
কলম্বো হয়ে গল, গল থেকে কলম্বো। কলম্বো থেকে ক্যান্ডি, ডাম্বুলা হয়ে কাল আবার সেই কলম্বোতে। পূর্ণাঙ্গ সিরিজ মানেই এ রকম দীর্ঘ যাত্রা, ক্রিকেট যাযাবরের জীবন। সমুদ্র আর পাহাড়ের দেশ শ্রীলঙ্কায় সেটি দারুণ বৈচিত্র্যময়ও। এই শহরে, ওই শহরে খেলতে খেলতে এক মাসের বেশি হয়ে গেছে বাংলাদেশ দল দ্বীপরাষ্ট্রে। সফরের বাকি আর তিন দিন, একটি ম্যাচ।
উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে কাটা সফরের এই শেষ তিনটি দিন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বলা ভালো ১৬ জুলাইয়ের শেষ ম্যাচটি। আগামীকাল সন্ধ্যায় কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সফরের শেষ ম্যাচে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। ক্যান্ডি-ডাম্বুলা মিলিয়ে ১-১ সমতায় থাকা সিরিজটি জেতার সুযোগ বাংলাদেশেরও থাকছে। লিটন দাসের দলকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে সফরের সেই শেষ স্বপ্ন।
‘শেষ স্বপ্ন’ বলার কারণ, এবারের শ্রীলঙ্কা সফরে একটার পর একটা স্বপ্ন হাতছানি দিয়ে আবার মিলিয়েও গেছে বাংলাদেশের সামনে থেকে। গলে প্রথম টেস্ট ড্র করে শুরুটা ছিল দারুণ, যার পেছনে ছিল দলীয় প্রচেষ্টা। বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টটিতে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন, প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিমও, লিটনের ব্যাটে ৯০। নাঈম হাসান, হাসান মাহমুদদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমান ইসলাম করলেন ৭৬। সব মিলিয়ে চতুর্থ ইনিংসে শ্রীলঙ্কার সামনে ২৯৬ রানের লিড দিয়ে টেস্ট ড্র করার মধ্যে গৌরব ছিল। আর ছিল পরের টেস্টে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখার উপকরণ।
কিন্তু গল থেকে কলম্বোতে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে এসেই বাংলাদেশ অন্য রূপে। ব্যাটিং–ব্যর্থতার করুণ প্রদর্শনীতে চতুর্থ দিন সকালেই ইনিংস ও ৭৮ রানের হার যেন ফিরিয়ে নিয়ে গেল শ্রীলঙ্কায় ‘হারানো দিনের’ সফরগুলোতে। ২ জুলাই কলম্বোতে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ব্যাটিংটা মাথা তুলে দাঁড়াল না। তবু নতুন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে ওয়ানডেতে নতুন দিন শুরুর সম্ভাবনা মিলিয়ে যেতে দেয়নি কলম্বোতেই পাওয়া দ্বিতীয় ওয়ানডের ১৬ রানের জয়। তার মানে আবারও স্বপ্ন। ক্যান্ডির শেষ ওয়ানডে জিতে শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বপ্ন।
তবে পাহাড় আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের শহর ক্যান্ডি যেন বাংলাদেশ দলকে এবার কিছুই দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল। পাহাড়ঘেরা পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে শেষ ওয়ানডেতে ৯৯ রানের বড় হারে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ। পাল্লকেলের ব্যাটিং উইকেটও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে ধরা দিল পাহাড়ের অচেনা বাঁকের মতো। গল টেস্টে ড্র দিয়েছে, কলম্বো দিয়েছে একটি ওয়ানডে জয়। ক্যান্ডি দিল না কিছুই। পাল্লেকেলেতেই সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলে ৭ উইকেটের হারে মন খারাপ করে ডাম্বুলা–যাত্রা।
সিগরিয়ার কারণে বিখ্যাত ডাম্বুলাও পাহাড়ের শহর। মাঠের দুই দিকে মাথা উঁচু করে আছে দুই পাহাড়, আরেক দিকে অপরূপ ইব্বানকাটুয়া লেক। না, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেক লীলাভূমি খালি হাতে ফেরায়নি বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সিরিজে ফেরা ৮৩ রানের বড় জয়ে বাড়তি প্রাপ্তি লিটন দাসের রানে ফেরার স্বস্তি, শামীম হোসেনের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী আর পুরো সিরিজে প্রতাপ দেখিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে শৃঙ্খল পরানোর তৃপ্তি।
কলম্বোতে সফরের শেষাংশটা সে কারণেই এখন জীবন্ত, মনে হচ্ছে না যে ভারত মহাসাগর তীরের শহরে বাংলাদেশ দল কেবলই কয়েকটি দিন কাটাতে ফিরেছে। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশসহ অনেক দেশের মানুষেরই বেড়ানোর জায়গা হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে বেড়ানোর মেজাজে নেই ক্রিকেটাররা। দীর্ঘ সফরের শেষ প্রান্তে এসে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের জন্য সেই সুযোগ রাখেননি এবং তাতেই সার্থকতা।
দেশে ফেরার আগে কলম্বো প্রত্যাবর্তনের অন্তত একটি উদ্দেশ্য তো সামনে রাখা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা থেকে তিন সিরিজের একটি হলেও জিতে দেশে ফেরার স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্য। কাল দুপুরে ডাম্বুলা থেকে সড়কপথে চার ঘণ্টা দূরের রাজধানী শহরে পৌঁছানোর পর ক্রিকেটারদের চওড়া হাসিও যেন সেটাই বলে দিচ্ছিল। কলম্বোতে শুধু দেশে ফেরার বিমান ধরতেই ফিরে আসেননি তাঁরা। উত্থান-পতনের সফরের শেষে এসে দেশের উদ্দেশে উড়ালটাও তাঁরা দিতে চান জয়ের আনন্দ নিয়ে, ইতিবাচক ক্রিকেট যার প্রথম শর্ত।