
জো রুট ও বেন স্টোকসই হয়তো সবচেয়ে খুশি। অবশেষে যে মিলল অধরা জয়ের স্বাদ! দুই কিংবদন্তি মিলে ইংল্যান্ডকে অনেক দিয়েছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জয়টাই পাওয়া হচ্ছিল না। মেলবোর্ন টেস্ট ছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে রুটের ১৮তম টেস্ট, স্টোকস ১৩।
মেলবোর্নে আজ অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ৪ উইকেটে জয়ের মধ্য দিয়ে এই খরা কাটালেন দুজন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০১১ সালের জানুয়ারির পর এটাই প্রথম টেস্ট জয় ইংল্যান্ড। প্রায় ১৫ বছর ও দিনের হিসাবে ৫৪৬৮ দিন পর এবং ১৬ হার ও ২ ড্রয়ের পর আরাধ্য এই জয় পেল ইংল্যান্ড।
পার্থে প্রথম টেস্টের পর মেলবোর্নে চতুর্থ টেস্টও শেষ হলো দুই দিনে। পার্থ টেস্ট শেষ হয়েছিল ৮৪৭ বলে, মেলবোর্নে লাগল ৮৫২ বল। অ্যাশেজে এর চেয়ে কম বলে টেস্ট শেষ হয়েছে মাত্র ৩টি।
সব মিলিয়ে এবারের অ্যাশেজের প্রথম ৪ টেস্ট শেষ হলো ১৩ দিনে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুই দিনে শেষ হওয়া চতুর্থ টেস্ট এটি। প্রথমটি হয়েছিল এই মাঠেই, ১৯৩১ সালে। ৯৪ বছর পর মেলবোর্নে কোনো টেস্ট শেষ হলো দুই দিনে। অ্যাশেজে এক সিরিজে দুটি টেস্ট দুই দিনে শেষ হলো ১২৯ বছর পর।
ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের লক্ষ্য ছিল ১৭৫ রানের। এই ম্যাচে আগের তিন ইংনিসের ব্যাটিং জানা থাকলে লক্ষ্যটা বড় মনে হওয়াই স্বাভাবিক। আগের তিন ইনিংসে এত রান কোনো দলই করতে পারেননি। এমন লক্ষ্য টপকে যেতে ইংল্যান্ডের একটা ভালো শুরুর দরকার ছিল। পুরো সিরিজে ইংলিশ দুই ওপেনার ভালো শুরু এনে দিতে ব্যর্থ হলেও আজ পেরেছেন। জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট মিলে তোলেন ৫১ রান। ২৬ বলে ৩৪ রান করে স্টার্কের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড হন ডাকেট।
ছোট লক্ষ্যে একটা ‘ক্যামিও’ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেটা খেলতে বোলার ব্রাইডন কার্সকে তিনে পাঠায় ইংল্যান্ড। তিনি অবশ্য সফল হতে পারেননি। আউট হন ৬ রান করে, ঝাই রিচার্ডসনের বলে।
দলীয় ১১২ রানে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে ফেরেন ক্রলি, স্কট বোল্যান্ডের বলে এলবিডব্লু হন। ইংল্যান্ড তখন এগোচ্ছিল প্রথমবার অ্যাশেজ খেলা জ্যাকব বেথেলের ব্যাটে। তবে দলীয় ১৩৭ রানে বোল্যান্ডের বলে আউট হন বেথেল (৪০)। রুটও খেলা শেষ করতে পারেননি। ১৫ রান করে রিচার্ডসনের বলে এলবিডব্লু হন। এরপর উইকেট দিয়ে আসেন স্টোকসও (২)। তবে জেমি স্মিথ (৩*) ও হ্যারি ব্রুক (১৮*) ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন।
এর আগে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৩২ রানে। বিনা উইকেটে ৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া দলীয় ২২ রানে হারায় প্রথম উইকেট। ‘নাইটওয়াচম্যান’ ওপেনার স্কট বোল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ৬ রানে।
ব্যর্থ হন তিনে খেলা জ্যাক ওয়েদারাল্ড, তাঁকে ৫ রানে ফেরান স্টোকস। সেঞ্চুরি করতে ভুলে যাওয়া লাবুশেনও হয়েছেন আবার ব্যর্থ, টাংয়ের বলে আউট হন ৮ রানে। ওপেনার ট্রাভিস হেড ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন।
দলীয় ৮২ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে কার্সের বলে ফেরেন হেড। এরপর উসমান খাজা, অ্যালেক্স ক্যারিরাও ব্যর্থ। অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ এক পাশে পড়ে ছিলেন, কিন্তু কঠিন উইকেটে অন্যরা সমর্থন দিতে পারেননি। স্মিথ অপরাজিত ছিলেন ২৪ রানে। হেড, স্মিথ ছাড়া এই ইনিংসে দুই অঙ্কের ঘরে রান করেছেন শুধু ক্যামেরন গ্রিন, ১৯ রান।
প্রথম ইনিংসে ৪৫.২ ওভার খেলা অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে পারে ৩৪.৩ ওভার। দুই ইনিংসে মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া খেলতে পেরেছে ৭৯.৫ ওভার—৪৭৯ বল। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসে ১৯০০ সালের পরে যা চতুর্থ সর্বনিম্ন। দুই ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া রান করেছে ২৮৪, এই শতকে অস্ট্রেলিয়ার এটি দুই ইনিংস মিলিয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
৪ জানুয়ারি সিডনিতে শুরু হবে পঞ্চম ও শেষ টেস্ট। সিরিজে ৩–১ ব্যবধানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়া: ১৫২ ও ১৩২ (হেড ৪৬; স্মিথ ২৪*; কার্স ৪/৩৪, স্টোকস ৩/২৪)
ইংল্যান্ড: ১১০ ও ১৭৮/৬ (বেথেল ৪০, ক্রলি ৩৭; রিচার্ডসন ২/২২, বোল্যান্ড ২/২৯)।
ফল: ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: জশ টাং