নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গতকাল টি–টোয়েন্টি সিরিজ শেষে ট্রফি হাতে বাংলাদেশ দল
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গতকাল টি–টোয়েন্টি সিরিজ শেষে ট্রফি হাতে বাংলাদেশ দল

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজ জিতে কী পেল বাংলাদেশ

সিরিজজুড়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে যিনিই এসেছেন, সবার কথার সুর ছিল একই রকম— আন্তর্জাতিক সিরিজ তো আন্তর্জাতিক সিরিজই, প্রস্তুতির মঞ্চ নয়। স্বাভাবিক সময়ে কথাটা সত্যিই; কিন্তু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজটি শেষ হলো এশিয়া কাপের একেবারে আগমুহূর্তে। এশিয়া কাপে প্রস্তুতির বিষয়গুলো তাই সিরিজজুড়েই এসেছে ঘুরেফিরে।

গতকাল সিরিজ শেষে অধিনায়ক লিটন দাসের সংবাদ সম্মেলনেও প্রসঙ্গটা এল একই কারণে। দলের ভাবনায়ও যে এশিয়া কাপ আছে, সেটির একটি প্রমাণ তো শেষ টি–টোয়েন্টির একাদশেও ছিল— বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল পাঁচটি পরিবর্তন নিয়ে। সবাইকে শেষবার পরখ করে নেওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায়নি দল।

পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন শুধু শেষ ম্যাচের একাদশে থাকলেও বৃষ্টিতে খেলা মাঝপথেই থেমে যাওয়ায় ব্যাটিং–বোলিং কিছুই করতে পারেননি। এ ছাড়া স্কোয়াডের বাকি ১৫ জনই সুযোগ পেয়েছেন ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ের। বাংলাদেশের জন্য এই সিরিজে প্রাপ্তির একটি বড় জায়গা— যখন যে ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছেন, নিজেদের ভূমিকায় তাঁরা অবদান রেখেছেন বেশ ভালোভাবেই।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজে ব্যাটে–বলে অবদান রাখেন সাইফ

সাইফ হাসান তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এশিয়া কাপে দলে সুযোগ পাওয়া এই ক্রিকেটার দুই বছর ধরে কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি। তাঁকে দলে নেওয়ার ভাবনায় তখন জানানো হয়েছিল, বিভিন্ন ভূমিকায় অবদান রাখতে পারেন বলেই নেওয়া।

প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ে দুটি উইকেট নেন, ওই ম্যাচে পরে ব্যাট হাতেও ১৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ রান করেন সাইফ। শেষ ম্যাচে তাঁকে ওপেনিংয়ে নামানো হয়েছিল। তাতে অবশ্য পাস করতে পারেননি ৮ বল খেলে ১২ রান করা সাইফ।

মাঝে দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিংয়ে করতে নামতে হয়নি, অধিনায়কেরও প্রয়োজন হয়নি সাইফকে বোলিংয়ে আনার। ওই ম্যাচে আবার বাংলাদেশের হয়ে ভালো করেন নাসুম আহমেদ। তিন ম্যাচের মধ্যে ওই একটি ম্যাচে সুযোগ পেয়েই এই স্পিনার ৩ উইকেট নিয়ে হয়ে যান ম্যাচসেরা। একই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে পেসার তানজিম হাসানও নেন ২ উইকেট।

দ্বিতীয় ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হন নাসুম

এশিয়া কাপের স্কোয়াডে নতুন সংযোজন ছিলেন নুরুল হাসানও। এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান প্রথম দুই ম্যাচ বেঞ্চে বসে ছিলেন। শেষ ম্যাচে ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১১ বলে ২ ছক্কায় ২২ রান করে ছাপ রেখেছেন নিজের।  

নিয়মিত একাদশের ক্রিকেটারদের কথা তো আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই— সিরিজসেরার পুরস্কারটাই যেমন নিজের করে নিয়েছেন অধিনায়ক লিটন। প্রথম দুই ম্যাচে ১৮ ও ৫৪ রানে অপরাজিত থাকার পর কাল বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়া শেষ ম্যাচে ৪৬ বলে করেন ৭৩ রান।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন তাসকিন আহমেদ। ডাচদের বিপক্ষে এই সিরিজে বাংলাদেশের জেতাটা ছিল প্রত্যাশিত। প্রথম দুই ম্যাচে দাপট দেখিয়ে জিতে তাঁরা তা করেছেনও।

শেষ ম্যাচে বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার আগে ১৮.২ ওভার ব্যাট করে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে ১৬৪ রান। এই সিরিজে মুখ্য ছিল ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স।

সিরিজে রান পেয়েছেন লিটন

তা কী ঠিকঠাক করতে পেরেছেন ক্রিকেটাররা, এই সিরিজে বাংলাদেশের প্রাপ্তিটাই বা কী? প্রশ্নটা করা হয়েছিল অধিনায়ক লিটনকে। কাল সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় অনুশীলন করাটা গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলনের চেয়ে ম্যাচে আপনি কতটা ডেলিভার করতে পারছেন। ম্যাচ খেললে আপনার উন্নতি হবে, গেম সেন্স বাড়বে। আমার মনে হয় আমরা এখন (এই সিরিজটা খেলার পর) ভালোভাবে প্রস্তুত এশিয়া কাপে যাওয়ার জন্য।’

এশিয়া কাপ সামনে রেখে প্রায় মাস দেড়েকের একটি প্রস্তুতি ক্যাম্পও করেছে বাংলাদেশ। ফিটনেস দিয়ে সেটি শুরু হওয়ার পর মিরপুর ও সিলেটে হয়েছে ব্যাট–বলের অনুশীলন। এই ক্যাম্পের মতো প্রস্তুতি লিটন ‘কখনো দেখেননি’। এরপর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজটাও ভালো কেটেছে বাংলাদেশের।

এতকিছুর পরও কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় কী ঘাটতি রয়ে গেছে? উত্তরে লিটন বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় না খুব একটা ঘাটতি আছে। হ্যাঁ, পুরোপুরি যদি খেলাটা খেলতে পারতাম (শেষ ম্যাচে)— বোলাররা আজকে (কাল) বল করতে পারত। এটা একটা থেকে যেতে পারে (ঘাটতি)। কিন্তু এটা (বৃষ্টি) তো আমাদের হাতে নেই। আমরা চেষ্টা করব সামনে যে অনুশীলন আছে, সেখানে যেন পুষিয়ে নিতে পারি।’

সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে এশিয়া কাপে নামবে বাংলাদেশ দল

টানা তিন সিরিজ জেতার আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ যাচ্ছে এশিয়া কাপ খেলতে। গত জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এসেছে তাঁদের মাটিতেই। একই মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের পর এবার জয় এসেছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও। লিটন বলেছেন, বড় টুর্নামেন্টে গিয়ে স্নায়ু ধরে রাখায় তাকিয়ে আছেন তিনি।

সেটি করা গেলে যে এশিয়া কাপে ভালো কিছুই হবে, লিটন তা না বললেও নিশ্চয়ই অনুমান করা কঠিন নয়!