আফগানিস্তান–শ্রীলঙ্কা ম্যাচ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত সুপার ফোর নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিল বাংলাদেশ দল
আফগানিস্তান–শ্রীলঙ্কা ম্যাচ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত সুপার ফোর নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিল বাংলাদেশ দল

এশিয়া কাপ

আর কত অঙ্ক মেলাবে বাংলাদেশ

গতকাল রাতে খেলেছে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা, তবে ম্যাচের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এই দুই দলের ম্যাচের ফল একটু এদিক-সেদিক হলেই যে এশিয়া কাপ থেকে বাদ পড়ে যেত বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা দল আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশকে নিয়েই সুপার ফোরে উঠেছে। বাংলাদেশের মুক্তি মিলেছে ‘যদি-কিন্তু’ এর সমীকরণ থেকে। কিন্তু আসলেই কি তা-ই?  

যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ—বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের জন্যই শৈশবের দুঃসহ স্মৃতি। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে অনেকেই অঙ্কের কঠিন সব ধাঁধা থেকে বেঁচে যাওয়ার স্বস্তির শ্বাস ছাড়েন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখে গণিতের সমীকরণের পথ পেরোতে হবে না এমন বিষয় খোঁজেন কেউ কেউ।

কিন্তু তিনি যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সমর্থক হন? তাহলে তাঁর আর ওই সুযোগ কই। আগে তো তাও টিউশনিতে গিয়ে আলাদা করে অঙ্কটা বুঝে নেওয়া যেত। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের অঙ্কটা মেলাতে সেই সাহায্যও নেই। উল্টো উচ্চ রক্তচাপ মেপে নেওয়ার মেশিনটা কোথায় আছে, অল্প বয়সেই শুরু করতে হয় সেই খোঁজ।

হৃদয়ে যাঁদের রোগ আছে, তাঁদের শঙ্কা থাকে হার্ট অ্যাটাকের। কে কত রান করলে কী হবে, কার জয়ে কী ক্ষতি—এসব সমীকরণ মেলাতে মেলাতে পার হয় বহু নির্ঘুম রাত। বিশ্বাস হচ্ছে না? ক্রিকেট–সংক্রান্ত কোনো হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করুন। কাল রাতে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপের ম্যাচের আগে-পরেও এমন কত অভিজ্ঞতা ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিতে।

আফগানিস্তানের ইনিংসের শেষ ওভারে মোহাম্মদ নবী যখন ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে দিলেন দুনিত ভেল্লালাগেকে—নবম-দশম শ্রেণির অঙ্কে ফাঁকি দেওয়া ছেলেটাও নিশ্চয়ই বসে গিয়েছিলেন অঙ্ক মেলাতে। এখন যদিও কাজটা সহজ, কোনো এক ব্রাউজারে ক্লিক করলেই ভেসে ওঠে লেখাটা ‘শ্রীলঙ্কা যদি…বাংলাদেশ তাহলে…।’

যদি-কিন্তুর সমীকরণ মেলানো সহজ হয়ে গেলেও ম্যাচের দুশ্চিন্তা কমানোর কোনো অ্যাপ তো আর বের হয়নি। দুনিয়া আধুনিক হয়ে গেছে, কিন্তু বাংলাদেশের সমর্থকদের ম্যাচ জেতানোর রীতি তো রয়ে গেছে সেকেলেই। ‘এই এখান থেকে কিন্তু উঠবে না, উঠলেই আর শ্রীলঙ্কা জিতবে না’—কিছু মুহূর্তের জন্য আবুধাবির প্রেসবক্সের পাশের গ্যালারিতে গিয়েও শোনা গেল তা।

নিজের দলের হলেও তা না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে প্রতিদিন কি কাজ বাদ দিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ দেখা যায়? বাংলাদেশের সমর্থকদের করতে হয় তাও। কারণ, তাঁদের ভাগ্য তো আর নিজেদের হাতে না। এবারের এশিয়া কাপেই দেখুন, দুটো ম্যাচ জিতেও স্বস্তি ছিল না একদমই।

হংকংয়ের বিপক্ষে সহজে জিততে পারেনি লিটন দাসের দল

কারণ কী? হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচটা জিততে লেগে গিয়েছিল ১৭.৪ ওভার। শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় ছিল ৮ রানের। নেট রান রেট এতই কম যে আফগানিস্তানের হার ছাড়া আর জয়ের পথ নেই। টেনশন টেনশন খেলায় শেষ পর্যন্ত জয়ী হওয়া গেছে ঠিকই, কিন্তু এবারই কি শেষ?

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কথা শুনে আশ্বস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। হংকংয়ের মতো দলের বিপক্ষেও তাঁদের টেনশন ছিল জয় নিয়ে। ম্যাচটা বড় ব্যবধানে জেতা গেল না, এই আফসোসের চেয়েও তাঁদের স্বস্তি ম্যাচটা জেতা গিয়েছিল বলে। অথচ সেই ম্যাচটা একটু বড় ব্যবধানে জেতা গেলে কত অঙ্কই না এড়ানো যেত, অনেকের রক্তচাপও থাকত স্বাভাবিক।

তাও না হয় মানা গেল। কিন্তু ম্যাচটার পরও কি শিক্ষা হয়েছে? হয়নি। হলে কী আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে অত দাপট দেখানো শুরুর পরও জয়টা মাত্র ৮ রানের হয়— তাও শেষ ওভারে বোলার নূর আহমেদের কাছে দুটি ছক্কা হজম করে ফেলেন তাসকিন। এবার অবশ্য ম্যাচের পর কথার সুর বদলায়, বাংলাদেশ নাকি সমীকরণটা মাথায় রেখেই খেলছিল।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততে ঘাম ঝরাতে হয়েছে বাংলাদেশকে

কিন্তু শুধু তো মাথায় রাখলে হবে না, মাঠে প্রয়োগও করতে হবে। তা করা গেলে আর অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না সুপার ফোরে যেতে।

এখানেই যে শেষ, তাও যদিও নয়। এবারের অঙ্কটা বাংলাদেশের জন্য মিলে গেছে, তা সত্যি। আফগানিস্তানকে হারিয়ে তা মিলিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কাই। কিন্তু টুর্নামেন্টের নতুন একটা ধাপ শুরু হচ্ছে সুপার ফোর নামে—ওখানেও কিন্তু অঙ্কের জটিল সমীকরণে পড়তে হতে পারে।

এশিয়া কাপের সুপার ফোরে চার দলই মুখোমুখি হবে একে অপরের। আগামীকাল শ্রীলঙ্কা, ২৪ সেপ্টেম্বর ভারত আর পরদিন বাংলাদেশ মাঠে নামবে পাকিস্তানের বিপক্ষে। গ্রুপ পর্বের মতোই সেরা দুই দল যাবে ফাইনালে। সেখানেও রান রেট যে আলোচিত হয়ে উঠবে, তা বোধ হয় না বললেও চলছে।

অঙ্কে ভিতু বাঙালিদের কি তখনো এমন হিসাব মেলাতে হবে? ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’, বহু পুরোনো প্রবাদটা না বলে তখন আর কী উপায় থাকবে!