পন্ত চাইলেও ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা ভুলতে পারবেন না
ঋষভ পন্তকে বিসিসিআই আনুষ্ঠানিকভাবে ফিট ঘোষণা করে গতকাল। বিসিসিআই যখন এই ঘোষণা দেয়, তখন আইপিএলের দল দিল্লি ক্যাপিটালসে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পন্ত।
ভাইজাগে যেতে বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে পন্ত ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে ভারতের এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মাঠে ফেরার জন্য তাঁর ১৪ মাসের লড়াই নিয়ে কথা বলেছেন। পন্তের কাছে তাঁর সেরে ওঠার প্রক্রিয়াটা ছিল একটি ভালো টেস্ট ইনিংস খেলার মতো।
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিল্লি-দেরাদুন মহাসড়কে দুর্ঘটনার শিকার হন পন্ত। খেলতে পারেননি ২০২৩ আইপিএল, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপ মিস করা পন্তের জন্য স্বাভাবিকভাবেই হতাশার ছিল। বিশ্বকাপের আগে ফিট হওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি, তবে পারেননি।
বিশ্বকাপ না খেলতে পারা প্রসঙ্গে পন্ত বলেছেন, ‘এটা অনেক হতাশার ছিল। জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির সঙ্গে আলোচনা করে আমরা বিশ্বকাপকে ফেরার লক্ষ্য বানিয়েছিলাম। সবাই ২০০ শতাংশ দিয়েছি। তবে আমার হাঁটু চাপ নিতে পারেনি। ওই সময়টা থেকেই আমি নিজেকে আরও চাপ দিতে শুরু করি। যখন আপনি ছোট লক্ষ্য ঠিক করবেন, সেটা আরও উদ্যমী করতে সাহায্য করবে। এটা ভালো টেস্ট ইনিংস খেলার প্রক্রিয়ার মতো।’
Also Read: আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ, ‘সিরিয়াস’ শ্রীলঙ্কা
পন্ত কি ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা ভুলতে পেরেছেন? উত্তরে বলেছেন, ‘আমি চাইলেও সেই ঘটনা ভুলতে পারব না। আমি ওই ঘটনা সম্পর্কে খুব বেশি ভাবতে চাই না, আক্ষেপ করতে চাই না, যেন এটা আমাকে হতাশ না করে। খুব হালকাভাবে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমি কী করতে পারব, নিজের কতটা উন্নতি করতে পারব, সেদিকে মনোযোগ দিয়েছি।’
বিশ্বকাপের আগে ফিট না হতে পারা পন্ত এরপর ফেরার জন্য লক্ষ্য বানান ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজকে। কিন্তু এই সিরিজেও ফিরতে পারেননি। ভারতও অবশ্য দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেটে পন্তকে দ্রুতই ফিরিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি। তারা চেয়েছে পন্ত টি-টোয়েন্টি দিয়েই ফিরুক। এ নিয়ে পন্ত বলেন, ‘ইংল্যান্ড সিরিজের আগে ফিট হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। বিসিসিআই দীর্ঘ সংস্করণে খেলানোর জন্য তাড়াহুড়ো করেনি। তারা ধীরে ধীরে কাজের চাপ বাড়িয়েছে। কেউ যদি আপনার পাশে এভাবে থাকে, আপনার প্রশংসা করতেই হবে। তাদের পরামর্শ ছিল, আমি আগে টি-টোয়েন্টিতে ফিরি, এরপর যেন কাজের চাপ বাড়াই।’
এবারের আইপিএল দিয়ে দীর্ঘ ১৪ মাস পর মাঠে ফিরবেন পন্ত। এমনিতেই টুর্নামেন্টটি পন্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আইপিএলের পরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তাই এবারের আইপিএলের গুরুত্ব বেড়েছে আরও। পন্ত বলেছেন, ‘২৩ মার্চ কী হয় দেখি (দিল্লির প্রথম ম্যাচ)। আমি জানি না কেমন করব। জানি না আমার অনুভূতি কী হবে। উপভোগ করার চেষ্টা করছি, চাপ নিতে চাই না। তবে ভালো-মন্দ দুটো সম্ভাবনা নিয়েই আমি ভাবি।’
পন্তকে এক বছরের বেশি সময় থাকতে হয়েছে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে। কঠিন সেই সময় কীভাবে পার করেছেন, তা নিয়ে বলেছেন, ‘বেশির ভাগ সময়েই আমি ভিভিএস লক্ষ্মণের সঙ্গে জীবন নিয়ে কথা বলেছি। খুবই হতাশ ছিলাম। কেউ আমার সঙ্গে কথা বলতে এলেও হতাশ লাগত। অন্যের কোনো দোষ না থাকার পরও অনেক সময় সেটা প্রকাশও করে ফেলতাম।’
পন্ত আরও বলেছেন, ‘ যখন আমার দুর্ঘটনা ঘটে, আমার মনে হয়েছে ঐশ্বরিক কিছু আমাকে বাঁচিয়েছে। আমি শুধু হাঁটুতে চোট পেয়েছি, যে দুর্ঘটনা ঘটেছে কল্পনাও করতে পারি না, এর চেয়ে কতটা খারাপ হতে পারত। ডাক্তার এমনকি অঙ্গছেদের (পা কাটা) কথাও বলেছে।’
Also Read: রোহিতের জন্য ‘মাঠে জীবন দিতে’ পারেন অশ্বিন