন তিনি।

মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকুর রহিম

মুশফিক বলেছেন, ‘আক্ষেপ যদি বলেন, আসলে উন্নতিতে মানুষের চাহিদার তো কোনো শেষ নেই। কিন্তু সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে যদি বলেন, টেস্ট ক্রিকেটে এত বছর খেলার পর আমার একটা ইচ্ছা আছে—যখন আমি দলটা ছেড়ে যাব, সেরা ছয়ে যেন থাকি। দেখা যাক আল্লাহ কতটুকু পূরণ করে সেটা।’

২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যখন অভিষেক হয়, তখন শততম টেস্ট খেলা একদমই ভাবনায় ছিল না মুশফিকের। তবে এমন অর্জন যেকোনো দেশের যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই গর্বের মুহূর্ত হবে বলে বিশ্বাস তাঁর। এখন তাতে দায়িত্বটা বেড়ে গেছে বলেই বিশ্বাস মুশফিকের।

মুশফিক বলেছেন, ‘আমার ওপর দায়িত্ব এখন অনেক বেশি। চেষ্টা করব আর যে কয়েকটা ম্যাচই খেলতে পারি যেন সেটার প্রতিফলন করতে পারি মাঠে। আর এর সঙ্গে যেন আমি অবসরে যাওয়ার পর এমন দু–একটা খেলোয়াড় রেখে যেতে পারি, সেই ঘাটতি যেন পূরণ হয়ে যায়।’

শততম টেস্টে ১০৬ রান করে আউট হন মুশফিকুর রহিম

শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে ছোট্ট একটা তালিকাতেও ঢুকে গেছেন মুশফিক। তাঁর আগে নিজের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন মাত্র ১০ জন ক্রিকেটার। এমন বিরল কীর্তিতে ঢুকে যাওয়ার চেয়ে মুশফিকের কাছে বড় উপহার হবে দলের ম্যাচ জেতা।

মুশফিক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আমি মুশফিকুর রহিমকে আমার কাছে মনে হয় যে একটা সমুদ্রের দুয়েক ফোঁটা পানি। বাংলাদেশ ও দল সব সময় আগে। আমি এই বার্তাটা দেওয়া চেষ্টা করেছি যেন দেশের জন্য খেলি, এই ম্যাচ জেতাটা হবে আমার জন্য সব সময় উপহার।’