Thank you for trying Sticky AMP!!

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা

বিসিবি কি তবে এবার ব্যবসা করতে নামছে

তবে কি দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও রূপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)! বিসিবির আজকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সামনে রেখে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে এ প্রশ্নটাই।

বিসিবির এজিএমে এমনিতে রুটিন বিষয় নিয়েই আলোচনা হয় বেশি। এবারও আলোচ্যসূচিতে বেশির ভাগ সে রকমই বিষয়। তবে গঠনতন্ত্রে দুটি সংশোধনী আনার প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা, সিদ্ধান্ত হবে আজ দুপুরে ঢাকার একটি হোটেলে বসতে যাওয়া বার্ষিক সাধারণ সভায়। বলা হচ্ছে, এবারের সভার মূল উদ্দেশ্যই নাকি এটি। আর এ দুটি সংশোধনী প্রস্তাবই উসকে দিচ্ছে প্রশ্নটা—বিসিবি কি তবে এবার ব্যবসা করতে নামছে?

Also Read: এখনো তামিমের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় বিসিবি সভাপতি

গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৬–এর উপ–অনুচ্ছেদ ৬.১৭–এর সংশোধনী প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে বিসিবি প্রয়োজনে যেকোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে, এলসি খুলতে পারবে এবং ঋণের বিপরীতে যেকোনো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখতে পারবে। ঋণের জামানত হিসেবে এফডিআরের বিপরীতে লিয়েনের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পারবে ব্যাংক গ্যারান্টিও দিতে। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের বাণিজ্যিক ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিতেও আর কোনো আইনগত বাধা থাকবে না তাদের।

বর্তমানে বিসিবি উদ্ধৃত অর্থ ব্যাংকে এফডিআর করে। তবে সেটি করা হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি নিয়ে। সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন হলে এ রকম ঝুঁকিহীন লাভজনক বিনিয়োগেও আর কোনো বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছে বোর্ডের একটি সূত্র। বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ এবং উদ্ধৃত তহবিলের অর্থ তখন এ ধরনের বিনিয়োগের পাশাপাশি এফডিআর করা যাবে, কেনা যাবে ট্রেজারি বন্ডও।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান

একই অনুচ্ছেদের উপ–অনুচ্ছেদ ৬.২০–এর সংশোধনী প্রস্তাবে বলা আছে, সারা দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে অবকাঠামো, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামাজিকে সুবিধা বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনে এক বা একাধিক ট্রাস্ট, কোম্পানি, সোসাইটি, ফাউন্ডেশন গঠন করা যাবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, বিসিবির পক্ষে যেকোনো শেয়ার বোর্ডের পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে পদাধিকার বলে বোর্ড সভাপতি, পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুকূলে বরাদ্দ করার সুযোগও থাকছে তাতে।

ভবিষ্যতে টেলিভিশন চ্যানেলের পাশাপাশি সামাজিক ক্লাব (ক্রিকেটার্স ক্লাব) বা ট্রাস্ট খোলার পরিকল্পনা আছে বিসিবির। বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একটি ক্রীড়া ফেডারেশন হিসেবে আইনত বিসিবি এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। আজকের বার্ষিক সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্রে প্রস্তাবিত সংশোধনী এনে বিষয়গুলোকে আইনের পরিধির মধ্যে আনাই বিসিবির উদ্দেশ্য।

Also Read: বাংলাদেশের ‘জঘন্য’ রিভিউ নিয়ে কলকাতা পুলিশের মিম

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী মুঠোফোনে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলার সরঞ্জামসহ বিভিন্ন জিনিস আমদানি ও ব্যাংকিং কার্যক্রম সহজ করতে ব্যাংকের পরামর্শক্রমেই গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনার প্রস্তাব দেওয়া হবে, যাতে বোর্ড জটিলতা ছাড়াই এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে।’

তবে বিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর সংশোধনী প্রস্তাবের সমালোচনা করে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এটি অনুমোদন হলে বিসিবি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিসিবির কাজ দেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন করা, নতুন ক্রিকেটার তৈরি করা। সে জন্য তাদের ব্যবসা করতে হবে কেন? তাতে মূল দায়িত্ব থেকে ক্রিকেট বোর্ডের মনোযোগ সরে যেতে পারে।

Also Read: ‘রিভিউ নেওয়ায় আমরা জঘন্য’

বার্ষিক সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি, ‘গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য অ্যাজেন্ডায় শুধু সংশোধনী প্রস্তাব রেখে বিশেষ সাধারণ সভা ডাকতে হয়। বার্ষিক সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এ রকম বড় সিদ্ধান্তগুলো সাধারণত বোর্ডের নির্বাচনের আগের সভাতে নেওয়া হয়। বিসিবির নির্বাচন হবে আগামী বছরের নভেম্বরের পর। তাই এখনই গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগের পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে বলে সংশয় তাঁর।

তবে কাউন্সিলর হিসেবে এসব অভিযোগ এবং বক্তব্য আজকের সভায় তুলবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘বলে কী লাভ! কেউ তো আমাকে সমর্থন দেবে না। সবাই এখন সুবিধাভোগী। উল্টো আমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়ব।’

Also Read: কঠোর গোপনীয়তায় তামিম–বিসিবি সভা

বার্ষিক সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন করা যায় কি না, জানতে চাইলে বিসিবির প্রধান নির্বাহী বলেছেন, সর্বশেষ সাধারণ সভায় অনুমোদিত সংশোধনীর পর এখন গঠনতন্ত্র সংশোধন করা যেতে পারে বার্ষিক সাধারণ সভায়ও।

সাধারণ সভা উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও বিসিবির কাছ থেকে উপঢৌকন পাবেন বোর্ডের ১৭১ জন কাউন্সিলর। উপঢৌকন হিসেবে প্রত্যেক কাউন্সিলরকে দেওয়া হবে ১ লাখ টাকা ও একটি করে ম্যাকবুক এয়ার।