২০২৫ আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয় বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু
২০২৫ আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয় বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু

দুই বছরে উধাও ১৬ হাজার কোটি, আইপিএলের বাজারমূল্য কমছে কেন

বিশ্বের সবচেয়ে সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ আইপিএল এখন এক অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক ধাক্কার মুখে। টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কমেছে আইপিএলের ব্র্যান্ডমূল্য।

২০২৩ সালে লিগটির মূল্য ধরা হয়েছিল ৯২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি, যা ২০২৪ সালে নেমে আসে ৮২ হাজার ৭০০ কোটিতে। ২০২৫ সালে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ১০০ কোটি রুপিতে। অর্থাৎ দুই বছরে উধাও হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠের ক্রিকেট ঘিরে দর্শক আগ্রহ বাড়লেও দুটি প্রধান কারণে আইপিএলের ব্র্যান্ডমূল্য কমেছে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডি অ্যান্ড পি অ্যাডভাইজরির ‘বিয়ন্ড ২২ ইয়ার্ডস—দ্য পাওয়ার অব প্ল্যাটফর্মস, দ্য প্রাইস অব রেগুলেশন: আইপিএল অ্যান্ড ডব্লিউপিএল ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট ২০২৫’–এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।

কোনো ব্র্যান্ড বা ব্যবসার বাজারে সম্ভাব্য মূল্য, আয়, জনপ্রিয়তা ও ভবিষ্যৎ আয়ের ধারণার ওপর ভিত্তি করে ভ্যালুয়েশন বা আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ডি অ্যান্ড পি অ্যাডভাইজরির প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ ব্র্যান্ডমূল্য কমেছিল আইপিএলের। এবার কমেছে ৮ শতাংশ।

২০০৮ সালে শুরু হওয়ার পর প্রতিবছরই আগের বছরের তুলনায় আকারে বড় হয়েছে আইপিএল। এখন লিগটিতে খেলে থাকে ১০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি। একজন খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক দুই মাসের একটি আসরের জন্য ২৭ কোটি রুপি পর্যন্ত উঠেছে (২০২৫ আসরে ঋষভ পন্তের)। কিন্তু লিগের সার্বিক ব্র্যান্ডমূল্য কমার তথ্য দিচ্ছে উল্টো চিত্র।

আইপিএল নিয়ে দর্শক উন্মাদনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে

দু্ই বড় কারণ

দুই বছরে ১৬ হাজার কোটি রুপি কমে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ আছে—বলছে প্রতিবেদন। এর মধ্যে অন্যতম হলো মিডিয়া রাইটস বা সম্প্রচারস্বত্ব একীভূত হয়ে যাওয়া। ২০২৪ সালে ডিজনি স্টার ও ভায়াকম১৮ একত্র হয়ে তৈরি করে জিওস্টার, যা আইপিএলের টেলিভিশন ও ডিজিটাল সম্প্রচারস্বত্ব একই ছাতার নিচে নিয়ে আসে।

দুটি পক্ষ একীভূত হওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক বিডিং প্রক্রিয়া থেমে যায়, তৈরি হয় একচেটিয়া বাজার। ফলে প্রতিযোগিতামূলক মিডিয়া চুক্তি থেকে আসা আর্থিক প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে ফ্যান্টাসি ও অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা। এই প্ল্যাটফর্মগুলো ছিল আইপিএলের অন্যতম বড় বিজ্ঞাপনদাতা, যারা টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, টাইটেল স্পনসরশিপ ও দলীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে তাদের ব্র্যান্ড প্রচার করত।

২০২৫ সালের জুলাইয়ে ভারতে প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব অনলাইন গেমিং অ্যাক্ট কার্যকর হয়েছে। এই আইন কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে অর্থনির্ভর গেমের বিজ্ঞাপন ও স্পনসরশিপ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে এ খাত থেকে আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে, লিগের বাণিজ্যিক ইকোসিস্টেমে তৈরি হয়েছে একটি উল্লেখযোগ্য ঘাটতি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামনে আইপিএলের আয়ের উৎসে নতুন সুযোগও তৈরি হতে পারে। অটোমোবাইল, ফিনটেক, স্বাস্থ্যসেবা ও ই–স্পোর্টসের মতো বৈচিত্র্যময় স্পনসরশিপ–নির্ভর খাত, সাবস্ক্রিপশন বান্ডেল, আঞ্চলিক প্যাকেজ ও কমার্স ইন্টিগ্রেশনের মতো নতুন আয়ের মডেল এই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

পাশাপাশি নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন ও অ্যাপলের মতো বৈশ্বিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান সম্প্রচার স্বত্বের প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে এনে আইপিএলের ব্র্যান্ডমূল্যও বাড়াতে পারে।