লিটন দাসের ফিফটি উদ্‌যাপন
লিটন দাসের ফিফটি উদ্‌যাপন

তাহলে তো অধিনায়ক লিটনই ভালো

১৭।

কোনো গণিতবিদের কাছে জিজ্ঞেস করলে এটাকে সাধারণ একটি সংখ্যাই বলবেন। একজন পরিসংখ্যানবিদও হয়তো তেমন কোনো বিশেষত্ব এ সংখ্যায় খুঁজে পাবেন না। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী কিংবা লিটন দাসের কাছে এটা শুধুই একটি সংখ্যা নয়। বাংলাদেশ টি–টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর আজ পর্যন্ত এ সংস্করণে লিটনের খেলা ম্যাচের সংখ্যা এটা। এর বিশেষত্ব কী—ওপরের ভূমিকা দেখে এমন প্রশ্ন কেউ করতেই পারেন। সময়যন্ত্রের প্রয়োজন নেই, ক্রিকেটের পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করে, এমন কোনো ওয়েবসাইটে গিয়ে লিটনের খেলোয়াড়ি প্রোফাইল ঘাঁটলেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।

লিটনের টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটা খুব একটা ছোট নয়, ১০৮ ম্যাচের। আর আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮ উইকেটের জয়ের ম্যাচটি লিটনের অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারের ১৭তম। স্বাভাবিকভাবেই শুধু খেলোয়াড় লিটন আর অধিনায়ক লিটনের ক্যারিয়ারের তুলনা করা কঠিন বা সেই সময়ই এখনো আসেনি। কিন্তু নেতৃত্ব পাওয়ার আগে লিটনের ১৭টি টি–টোয়েন্টি ইনিংস দেখলে একটা কথা হয়তো অনেকেই বলবেন—অধিনায়ক লিটনই তো ভালো! সেই বিবেচনায় ১৭ সংখ্যাটি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী কিংবা লিটনের কাছে এটা শুধুই একটি সংখ্যা নয়!

আজ লিটন খেলেছেন চোখ জুড়ানো সব শট

লিটনের পুরো টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ার বিবেচনায় অধিনায়ক লিটনের পরিবর্তনটা আহামরি কিছু নয়। ১০৮ ম্যাচে ২৩ গড়ে এ সংস্করণে লিটনের রান ২৩৪৬, সর্বোচ্চ ৮৩। ১২৫ স্ট্রাইক রেটে রান তোলা লিটন ১৩টি ফিফটি করেছেন, অপরাজিত ছিলেন চারবার। আর অধিনায়ক লিটন ১৭ ম্যাচে ২১.৪৩ গড়ে করেছেন ৩৪৩ রান, সর্বোচ্চ ৭৬। স্ট্রাইক রেট ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটের চেয়ে বেশি, ১২৭। আর অধিনায়ক হওয়ার পর একবার অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন লিটন।

কিন্তু বিষয়টা হলো অধিনায়ক হওয়ার আগে ও পরের ১৭ ইনিংসে লিটনের পরিবর্তন। অধিনায়ক হওয়ার আগে খেলা ১৭ ইনিংসে লিটনের ২০–এর ওপরে খেলা ইনিংসের সংখ্যা মাত্র চারটি, সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৪ রান, ফিফটিও এই একটিই। সব মিলিয়ে লিটনের টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেও শেষ দেখতে শুরু করেছিলেন অনেকে। এমন সময়েই কিনা লিটনকে টি–টোয়েন্টির নেতৃত্ব দেয় বিসিবি। অনেকেই তখন উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ডুবন্ত লিটনের কাঁধে অধিনায়কত্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে ছেলেটাকে চরমভাবে ডোবার ব্যবস্থাই বুঝি করে দেওয়া হলো!

ম্যাচ শেষে সাইফ হাসানকে নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন অধিনায়ক লিটন দাস

কিন্তু আদতে দেখা গেল এর উল্টোটাই—অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়েই যেন নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করেছেন লিটন। অধিনায়ক হওয়ার পর দুটি ফিফটি পেয়েছেন, যার সর্বশেষটি আজ সিলেটে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। এ ইনিংসটির পরতে পরতে দেখা গেছে সেই পুরোনো লিটনকে, যাঁর ব্যাটিং দেখলে টিভি থেকে চোখ ফেরানো যায় না; সেই লিটনকে। ২৯ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংসটিতে খেলেছেন চোখধাঁধানো সব লিটনীয় শট! যার মধ্যে ছয়টি হয়েছে চার, দুটি ছক্কা। স্ট্রাইক রেট ১৮৬.২০।

লিটনকে আজ দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন সাইফ হাসান। তিনি ছিলেন লিটনের চেয়েও বিধ্বংসী। ১৯ বলে ১ চার ও ৩ ছয়ে ১৮৯.৪৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন অপরাজিত ৩৬ রান, এর আগে বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট। এ দুজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই ১৩৭ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ পেরিয়ে গেছে ৮ উইকেট ও ৩৯ বল হাতে রেখে। সব মিলিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে তাসকিন আহমেদ ম্যাচসেরা হলেও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টি ম্যাচে লিটন–সাইফের অবদানও যথেষ্টই।