একেবারে উল্টো অভিজ্ঞতা। গত মৌসুমে দাপটের সঙ্গে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়া কলকাতা নাইট রাইডার্স আগেভাগেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছে। কাল চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও কলকাতার ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হলে বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় কলকাতার। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচ খেলা কলকাতা জিতেছে ৫টিতে। আর কালকে পরিত্যক্ত না হয়ে তারা জিতে গেলেও প্লে-অফে ওঠা কলকাতার জন্য অসম্ভব সমীকরণই ছিল। ঠিক কী কারণে এবারের আইপিএলে বর্তমানে চ্যাম্পিয়নদের এমন দুর্দশা—
ফিল সল্ট ও সুনীল নারাইনের ওপেনিং জুটি কলকাতার ২০২৪ সালের শিরোপা জয়ের বড় ভূমিকা রেখেছিল। দুজনের আগ্রাসী ব্যাটিং শুরুতেই প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করত। কিন্তু এবার সল্ট না থাকায় সেই ছন্দটাই হারিয়ে যায়।
এবার নারাইনের সঙ্গে বেশির ভাগ ম্যাচে ওপেন করেছেন কুইন্টন ডি কক। ৭ ম্যাচ খেলে এই ওপেনার রান করেছেন ১৪৩। নারাইনও এবার জ্বলে উঠতে পারেননি। ১১ ইনিংস রান করেছেন ২১৫, একটি ফিফটিও পাননি। আরেক ওপেনার গুরবাজ ৫ ইনিংসে রান করেছেন মাত্র ৭৪। ইনিংসের শুরুতে দ্রুত উইকেট হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি কলকাতার মিডল অর্ডার। তাতে প্রভাব পড়ে পুরো ব্যাটিং ইউনিটে। সেই চাপ গিয়ে পড়ে বোলারদের ওপরও।
২০২৪ মৌসুমে নেতৃত্ব দিয়ে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন শ্রেয়াস আইয়ার। তবে দলকে চ্যাম্পিয়ন করার সব কৃতিত্ব পেয়েছেন গৌতম গম্ভীর। এবার তাই আইয়ার কলকাতাতে থাকতে চাননি। অন্যদিকে এই আইয়ারই এবার পাঞ্জাব কিংসকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দুর্দান্ত সফল হয়েছেন। তাঁর দল আছে পয়েন্ট তালিকার তিনে।
ব্যাটসম্যান আইয়ারকেও মিডল অর্ডারে মিস করেছে কলকাতা। ১১ ম্যাচে পাঞ্জাবের আইয়ারের গড় ৫০.৬২। স্ট্রাইকরেট ১৮০.৮০, রান করেছেন ৪১০। এবার কলকাতার হয়ে সর্বোচ্চ রান যিনি করেছেন, সেই অজিঙ্কা রাহানের রানই ৩৭৫।
২৩.৭৫ কোটি টাকায় আইপিএলের ইতিহাসে কলকাতার সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার হন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। কিন্তু পুরো মৌসুমে ১১ ম্যাচে মাত্র ১৪২ রান করে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন এই বাঁহাতি। যদিও নিজে বলেছিলেন, দাম নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করেননি, তবে তার ব্যাটিং সেই কথা বলছে না। ফর্মহীনতা, শরীরী ভাষায় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি—সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন কলকাতার ব্যাটিং দুর্দশার প্রতিচ্ছবি। এত বড় বাজেটের খেলোয়াড় থেকে এমন বাজে পারফরম্যান্স পুরো কলকাতা ম্যানেজমেন্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এবার কলকাতা পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আন্দ্রে রাসেল, রিংকু সিং বা রামানদীপ সিং—তাঁরা উইকেটে এসেছেন দেরিতে। ম্যাচের গতি বদলে দেওয়ার মতো খেলোয়াড়দের সঠিক সময়ে নামানোর জায়গায় কেকেআর পিছিয়ে ছিল অন্যদের তুলনায়। যার ফলে মিডল ও লোয়ার অর্ডারে ধারাবাহিকভাবে গড়পড়তা সংগ্রহেই আটকে গেছে দল।
সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেল, অজিঙ্কা রাহানের মতো অভিজ্ঞদের ওপর বেশি নির্ভর ছিল কলকাতা। উদাহারণ হিসেবে পাঞ্জাবের কথা বলা যেতে পারে। এই দলটি এবার প্রিয়াংশ আর্য, প্রভসিমরন সিংদের মতো তরুণদের ওপর ভরসা করেছে। সফলও হয়েছে। তবে কলকাতা পুরোনো সূত্রের বাইরে গিয়ে নতুনদের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। বছরের পর বছর ধরে তাদের ভরসা শুধু নারাইন, রাসেলরাই।