কীভাবে সুপার ফোরে উঠতে পারে বাংলাদেশ?
কীভাবে সুপার ফোরে উঠতে পারে বাংলাদেশ?

কীভাবে নেট রান রেট হিসাব করা হয়

নেট রান রেটের হিসাবটা কি আসলেই জটিল? অঙ্কের হিসাব-নিকাশ যেহেতু একটু জটিল তো হবেই। তবে যতটা ভাবা হয় ততটা জটিলও নয়।

নেট রান রেটের হিসাব ঠিকঠাক না জানলে কী হয় সেটি আফগানিস্তানের চেয়ে ভালো আর কারা জানে!

২০২৩ এশিয়া কাপের কথা মনে আছে? প্রথম পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আফগানরা ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন নির্ধারিত ওভারের মধ্যে লক্ষ্য ছুঁয়ে সুপার ফোরে ওঠার সমীকরণ মেলাতে। ৩৭.১ ওভারে করতে হবে ২৯২, এই হিসাব জেনেই ব্যাটিংয়ে নামে দলটি।

হিসাব মেলাতে ৩৮তম ওভারের প্রথম বলে ৩ রান দরকার ছিল দলটির। ওই বলে মুজিব উর রেহমান আউট হয়ে গেলে হতাশায় হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিলেন অন্য পাশে থাকা রশিদ খান। হতাশ আফগানরা এরপর আর জয়ের চেষ্টা করেনি, উল্টো ২ উইকেট হারিয়ে ২৮৯ রানেই অলআউট হয়ে হারে ২ রানে।

অথচ ৩৭.১ ওভারে ২৯২ রান না হলেও এরপরও সুপার ফোরে ওঠার সমীকরণ মেলানোর সুযোগ ছিল আফগানদের। আফগানিস্তান যদি ৩৭.২ ওভারে ২৯৩, ৩৭.৩ ওভারে ২৯৪, ৩৭.৫ ওভারে ২৯৫, ৩৮ ওভারে ২৯৫ কিংবা ৩৮.১ ওভারে ২৯৭ করলেও ম্যাচ জিতে নেট রান রেটের হিসাব মিলিয়ে উঠে যেত পারত সুপার ফোরে। হিসাবটা জানা ছিল না বলেই গড়বড় করে ফেলেন রশিদরা।

২০২৩ এশিয়া কাপের সেই ছবি, হতাশায় বসে পড়েছেন আফগানিস্তানের রশিদ খান

নেট রান রেটের হিসাবটা কি আসলেই জটিল? অঙ্কের হিসাব-নিকাশ যেহেতু, একটু জটিল তো হবেই। তবে যতটা ভাবা হয়, ততটা জটিলও নয়। নিয়ম জানা থাকলে যে কেউ নিজেই হিসাব করে বের করে ফেলতে পারবেন নেট রান রেট। আর হিসাবের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় সমীকরণও বের করা ফেলা যায়।

একটি দলের নেট রান রেট হিসাব করা হয় এভাবে—

কোনো টুর্নামেন্টে একটি দলের প্রতি ওভারে গড় রান থেকে তাদের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ যে গড় রান করেছে, তা বাদ দিয়ে।

একটি দলের নেট রান রেট

(দল যত রান করেছে/ যত ওভার ব্যাট করেছে)—(দলের বিপক্ষে যত রান হয়েছে/ যত ওভার বল করেছে)

যদি কোনো দল তাদের পূর্ণ ওভারের আগে অলআউট হয়ে যায়, তাহলে তাদের রান রেট হিসাব করা হবে তাদের প্রাপ্য সম্পূর্ণ ওভারের ভিত্তিতে। অর্থাৎ ৫০ ওভারের ম্যাচে কোনো দল ২০ ওভারে অলআউট হলেও পুরো ৫০ ওভারই যোগ হবে তাদের হিসাবে। ২০ ওভারে ম্যাচে যোগ হবে ২০ ওভার।

শুধুমাত্র সেই ম্যাচগুলোর হিসাব নেওয়া হবে, যেগুলোর ফলাফল হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দল রান তাড়া করার সময় যদি খেলা বন্ধ হয়ে যায় ও  ফল ডিএলএস পদ্ধতিতে নির্ধারিত হয়, তাহলে নেট রান রেটের জন্য দল ১-কে দল ২-এর পার স্কোর (পরিত্যক্ত সময়ের স্কোর) দেওয়া হবে। দ্বিতীয় দল যত ওভার ব্যাট করেছে, প্রথম দলের হিসাবে তত ওভার যোগ হবে।  

আর যদি কোনো ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই ডিএলএস নিয়ম প্রয়োগ হয়ে থাকে, তাহলে নেট রান রেট হিসাবের জন্য দল ১-কে দল ২-এর চূড়ান্ত লক্ষ্য থেকে ১ রান কম দেওয়া হবে। ওভার ধরা হবে যত ওভার দল ২-কে লক্ষ্য পূরণের জন্য দেওয়া হয়েছিল।

বিশেষ নিয়ম

·        যদি কোনো দল সব উইকেট হারিয়ে ফেলে, তাহলেও ধরে নেওয়া হয় তারা পুরো ওভার ব্যাট করেছে (যেমন ৫০ ওভার)।·        যেসব ম্যাচে ফলাফল হয়নি (পরিত্যক্ত), সেগুলো ধরা হয় না।·        যদি ডিএলএস নিয়মে ফল হয়, তখন কিছু বিশেষ নিয়ম মানতে হয় রান ও ওভার হিসাব করার সময়।

উদাহরণ হিসেবে ২০২৫ এশিয়া কাপে প্রথম দুই ম্যাচ শেষ বাংলাদেশের নেট রান রেট কীভাবে হিসাব করা হয়েছে দেখানো হলো।

বাংলাদেশের মোট রান ও ব্যাটিং ওভার
হংকংয়ের বিপক্ষে:
১৪৪ রান (৩ উইকেটে), ১৭.৪ ওভার
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে:
১৩৯ রান (৫ উইকেটে), ২০ ওভার
মোট রান:
১৪৪‍+১৩৯ = ২৮৩ রান
মোট ওভার:
১৭.৪‍+২০ = ৩৭.৪ ওভার
৩৭.৪ ওভার = ১৩৭ + ৪/৬ =৩৭.৬৬৭ ওভার
দলের রান রেট (For) = ২৮৩/ ৩৭.৬৬৭= ৭.৫১৩ রান/ওভার

প্রতিপক্ষের রান ও হিসাবযোগ্য ওভার
প্রতিপক্ষ যা করেছে
হংকং
১৪৩ রান (৭ উইকেটে), ২০ ওভার
শ্রীলঙ্কা
১৪০ রান (৪ উইকেট), ১৪.৪ ওভার
মোট রান:
১৪৩‍+১৪০= ২৮৩ রান
হিসাবযোগ্য ওভার:
২০‍+১৪.৪ = ৩৪.৪ ওভার
৩৪.৪ ওভার=৩৪‍+৪/৬=৩৪.৬৬৭ ওভার
প্রতিপক্ষের রান রেট (Against) = ২৮৩/৩৪.৬৬৭ = ৮.১৬৩ রান/ওভার

চূড়ান্ত হিসাব: নেট রান রেট (NRR)

দলের রান রেট − প্রতিপক্ষের রান রেট= ৭.৫১৩ −৮.১৬৩ = -০.৬৫০অর্থাৎ প্রথম দুই ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের নেট রেট রান -০.৬৫০।

সুপার ফোরে উঠতে বাংলাদেশকে কী করতে হবে

জাকেররা কি পারবেন সুপার ফোরে উঠতে?‘

গতকাল শ্রীলঙ্কা হংকংকে হারিয়ে দ্বিতীয় জয় পাওয়ায় কঠিন হয়ে গেছে বাংলাদেশের সুপার ফোরে ওঠার হিসাব। আজ হেরে গেলে বাংলাদেশ বিদায় নেবে এশিয়া কাপ থেকে। ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে বাজে নেট রেটের কারণে বাংলাদেশের বিদায় নেওয়ার শঙ্কাই বেশি। সে ক্ষেত্রে আফগানিস্তান শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ভয়াবহরকম বাজেভাবে না হারলে বাংলাদেশের কোনো সম্ভাবনা নেই।

আজ বাংলাদেশ জিতলেও অবশ্য তাকিয়ে থাকতে হবে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে। সে ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবারে সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা জিতলে সুপার ফোরে উঠবে বাংলাদেশ, বাদ পড়বে আফগানিস্তান। আর আফগানরা জিতলে পয়েন্ট সমান হয়ে যাবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের। তখন আসবে নেট রান রেটের হিসাব।