
কেউ বলতে পারেন পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন কুশল মেন্ডিস। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে তাঁর ১২৪-এর সবচেয়ে কাছাকাছি রান অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কার ৫৮। মেন্ডিস সেঞ্চুরি না করলে তো শ্রীলঙ্কার রান ২৮৫ হওয়ার কথা নয়! বাংলাদেশও সেটি তাড়া করতে নেমে এভাবে হেরে যেত না।
আসলেই কি তা? পাল্লেকেলের ব্যাটিং উইকেটে প্রতিপক্ষকে কম রানে আটকাতে হলে বোলিং-ফিল্ডিং হতে হতো অসাধারণ মানের। বিশেষ করে বোলিংয়ে বিশেষ কিছু না করলে এখানে রান থামানো কঠিন। সে তুলনায় বাংলাদেশের নির্বিষ বোলিংয়ের সামনেও শ্রীলঙ্কার ২৮৫ কমই বলতে হয়। তবু সেই রান তাড়া করতে গিয়েই ৩৯.৪ ওভারে ১৮৬ রানে অলআউট হয়ে ৯৯ রানে হার। বোলাররা যেমন বাড়তি কিছু করতে পারেননি, ব্যাটিং উইকেটে ব্যাটসম্যানরাও যেন ভুলে গিয়েছিলেন রান করা। ২-১ এ ওয়ানডে সিরিজ হেরে আগামীকাল বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচও খেলবে এ মাঠেই।
বাংলাদেশের ইনিংসে একমাত্র ফিফটিটি তাওহিদ হৃদয়ের। কিন্তু এমন উইকেটে ২৮৫ তাড়া করার ম্যাচে ৭৫ বলে করা ফিফটির কী মূল্য কে জানে! দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান (৭৮ বলে ৫১) করা ব্যাটসম্যানেরই যখন এই অবস্থা, বাকিদের অবস্থা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। কোনো বড় জুটি নেই, বলার মতো বড় ইনিংস নেই; যেটা শ্রীলঙ্কাকে কিছুটা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ‘উপহার’ দিতে পারত। বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে হতাশ খোদ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের এক কর্মকর্তা, ‘লড়াই-ই করতে পারল না বাংলাদেশ। এ রকম ম্যাচ দেখে আনন্দ নেই।’
অবশ্য শ্রীলঙ্কার শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানদেরও হয়েছিল একই দশা। উইকেট পড়ছিল, বড় জুটিও দাঁড়াচ্ছিল না। মাত্র ৬ বলের ইনিংসেই অস্বস্তিতে ভোগা মাদুস্কাকে স্লিপে নাজমুল হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে ১৩ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙ্গেন পেসার তানজিম হাসান। ৬৯ ও ১০০ রানের মাথায় বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম ও অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ দূর করেন আরও দুই বড় বাধা পাতুম নিশাঙ্কা আর কামিন্দু মেন্ডিসকে। প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে কামিন্দু মেন্ডিসের স্ট্রাইক রেটই সর্বোচ্চ ৮০। শ্রীলঙ্কার শুরুর স্থবির ছবিটা পাওয়া যায় এখানে থেকেও।
২১ ওভারে ১০০/৩ থেকে তারা যে শেষ পর্যন্ত ২৮৫/৭ করে ফেলল, তাতে আসলেই দারুণ ফর্মে থাকা কুশল মেন্ডিসের সেঞ্চুরির বড় অবদান। এবং সেই সেঞ্চুরিতে ‘অবদান’ বাংলাদেশের বোলার, ফিল্ডারদের। এমন নয় যে, খুব বাজে বোলিং করেছেন বোলাররা। এমনও নয় ফিল্ডিং একেবারে কিছুই হয়নি। এখানেই আসলে পাল্লেকেলের উইকেট নিয়ে ওই কথাটা চলে আসে। ব্যাটসম্যানরা ভুল না করলে এই উইকেটে বোলারদের বিশেষ কিছুই করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের বোলিং আবারও প্রমাণ করল, উইকেটের সাহায্য না পেলে তাদের বিষদাঁত বের হয় না। সঙ্গে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ের ঢিলেঢালাভাবের যোগফলে মিরাজ (৪.৮০) ছাড়া বোলারদের কারও ইকোনমি রেটই ৫-এর নিচে নয়।
সেটা নামতে দেননি মূলত ১৮টি বাউন্ডারিতে ১১৪ বলে ১২৪ রান করে যাওয়া কুশল মেন্ডিসই। ১০০ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর ২২তম ওভারে আসালাঙ্কার (৬৮ বলে ৫৮) সঙ্গে জুটি বেঁধে চতুর্থ উইকেটে যোগ করেছেন ১২৪ রান। শ্রীলঙ্কার শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানদের ভুলে ম্যাচে বাংলাদেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ নিলেও বোলাররা তা ধরে রাখতে পারেননি। এই দুই ব্যাটসম্যানই তা কেড়ে নেন।
তাসকিনের লো ফুল টসে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আসালাঙ্কা। এরপর জানিত লিয়ানাগে আর দুনিত ভেল্লালাগের সঙ্গে ছোট দুটি জুটি হয়েছে কুশলের। বাংলাদেশের বোলারদের সাদামাটা বোলিংয়ের মধ্যেও কুশলকে ক্যারম বলে ফিরতি ক্যাচ বানানো শামীম হোসেন কিছুটা প্রশংসা পাবেন। তবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ ওই উইকেটটার জন্যই, নইলে ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ইকোনমি রেট তো তাঁরই সবচেয়ে বেশি (৭.৫০)!
এই ম্যাচে বাংলাদেশের যে বোলারকে নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, তিনি অবশ্য কাল দলেই ছিলেন না—রিশাদ হোসেন। তানভীর আগের ম্যাচে ৫ উইকেট পেলেও সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচে পাল্লেকেলের উইকেটে তাঁর চেয়ে একজন লেগ স্পিনার ভালো পছন্দ হতে পারতেন কিনা, প্রেসবক্সে সে প্রশ্ন তুলেছেন শ্রীলঙ্কার সাংবাদিকেরাও।
পাল্লেকেলের উইকেট সম্পর্কে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং কোচ তিলিনা কান্দাম্বি আর বাংলাদেশের ওপেনার পারভেজ হোসেন আগের দিন যা বলে ছিলেন, তাতে এখানে ২৮৫ খুব বেশি রান নয়। বিশেষ করে আধুনিক ওয়ানডেতে যেখানে ৩৫০-ও নিরাপদ নয়, সেখানে ৩০০-এর নিচে রান থাকা মানে পরে ব্যাট করা দলকে ম্যাচ জয়ের আমন্ত্রণ জানানো।
তা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করলে তো! ওদিকে শ্রীলঙ্কার বোলাররাও জানতেন এখানে ভালো জায়গায় বল করে যাওয়াই ব্যাটসম্যানদের ওষুধ। উইকেট কিছু দেবে না, উইকেট থেকে নিজেদেরই কিছু নিতে হবে। কাজেই বাংলাদেশ শুরু থেকেই খোঁড়াতে থাকল এবং শেষ পর্যন্তও আর সোজা হতে পারল না।
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮৫/৭ (কুশল ১২৪, আসালাঙ্কা ৫৮, নিশাঙ্কা ৩৫, হাসারাঙ্গা ১৮*; মিরাজ ২/৪৮, তাসকিন ২/৫১, শামীম ১/৩০, তানজিম ১/৪১, তানভীর ১/৬১)। বাংলাদেশ: ৩৯.৪ ওভারে ১৮৬ (হৃদয় ৫১, মিরাজ ২৮, পারভেজ ২৮, জাকের ২৭; আসিতা ৩/৩১, চামিরা ৩/৫১, ভেল্লালাগে ২/৩৩, হাসারাঙ্গা ২/৩৫)। ফল: শ্রীলঙ্কা ৯৯ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচও সিরিজ : কুশল মেন্ডিস। সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে শ্রীলঙ্কা ২–১ ব্যবধানে জয়ী।