ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট কোন ১০ বোলারের

ওয়ানডে ক্রিকেটের বয়স ৫৪ বছর পেরিয়েছে। টি–টোয়েন্টি আসার আগে ওয়ানডেই ছিল ক্রিকেটের জনপ্রিয় সংস্করণ। এই সংস্করণে কার উইকেট সবচেয়ে বেশি, কোনটি কার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং—এসব পরিসংখ্যান একসময় অনেকেরই মুখস্থ ছিল। টি–টোয়েন্টি এখন সম্ভবত সেই জায়গা নিয়ে নিয়েছে। চলুন, ফিরে তাকাই ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ১০ বোলার কারা—

অনিল কুম্বলে

অনিল কুম্বলে

মোট উইকেট ৩৩৭
ইকোনমি রেট
৪.৩০
সেরা বোলিং
৬/১২
ইনিংসে ৫ উইকেট
২ বার
ওয়ানডে ক্যারিয়ার
১৯৯০–২০০৭

তালিকার দশে আছেন ভারতের অনিল কুম্বলে। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার। বল বেশি টার্ন করাতেন না। তবে নিখুঁত ও সূক্ষ্ম ভেরিয়েশনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলতেন পিচ থেকে পাওয়া সুবিধা কাজে লাগিয়ে। অক্লান্ত পরিশ্রমী এই স্পিনার নিয়মিতই ‘কিপটে’ বোলিং করতেন। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভারতকে উইকেট এনে দিতেন। ওয়ানডেতে তাঁর উইকেট ৩৩৭টি।

লাসিথ মালিঙ্গা

লাসিথ মালিঙ্গা

মোট উইকেট ৩৩৮
ইকোনমি রেট ৫.৩৫
সেরা বোলিং ৬/৩৮
ইনিংসে ৫ উইকেট ৮ বার
ওয়ানডে ক্যারিয়ার ২০০৪–২০১৯

স্লিঙ্গিং অ্যাকশন আর ভয়ংকর ইয়র্কার লাসিথ মালিঙ্গাকে অনন্য করে তুলেছিল। ‘টো ক্রাশার’ বললে এখনো ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে সবার আগে তাঁর ছবি ভেসে ওঠে। বিশেষ করে ইনিংসের শেষ দিকে তাঁর নিখুঁত ইয়র্কার তাঁকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অন্যতম কার্যকর বোলারে পরিণত করেছিল। মাঝেমধ্যে বৈচিত্র্যময় কাটার দিয়েও ব্যাটসম্যানদের বিচলিত করতেন এই লঙ্কান। তিনিই একমাত্র বোলার, যাঁর ওয়ানডেতে তিনটি হ্যাটট্রিক আছে। ওয়ানডেতে টানা ৪ বলে উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলারও তিনি। এই সংস্করণে তাঁর উইকেটের সংখ্যা ৩৩৮।

ব্রেট লি

ব্রেট লি

মোট উইকেট ৩৮০
ইকোনমি রেট
৪.৭৬
সেরা বোলিং
৫/২২
ইনিংসে ৫ উইকেট
৯ বার
ওয়ানডে ক্যারিয়ার ২০০০–২০১২

তীব্র গতি আর আক্রমণাত্মক বোলিং স্টাইল দিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জিতে নিয়েছেন ব্রেট লি। ব্যাটসম্যানদের ভড়কে দেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা ছিল অস্ট্রেলিয়ার এই ফাস্ট বোলারের। এটিই তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছে। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে নিয়মিতই উইকেট এনে দিতেন। বিশেষ করে প্রথম পাওয়ারপ্লে ও ডেথ ওভারে তাঁর স্পেল অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল। ৩৮০ উইকেট নেওয়া ব্রেট লি ওয়ানডে ইতিহাসের অষ্টম সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

গ্লেন ম্যাকগ্রা

গ্লেন ম্যাকগ্রা

মোট উইকেট ৩৮১
ইকোনমি রেট
৩.৮৮
সেরা বোলিং
৭/১৫
ইনিংসে ৫ উইকেট
৭ বার
ওয়ানডে ক্যারিয়ার ১৯৯৩–২০০৭

নিখুঁত লাইন–লেংথ ও সূক্ষ্ম সিম মুভমেন্টের জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছিল গ্লেন ম্যাকগ্রার। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি এই পেসারের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ছোটখাটো ভুলেও আউট হতেন ব্যাটসম্যানরা। ক্যারিয়ারে বহুবার প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপ তিনি একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (৩৮১) ম্যাকগ্রা এই তালিকায় আছেন ৭ নম্বরে।

শন পোলক

শন পোলক

মোট উইকেট ৩৯৩
ইকোনমি রেট
৩.৬৭
সেরা বোলিং
৬/৩৫
ইনিংসে ৫ উইকেট
৫ বার
ওয়ানডে ক্যারিয়ার ১৯৯৬–২০০৮

আপাদমস্তক ক্রিকেট পরিবারের মানুষ তিনি। দাদা, বাবা, চাচা, চাচাতো ভাইয়েরা ছিলেন ক্রিকেটার। তবে পোলক পরিবারে সবচেয়ে বেশি সুনাম বয়ে এনেছেন শন পোলক। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক এই অধিনায়ক অলরাউন্ডারের ভূমিকায় খেললেও পেস বোলিং দিয়েই ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন। ধারাবাহিকভাবে লাইন–লেংথ ঠিক রেখে বোলিং করতে পারতেন পোলক। ব্যাটসম্যানের রান তোলার কাজটা কঠিন করে তুলতেন। ওয়ানডেতে মাত্র ৩.৬৭ ইকোনমি রেট সেটারই জানান দিচ্ছে। এই সংস্করণে ৩৯৩ উইকেট নিয়ে তিনি আছেন তালিকার ছয়ে।

শহীদ আফ্রিদি

শহীদ আফ্রিদি

মোট উইকেট ৩৯৫
ইকোনমি রেট
৪.৬২
সেরা বোলিং
৭/১২
ইনিংসে ৫ উইকেট
৯ বার
ওয়ানডে ক্যারিয়ার ১৯৯৬–২০১৫

শহীদ আফ্রিদিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তাঁর সময়ে পাকিস্তানে তো বটেই; বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন। ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকেই আফ্রিদির মারকুটে ব্যাটিং দেখার অপেক্ষায় থাকতেন। তবে বল হাতে তিনি ছিলেন বেশি কার্যকর। লেগব্রেক গুগলির সঙ্গে ফ্লিপারও মারতেন নিয়মিত। ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে জুটি ভাঙতে সিদ্ধহস্ত আফ্রিদি ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৩৯৫ উইকেট।

চামিন্ডা ভাস

চামিন্ডা ভাস

মোট উইকেট ৪০০
ইকোনমি রেট ৪.১৮
সেরা বোলিং ৮/১৯
ইনিংসে ৫ উইকেট ৪ বার
ওয়ানডে ক্যারিয়ার ১৯৯৪–২০০৮

তর্কাতীতভাবে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের সেরা বাঁহাতি পেসার চামিন্ডা ভাস। ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা বোলিং ফিগারটা ভাসেরই (২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯ রানে ৮ উইকেট)। কোনো ওয়ানডে ম্যাচের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক করা (২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে) একমাত্র বোলারও তিনি। ’৯৬ বিশ্বকাপজয়ী ভাস ১৪ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে শেষ ম্যাচটি খেলেন ২০০৮ সালে, কলম্বোয় ভারতের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে তিনি যুবরাজ সিংকে আউট করেন, যা ছিল তাঁর ৪০০তম উইকেট।

ওয়াকার ইউনিস

ওয়াকার ইউনিস

মোট উইকেট ৪১৬
ইকোনমি রেট ৪.৬৮
সেরা বোলিং ৭/৩৬
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৩ বার
ওয়ানডে ক্যারিয়ার ১৯৮৯–২০০৩

রিভার্স সুইংয়ের রাজা বলা হতো ওয়াকার ইউনিসকে। উচ্চগতিতে বল ছুড়ে পিচড করার আগমুহূর্তে তীব্র সুইং করাতে পারতেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি এই ফাস্ট বোলার। নিচু স্লিঙ্গিং অ্যাকশন ও বল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর বোলারদের একজন বানিয়েছিল। ওয়ানডেতে ওয়াকারের উইকেটসংখ্যা ৪১৬। এই তালিকায় তাঁর অবস্থান তিনে।

ওয়াসিম আকরাম

ওয়াসিম আকরাম

মোট উইকেট ৫০২
ইকোনমি রেট ৩.৮৯
সেরা বোলিং ৫/১৫
ইনিংসে ৫ উইকেট ৬ বার
ওয়ানডে ক্যারিয়ার ১৯৮৪–২০০৩

বলা হয়ে থাকে, ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে বলকে নিজের বশে এনেছিলেন ওয়াসিম আকরাম। যেভাবে চাইতেন, সেভাবে সুইং করাতে পারতেন। সুইং আর সিম মুভমেন্ট তাঁকে জগদ্বিখ্যাত পেসারের কাতারে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে নতুন বলে ব্যাটসম্যানের জন্য আতঙ্ক হয়ে ছিলেন। ওয়ানডে ইতিহাসে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়া প্রথম বোলার তিনি। থেমেছেন ৫০২ উইকেট নিয়ে। তাঁর দুর্ধর্ষ বোলিংয়ে বহু ম্যাচের মোড় ঘুরে গেছে। একক নৈপুণ্যে পাকিস্তানকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন। ক্যারিয়ারজুড়ে বেশ কিছু স্মরণীয় ডেলিভারি করেছেন। এর মধ্যে ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালে টানা দুই বলে ইংল্যান্ডের অ্যালান ল্যাম্ব ও ক্রিস লুইসকে বোল্ড করার দৃশ্য ক্রিকেট অনুরাগীদের চোখে এখনো লেগে আছে।

মুত্তিয়া মুরালিধরন

মুত্তিয়া মুরালিধরন

মোট উইকেট ৫৩৪
ইকোনমি রেট
৩.৯৩
সেরা বোলিং
৭/৩০
ইনিংসে ৫ উইকেট
১০ বার
ওয়ানডে ক্যারিয়ার ১৯৯৩–২০১১

বোলিংয়ের সময় তাঁর চোখে যেন আগুন জ্বলত। বল নয়; যেন সোনার ধুলা ছুড়তেন, যা ব্যাটসম্যানদের ধন্দে ফেলে দিত। ‘স্পিন জাদুকর’ হিসেবে পরিচিত মুত্তিয়া মুরালিধরন বলকে ইচ্ছেমতো ঘুরিয়ে, ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করে হয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (১৩৪৭)। ওয়ানডের শীর্ষ উইকেটশিকারির তালিকায়ও তাঁর নাম সবার ওপরে (৫৩৪)। শ্রীলঙ্কার হয়ে ’৯৬ বিশ্বকাপজয়ী এই অফ স্পিনার ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় আধিপত্য দেখিয়েছেন।