Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা যখন এক ঘাটে জল খায়

রিও ডি জেনিরোর ব্রাজিল-ভক্তদের হতাশা। ছবি: রয়টার্স
ফুটবল বিশ্বকাপের মজাটাই তো এখানে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলা নিয়ে হবে জোর তর্ক, হবে টিপ্পনী-তির্যক মন্তব্য। কে সেরা—এই বিতর্ক চলতেই থাকবে। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম সপ্তাহে যা হলো, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলের সমর্থকেরা বেশ ধাক্কা খেয়েছেন। দুই দলই নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিততে পারেনি। এই একটা জায়গায় আপাতত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকদের সমতা!


প্রথম ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো খেলেছেন অবিশ্বাস্য! মেসি আর আর্জেন্টিনা-ভক্তদের বিশ্বকাপযাত্রা খুব একটা ভালোভাবে যে শুরু হয়নি, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার ব্রাজিলের সমর্থকদের টিপ্পনী তো আছেই, ‘কী রে, রোনালদো তো ৩ গোল দিল, তোদের মেসি ৪-৫টা না দিলে মানসম্মান থাকবে তো?’

আর্জেন্টিনার সমর্থকদের অনেকে ভেবেছিলেন, পুঁচকে আইসল্যান্ডকে পাত্তাই দেবে না তাঁদের দল! সার্জিও আগুয়েরোর গোলের পর হয়তো উড়তেও শুরু করেছিল তারা। অথচ ৯০ মিনিট শেষ হলো ১-১ সমতায়। মেসির পেনাল্টি হাতছাড়া ছিল ম্যাচের সবচেয়ে বড় ঘটনা। আর্জেন্টিনার জন্য যেটা ছিল ভীষণ হতাশার, সেটাই আবার ব্রাজিল আর রোনালদো-ভক্তদের জন্য বিরাট বিনোদন! এই পেনাল্টি মিসের পর আর্জেন্টিনাবিরোধীরা বলতে শুরু করল, ‘রেফারি কী সুন্দর একটা পেনাল্টি উপহার দিল, আর সেটাও নিতে পারল না! ভিনগ্রহের খেলোয়াড় পেনাল্টির মূল্যটাই বুঝল না!’ ১৭ জুন রাত ৯টা পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সমর্থকদের অবস্থা বিশেষ সুবিধার ছিল না, সেটি বলাই বাহুল্য।

জার্মানিকে মেক্সিকো হারিয়ে দেওয়ায় মেক্সিকান সমর্থকদের পর কারা খুশি হয়েছেন সবচেয়ে বেশি? ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকেরাই। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আরকি! গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল আর ফাইনালের কথা এত তাড়াতাড়ি ভোলার কথা নয় লাতিন আমেরিকার দুই ফুটবল পরাশক্তি আর তাদের ভক্তদের। একই টুর্নামেন্টে দুই দলই দাগা খাওয়ায় জার্মানি ইস্যুতে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ভাই ভাই!

মেসির দুর্বল শট ঠেকিয়ে দেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক হলডরসন। ছবি: রয়টার্স

তবে প্রথম কদিন ব্রাজিল–সমর্থকদের সুখ দেখে কে! সেই সুখের স্থায়িত্ব ১৭ জুন ব্রাজিলের খেলা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত। ফ্রান্স ছাড়া বিশ্বকাপে ফেবারিটদের কারও সূচনাই ভালো হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, মেসির ভুলে পয়েন্ট হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের খোঁচাতে আর কী লাগে! এর চেয়ে ভালো শুরু হতেই পারে না। সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে জিতলেই আগামী কদিন আর পায় কে! ফুটবল-বিশ্ব, আরও নির্দিষ্ট করে বললে ব্রাজিল-বিরোধীদের ঠান্ডা রাখা যাবে অন্তত ৩-৪ দিন! আর্জেন্টিনা-জার্মানি-স্পেন ভক্তদের ব্যঙ্গ করার যে সুদিন আসছে, সেই আশা নিয়েই কাল রাতে খেলা দেখতে বসেছিলেন সেলেসাও–সমর্থকেরা। কুতিনহোর দুর্দান্ত এক গোলে ব্রাজিলকে নিলেন এগিয়ে। কিন্তু এরপর এটা কী হলো? ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেও ব্রাজিল মাঠ ছাড়ল ১-১ ড্র নিয়ে। সুইসদের একের পর এক ফাউল নেইমার অনেক দিন মনে রাখবেন নিশ্চয়ই। মনে রাখবেন তাঁর ভক্তরাও। তবে ম্যাচটা যে আর্জেন্টিনা–সমর্থকদের চেয়ে বেশি অন্য কেউ উপভোগ করেননি, সে কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আগের দিন ব্রাজিল–সমর্থকেরা যেটা করেছিলেন, এবার সেটি ফিরিয়ে দেওয়ার পালা তাঁদের, ‘আহা রে বেচারা নেইমার, শুধু পড়ে যায়। শুধু খেললেই হবে, খাওয়াদাওয়াও করতে হবে, নাকি! আর সারা দিন চুলের স্টাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকলে এমন তো হবেই!’

নিজেদের দল বিশ্বকাপের ফেবারিট, সেটা ভালো করেই জানেন নেইমার-ভক্তরা। কিন্তু গোড়াতেই গলদ যে তাঁর দলও বাধিয়ে বসে আছে। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচে ব্যর্থতায় এখন তাই সমতায় আছে ফুটবল-বিশ্ব। ‘তোমরাও পারো নাই, আমরাও পারি না’—বিষয়টা এখন এমনই। তবে প্রথম ম্যাচে যা-ই ঘটুক, বড় দলগুলোকে এত তাড়াতাড়ি বিড়ম্বনায় পড়তে হবে, এমনটা হয়তো কেউই আশা করেনি। এ দলগুলো না থাকলে যে রং হারাবে বিশ্বকাপ।

প্রথম ম্যাচের পর নিজেদের সান্তনাই দেবেন দুদলের সমর্থকেরা !