Thank you for trying Sticky AMP!!

তাসকিনের দ্বিতীয় উইকেটটা ম্যাচের অন্যতম সেরা দৃশ্য

দুই দলের শক্তির তুলনামূলক বিচারে জয়টা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে এমন জয়ও যে দলকে এত আনন্দ দিতে পারে, সেটি দেখে ভালো লাগছিল। সবকিছু মিলিয়ে এ জয়টা অনেক স্বস্তির। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে জয়ের জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। খেলোয়াড়েরা একটা অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেয়েছে, খেলাটা উপভোগ করেছে। আশা করি, হোবার্টের কনকনে ঠান্ডার মধ্যে এমন একটা জয় উষ্ণতা ছড়াবে।

টসে হেরে এমন কন্ডিশনে ব্যাটিং করতে নেমে একটা অস্বস্তি ছিল। আমাদের ওপেনাররা যেমন তুলনামূলক ভালো একটা শুরু এনে দিয়েছে, ডাচ পেসাররাও কন্ডিশনের ফায়দা তেমন তুলতে পারেনি। লাইন লেংথের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। আগের লেখাতেও পল ফন মিকেরেনের কথা বলেছিলাম। আমার ধারণা, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের কারণে এ পেসার এবার নজর কাড়বে।

ভালো শুরুর পর মিডল অর্ডারের ধসে সংশয়টা বেড়েছিল স্বাভাবিকভাবেই। ব্যাটিংয়ের দুই স্তম্ভ লিটন ও সাকিব রান করতে পারল না, আফিফ ও নুরুলও তেমন ফর্মে নেই। তবে আফিফের দাপুটে ব্যাটিংয়ের অ্যাপ্রোচ ভালো লেগেছে, দলকে ওই সময়ে ছিটকে যেতে দেয়নি।

Also Read: নেদারল্যান্ডসকে ৯ রানে হারিয়ে বাংলাদেশের ‘প্রথম’

সবশেষে পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী দায়িত্ব নিয়ে মোসাদ্দেক সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আত্মবিশ্বাস এনে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ১৪৪ রানে হয়তো আমাদের সামর্থ্যের প্রতিফলনটা পড়েনি, কিন্তু মোসাদ্দেকের অবদানে এত দূর যাওয়ার পর বোলারদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে যে লড়াইটা করা যাবে।

তাসকিনের বলটা অনেকটা গতকাল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের বোলিংয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে

প্রথম ওভারে তাসকিনের প্রথম বলেই উইকেটটা কয়েকটা জিনিসের সংমিশ্রণ। ওর লাইন আর লেংথ, ওভার দ্য উইকেট থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলের পর ইয়াসিরের ক্যাচটি। প্রথম বলে হয়তো অনেকেই একটু অপ্রস্তুত থাকে, সেখানে সামনে ঝুঁকে নেওয়া ক্যাচটি। তাসকিনের বলটা অনেকটা গতকাল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের বোলিংয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে। অনেক সময় তাসকিন গতির সঙ্গে লাইন লেংথের সমন্বয় করতে পারে না। এখানে সে দারুণ করেছে।

অনেক সময় প্রথম বলে উইকেট পেয়ে গেলে বোলাররা একটু আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। তবে দ্বিতীয় যে বলটা, বাঁহাতির পর ডানহাতির সামনে স্টাম্পের বাইরে করল, যাতে শট খেলতে যায় ব্যাটসম্যান। লেংথ প্রায় একই ছিল, কিন্তু লাইনের ক্ষেত্রে এই যে সমন্বয় করে বড় পরিবর্তন, এটা দুর্লভ। অনেক সময়ই বোলাররা গড়বড় করে ফেলে। আমার মতে, এটি ছিল ম্যাচের অন্যতম সেরা দৃশ্য।

Also Read: সেই জয়টা তো এলো, এখন...

শুরুর ওই ধাক্কার পর নেদারল্যান্ডস একটু অতি উৎসাহী হয়ে পড়েছিল রানের খোঁজে। ম্যাক্স ও’ডাউড ওই শটটা খেলে হয় ভেবেছিল আস্তে খেলেছে, কিন্তু বলটা আসলে জোরে গেছে। অথবা ভাবতে পারেনি, আফিফ এত দ্রুত বলের ওপর চলে আসবে। এমন একটা জায়গায় হিসাবে গড়বড় হয়ে গেছে। বাংলাদেশকে ওই রানআউট আরও চড়াও হওয়ার সুযোগ করে দেয়। সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে আফিফ। মসৃণভাবে হয়েছে। জয়ের আকাঙক্ষাটাও প্রকাশ পেয়েছে।

একটু পরই যে রানআউট আসে, সেটিও দারুণ। টম কুপার রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে একটু স্লো, তারপরও ওরা হয়তো ভেবেছিল, শান্ত স্লাইড করে ফিল্ডিং করার পর এত দ্রুত বলের কাছে ফিরে এসে এমন থ্রো করতে পারবে না, যে থ্রো প্রায় নিখুঁত ছিল। এখানেও ভুল করেছে ওরা, সেটির মূল্য দিতে হয়েছে।

মাঝে ইনিংস পুনর্গঠনের চেষ্টা সফল হয়নি হাসান মাহমুদের দারুণ আঁটসাঁট বোলিংয়ে

রানআউট কোনো ব্যাটিং দলই পছন্দ করে না। অন্যদিকে রানআউট ফিল্ডিং দলকে দারুণ উজ্জীবিত করে, যখন কিনা সংগ্রহ মাত্র ১৪৪ রান। মাঝে ইনিংস পুনর্গঠনের চেষ্টা সফল হয়নি হাসান মাহমুদের দারুণ আঁটসাঁট বোলিংয়ে। অ্যাকারম্যানের চেষ্টার অবশ্য প্রশংসা করতে হয়।

Also Read: টেস্টের বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টির সেরা তাসকিনের

মোস্তাফিজের ক্ষেত্রে হয়তো প্রত্যাশা এখন একটু কম, তবে আজ প্রথম স্পেলে উইকেট ধরে বোলিং করেছে বেশ নিখুঁত। প্রয়োজনীয় রানরেটে নেদারল্যান্ডস অনেকটা পিছিয়ে যায় সেখানেই। শেষ ওভারে এসে তাসকিনের আবার জোড়া আঘাত আসলে নেদারল্যান্ডসকে প্রায় শেষ করে দিয়েছে।

একজন কম বোলার নিয়ে সাকিব ডেথ ওভারে কীভাবে সামলায় বোলারদের, সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মোসাদ্দেক ১ ওভার খরুচে বোলিং করে হিসাবের বাইরে চলে গেল। সৌম্য সরকারের ওপর কতটা ভরসা করা যায়, সেটি নিয়ে সংশয় থেকে গেছে। ডেথ ওভারে দুর্বলতার কারণেই ম্যাচটি এত দূর এসেছে। শেষ যখন ২ বলে ১২ রান দরকার, তখনো কিছুটা সংশয় তো তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে গতকাল ভারত-পাকিস্তানের অমন একটা ম্যাচের স্মৃতি যখন তরতাজা।

আগেও বলেছি, পাঁচজন বোলার নিয়ে খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ম্যাচে যে মোমেন্টাম পেলাম, সেটি সামনের ম্যাচে কাজে লাগবে আশা করি। অনেক অনুপ্রেরণামূলক পারফরম্যান্স আছে—ব্যাটিং ও বোলিংয়ের শুরুটা, বোলিংয়ের মাঝের অংশ।

তবে ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু হলেও মাঝে মোমেন্টামটা ধরে রাখতে হবে। সাকিব বোলিংয়ে সেভাবে উজ্জ্বল ছিল না, তার উন্নতি হবে আশা করি। মোমেন্টাম যেহেতু পেয়েছি, আশা করি আরও উন্নতি করব। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলেও এটি আত্মবিশ্বাস জোগাবে। আপাতত বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন।

Also Read: সাকিবের বিশ্বাস ছিল বোলাররা ম্যাচ জেতাবেন