
জুলে রিমে ট্রফির গল্প জানেন তো? ওই যে ১৯৩০ সালে জয়ের দেবী নাইকির আদলে গড়া ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফি ‘ভিক্টোরি’। জয়ের সে দেবীকে পুরোপুরি নিজের করে নিতে হলে খুব ‘ছোট্ট’ একটা কাজ করতে হতো। ‘মাত্র’ তিনবার জিততে হতো এই ট্রফি। ১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে জুলে রিমে ট্রফিকে নিজেদের সম্পত্তি করে নিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু এমন অমূল্য সম্পত্তিকেও রক্ষা করতে পারেনি তারা। মাত্র ১৩ বছরের মাথায় জয়ের দেবীকে হারিয়ে বসে দক্ষিণ আমেরিকান দেশটি।
১৯৭০ বিশ্বকাপে ট্রফিটি জিতে নেওয়ার পর এর সব দায়িত্ব নেয় ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন। ট্রফিটি রাখার জন্য রিও ডি জেনিরোতে নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে বুলেটপ্রুফ একটি ট্রফি কেবিনেটও বানিয়ে ফেলেছিল তারা। কিন্তু এমন বুলেটের কথা চিন্তা করে বানানো কেবিনেটও চোরের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি জুলে রিমে ট্রফিকে। ১৯৮৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর কেবিনেটের পেছনের কাঠের অংশ ভেঙে ট্রফিটি চুরি করে নিয়ে যায় তিনজনের এক দল।
দলটির হোতা ছিলেন এক ব্যাংকার—সার্জিও পেরালতা। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিল সাবেক এক পুলিশ কর্মা ও একজন সজ্জাকারী (ডেকোরেটর)। ফ্রান্সেসকো রিভেইরা এবং হোসে লুই ভিয়েরাই নামের এই দুজনই ট্রফিটা চুরি করে পেরালতার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। সঙ্গে ‘ইকুইতাভিতা’ ও ‘হুরিতো’ নামের আরও দুটি ট্রফিও চুরি করেন তাঁরা। তিনজনকে পুলিশ ধরতে পারলেও ট্রফিটি আর উদ্ধার করতে পারেনি কেউ। পরে জানা যায়, ট্রফিটি গলিয়ে এর থেকে সোনা নিয়ে সেগুলো সোনার বারে পরিণত করা হয়েছিল। হুয়ান কার্লোস হার্নান্দেজ নামের সোনার এক ব্যবসায়ীকে দিয়েই এই অকর্ম করিয়েছিল তাঁরা।
মজার ব্যাপার হলো, ১৯৬৬ সালেও ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগেও কিন্তু এই ট্রফিটা চুরি হয়েছিল। সেবার এক সপ্তাহের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ট্রফিটি। ডেভিড করবেট নামক এক ব্যক্তি তাঁর কুকুর পিকলসকে নিয়ে হাটতে বের হয়ে এই অমূল্য ট্রফিকে খুঁজে পেয়েছিলেন পত্রিকায় মোড়ানো অবস্থায়। কিন্তু ব্রাজিলের যে পিকলসের মতো কুকুরই ছিল না!
চুরির ঘটনার পর ১৯৮৪ সালে ফিফার পক্ষ থেকে একটি রেপ্লিকা ট্রফি বানানো হয়েছিল ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের জন্য। প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফিটা কেবল স্মৃতিতেই টিকে আছে। কিঞ্চিৎ ভুল বলা হলো, ওই ট্রফির ভিত্তি রয়ে গিয়েছিল ফিফার জুরিখ কার্যালয়ের বেসমেন্টে। ‘ভিক্টোরি’র শেষ চিহ্ন হিসেবে সেই ভিত্তিটাই টিকে রয়েছে এখন।