আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামবে হংকংকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ
আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামবে হংকংকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

এশিয়া কাপ

শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের দ্বৈরথ কি শুধু দর্শকদের মধ্যেই

বাংলাদেশ–হংকং ম্যাচের আগের দিনের ঘটনা। শ্রীলঙ্কা সেদিনই প্রথম আসে অনুশীলনে। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের অনুশীলন মাঠে ব্যাট–প্যাড পরে ঢুকছিলেন লিটন দাস। পথে দেখা শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কার সঙ্গে। ব্যাটিংয়ে যাওয়ার ব্যস্ততায় একটু আগেই দর্শকদের ছবি তোলার আবদার ফিরিয়ে দেওয়া লিটন ঠিকই হাত মেলালেন আসালাঙ্কার সঙ্গে।

প্রায় একই রকম আরেকটি দৃশ্য গতকাল দেখা গেল আবুধাবি পার্ক রোটানা হোটেলে। এশিয়া কাপের প্রথম পর্বের জন্য বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ঠিকানা এই পাঁচ তারকা হোটেল। লবিতে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার দাসুন শানাকার দেখা হয়ে গেল বাংলাদেশের উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান নুরুল হাসানের সঙ্গে। দুজন হাত মেলালেন, কুশল বিনিয়মও হলো।

দুটিই খুব সাধারণ দৃশ্য। তবে ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফির পর থেকে বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের মুখোমুখি হওয়া মানেই যেন বাড়তি উত্তেজনার খোঁজ করা। ২০২৩ বিশ্বকাপে ‘টাইমড আউটে’র ঘটনা দুই দলের সম্পর্কে ঝাঁজ এনেছে আরও। তবে আজ আবুধাবিতে এশিয়া কাপের ম্যাচে তাদের আরেকটি সাক্ষাতের আগে মনে হচ্ছে সবই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। অন্তত দুই দলের ক্রিকেটারদের আনুষ্ঠানিক ভাষ্যটা সে রকমই।

পরশু রাতে হংকং ম্যাচের পর বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা তানজিম হাসান বলেছেন, তাঁরা পেশাদার ক্রিকেটার। দর্শকদের আবেগ তাদের ছুঁয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। লঙ্কান অধিনায়ক আসালাঙ্কাও বলেছেন, উত্তেজনাটা নাকি কেবল দর্শকদের মধ্যেই।

গতকাল অনুশীলন ছিল না। একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায়ের পর বাংলাদেশ দল

দর্শকদের আবেগ–উত্তেজনা ক্রিকেটারদের একদমই ছুঁয়ে যায় না বললে তা মেনে নেওয়াটা আসলে কঠিনই। আবেগ-উত্তেজনা থেকেই তো গ্যালারি থেকে সমর্থন–দুয়ো আসে। সেগুলো কি প্রভাব ফেলে না ক্রিকেটারদের ওপর! আসালাঙ্কা যতই বলুন, ‘এটা কেবলই একটা খেলা আমাদের জন্য। আমাদের কেবল নিজেদের পরিকল্পনাগুলো অনুসরণ করতে হবে’, সঙ্গে ঠিকই স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘এটাও সত্যি যে কিছুটা বাড়তি অনুপ্রেরণা দেয় মাঠের বাইরের এসব ঘটনা।’

দুই দলের দুই প্রতিনিধির কথা মেনে উত্তেজনাটাকে যদি শুধু দর্শকদের মধ্যেই আটকে রাখা হয়, তবু মাঠে দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। টি–টোয়েন্টিতে দুই দলের ২০ সাক্ষাতের ১২টিতেই জিতে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। তবে শেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ, জিতেছে শ্রীলঙ্কার মাটিতে হওয়া সর্বশেষ সিরিজটিও।

গত জুলাইয়ের সিরিজ জয় এশিয়া কাপের আজকের ম্যাচে দলকে বাড়তি অনুপ্রেরণা দেবে, এই বিশ্বাস তানজিমেরও। চেনা প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কী করতে হবে, সেটিও জানা আছে তাঁর, ‘আমরা একে–অপরকে খুব ভালো করেই জানি, সেভাবেই খেলব। আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলব।’

টি–টোয়েন্টিতে দুই দলের ২০ সাক্ষাতের ১২টিতেই জিতে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। তবে শেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ, জিতেছে শ্রীলঙ্কার মাটিতে হওয়া সর্বশেষ সিরিজটিও।

সমস্যা হলো টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের বিপক্ষে ৭ উইকেটে জিতলেও ‘সেরা খেলা’টা খেলতে পারেনি বাংলাদেশ দল। ক্রিকেটাররাও সেটা মানছেন। কাগজে–কলমে টুর্নামেন্টের দুর্বলতম দলটা বাংলাদেশের বিপক্ষে পুরো ২০ ওভার খেলে করে ফেলেছিল ১৪৩ রান।

তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ১৪ বল বাকি থাকতে। কাল বিশ্রামের দিনেও নিশ্চয়ই আরেকটু ভালোভাবে জিততে না পারার আক্ষেপটা ছিল ক্রিকেটারদের মধ্যে। তবে সেই আক্ষেপ যদি আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো কিছু করে দেখানোর তাড়না বাড়াতে পারে, তাহলে অবশ্য মন্দ হয় না।

শ্রীলঙ্কার জন্য আবার বাস্তবতাটা অন্যরকম। টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হলেও এবার তাদের নিয়ে আলোচনা খুব একটা নেই। তবে অধিনায়ক আসালাঙ্কা বলছেন গত এশিয়া কাপ জয়ের আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করেই এবার মাঠে নামছেন তাঁরা, ‘আগের আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা মানসিকভাবে আমাদের এগিয়ে রাখবে। যেহেতু আমরা চ্যাম্পিয়ন ছিলাম, আমাদের বিশ্বাস আছে এবারও অনেক দূর যেতে পারব।’

গত জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ

লম্বা সেই পথের শুরুটা আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই করতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের যেমন শ্রীলঙ্কা, শ্রীলঙ্কার জন্যও বাংলাদেশ খুব চেনা প্রতিপক্ষ। আর সেই চেনাজানা থেকেই গত কয়েক বছরে দুই দলের সম্পর্কে ভর করেছে উত্তেজনা। ক্রিকেটারদের কথা মানলে সেই উত্তেজনা শুধু গ্যালারিতেই। আজ মাঠে যেটুকু থাকবে, সেটি কেবলই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অন্যভাবে বললে, মর্যাদার লড়াইও কি নয়!